এ মৃত্যুর দায় কার

গেটম্যান নাকি মাইক্রোবাস চালকের?

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩০ জুলাই, ২০২২ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ ছাত্র-শিক্ষক নিহতের ঘটনায় রেল ক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা গেটম্যান মো. সাদ্দাম হোসেন ঐ সময় উপস্থিত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী জুনাইদ কাউসার ইমন। ইমন হাটহাজারী থানার আমান বাজার খন্দকিয়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে। গুরুতর আহত
অবস্থায় তিনি এখন চমেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় চমেক হাসপাতালে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দুপুর দেড়টার দিকে তাদের মাইক্রোবাসটি যখন রেল ক্রসিং পার হচ্ছিল তখন ক্রসিংয়ের সিগন্যাল বা ব্যারিকেড ছিল না। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। আমাদের ড্রাইভার ট্রেন আসছে সেটা দেখেনি। রেললাইনে উঠার সাথে সাথেই আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রচণ্ড বেগে ট্রেনটি আমাদের মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে সামনে অনেক দূর নিয়ে যায়। আমি ছিলাম একদম পেছনের সিটে। সেখান থেকে গাড়ির কাচ ভেঙে বের হয়ে যাই। আমার পাশে থাকা আমার আর দুই বন্ধু বের হতে পারলেও মাঝখানে যারা ছিলেন তখন তাদের কোনো সাড়া-শব্দ নেই। এসময় জাতীয় জরুরি সেবায় কল দিলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ আসেন।
এদিকে দুর্ঘটনাস্থলে রেল গেটের দুই পার্শ্বের দুটি গেটই খোলা ছিল বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানি ভোলা মিস্ত্রি (৪৫)। তিনি আজাদীকে জানান, গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন গেট বন্ধ করেই জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিল। তবে পূর্বপার্শ্বের গেটটি যে পাশে নেমে আটকে থাকে সেখানটার ক্লিপ পিলারটি নেই। তাই গেটবলটি (গেইটের বাঁশটি) একটু উপরের দিকে আলগা হয়ে থাকে। এদিকে অন্যান্য দিনের মতোই বেশ কয়েকটি সিএনজি চালক এসে দুটি গেট খুলে নিজেরা পার হয়ে গেট উপরে রেখে চলে যায়। এমন সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী গেটম্যানের পাশাপাশি মাইক্রোর চালক গোলাম মোস্তফাকেও দায়ী করেন। কারণ তিনি যদি ২ থেকে ৩ মিনিট অপেক্ষা করতেন তাহলে আজকে এতো বড় মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটতো না। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে খৈয়াছড়া রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান মো. সাদ্দাম হোসেনকে আটক করেছে রেলওয়ে পুলিশ। তিনি কী ঘটনাস্থলে ছিলেন নাকি ছিলেন না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধুম্রজাল।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপর সকলের মধ্যে একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে- এই দুর্ঘটনার দায় কার? কার দায়িত্বের অবহেলায় ১১ তরুণ মেধাবী ছাত্র-শিক্ষক প্রাণ হারালেন? রেল কর্তৃপক্ষ, মাইক্রোবাসে থাকা বেঁচে যাওয়া এক যুবক এবং প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি গেটম্যান-মাইক্রোবাস চালকের একেক জনের দায় দেখছেন। স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, মাইক্রোবাস চালকের অবহেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। নামানো গেট তুলে তিনি প্রবেশ করেছেন। আবার অন্যরা বলছেন, ঘটনার সময় গেটম্যান ছিলেন না। থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না। স্থানীয় প্রত্যাক্ষদর্শী মুরাদ হোসেন ও খোকন জানান, গেটম্যান ছিলেন না, থাকলে গেট নামানো থাকতো।
এ বিষয়ে রেলক্রসিংটির সামনে কথা হয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রসিং এলাকার এক দোকানি জানিয়েছেন দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান সাদ্দাম দোকানে বসে ভাত খাচ্ছিলেন। এ ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যা এটা যাচাই করার জন্য ইতোমধ্যে তাকে আটক করা হয়েছে। দোষি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গেটম্যান সাদ্দাম জানিয়েছেন ট্রেনের আপ লাইন আসার পর তিনি গেট নামান। এর কিছুক্ষণ পরেই চলে আসে ডাউন লাইন। মাইক্রোবাসের চালক নিজে গিয়ে গেট তুলে দিয়ে লাইনে প্রবেশ করেন। তিনি ভেবেছিলেন আপ লাইন এসেছে, ডাউন লাইন হয়তো আর আসবে না। এটা ভেবে লাইনে ঢোকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম থেকে একটি ট্রেন ঢাকা যাওয়ার পর তিনি গেটবার ফেলে দিয়েছিলেন ক্রসিংয়ে যেন উল্টো দিক থেকে গাড়ি উঠতে না পারে। কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার মাইক্রোবাসটি জোর করেই গেটবার তুলে রেললাইনে উঠে যাওয়ার পরপরই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি এসে মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়।
এদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী আজাদীকে জানান, আমরা বিষয়টি তদন্তের জন্য দুটি কমিটি করেছি। গেটম্যান ঐ সময় এলাকায় ছিলেন কিনা, কার দোষে এই ঘটনা ঘটেছে, সেটা তদন্তে জানা যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘শেষ সিটে ছিলাম তাই বেঁচে যাই’
পরবর্তী নিবন্ধফেরার পথে মহানগর প্রভাতী কেড়ে নিলো আরেক প্রাণ