চাকরির লোভ দেখিয়ে তিন চাকরি প্রার্থী থেকে অবৈধভাবে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কর্মচারী মানিক চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে। মানিক চবি রেজিস্ট্রার দপ্তরের নিম্নমান সহকারী পদের কর্মচারী হলেও নিজেকে সেকশন অফিসার পরিচয় দিয়ে এসব টাকা নিয়েছেন বলে জানা যায়। এ সংক্রান্ত দুটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। ফোনালাপে টাকা ফেরত চাওয়ায় উল্টো এসব চাকরি প্রার্থীকে হুমকি দিয়েছেন মানিক। টাকা লেনদেনের ব্যাংক রিসিভ কপি এবং ফাঁস হওয়া দুটি ফোনালাপ আজাদীর হাতে এসেছে।
ঘটনাটি জানাজানি ও গণমাধ্যমে উঠে আসলে দৃষ্টিগোচর হয় চবি প্রশাসনের। গতকাল শনিবার বিকেলে চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান বাদী হয়ে মানিক চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে প্রশাসন ঘটনা তদন্তে গঠন করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট প্রফেসর নির্মল কুমার সাহাকে আহ্বায়ক ও গোপনীয় শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ ফজলুল করিমকে সদস্য সচিব করে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, সহকারী প্রক্টর মো. আহসানুল কবীর এবং কেন্দ্রীয় স্টোর শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার রাশেদুল হায়দার জাবেদ। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল শনিবার চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে শোনা যায়, মানিক চন্দ্র দাস এক প্রার্থীকে বলেন, ‘তুমি আমারে চিনো? একদম পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে খেয়ে ফেলবো।’ অপরদিকে প্রার্থী বলেন, যত টাকা নিছেন, সব এই মাসের মধ্যেই দিবেন। মানিক প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘কিসের টাকারে তোর, জুলাইয়ের আগে এক টাকাও পাবি না। শুন, তুই পরীক্ষা দিছোস, তোর প্রার্থী পরীক্ষা দিক, তখন যদি না হয় তুই পুরো টাকা পেয়ে যাবি একসঙ্গে।’ প্রার্থী বলেন, না, এই মাসের মধ্যেই দিবেন।
তিন চাকরি প্রার্থী সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩১ মে ও ১ জুন দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চবি প্রশাসন। সেখানে নিম্নমান সহকারী ও অফিস সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মাদারীপুরের রাকিব ফরাজী, সোহেল খান ও মাকসুদুল সালেহীনের কাছ থেকে সর্বমোট ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন মানিক চন্দ্র দাস। এরপর টাকা চাইলে উল্টা হুমকি দেয় মানিক। অপরদিকে চাকরি না পেয়ে প্রতারণার অভিযোগ ও টাকা ফেরত চেয়ে গত ২৬ জুলাই মানিক চন্দ্র দাসকে আইনি নোটিশ পাঠায় চাকরি প্রার্থী মাকসুদুল সালেহীন।
ফোনালাপে মানিক একজন চাকরি প্রার্থীকে ‘তুই পরীক্ষা দিছোস’ বলতে শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো পরীক্ষাই হয়নি বলে জানান চাকরি প্রার্থী মাকসুদুল সালেহীন। সালেহীন বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানিক আমাদের তিনজনের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। শুধু আমার কাছ থেকেই ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি। প্রথমে বলেছিলেন ৩০ হাজার টাকা হলেই চলবে। এরপর কখনো ৭০ হাজার, কখনো ১ লাখ- এভাবে কয়েক দফায় টাকা নিয়েছেন মানিক। প্রথমদিকে নিজ অ্যাকাউন্টে টাকা নিলেও পরবর্তীতে তার অ্যাকাউন্টে লিমিট শেষ হয়ে যাওয়ায় আরেক বন্ধুর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলেন।
সালেহীন বলেন, ধার-কর্জ করে টাকা দিয়েছিলাম। তিনি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। সর্বশেষ বলেছিলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা এবং নিয়োগ সবকিছু হয়ে যাবে। কিন্তু এখনো কোনো খবর নেই। আমি টাকা ফেরত চাইলে এখন হুমকি দিচ্ছেন। তাই আমি টাকা চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে মানিক চন্দ্র দাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, প্রশাসনকে বিপাকে ফেলতে এসব কর্মকাণ্ড করছে। এটা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।