নিজেদের কন্যাশিশুকে দাহ করে ফেলেছে বলে দাবি করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেই নবজাতককে নিজেরা নিতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন বাপ্পী বড়ুয়ার মা। তিনি বলেন, আমার একটিমাত্র নাতনি। আরো একটি নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার পুত্র এবং পুত্রবধূকে আপনারা বাচ্চাটি দেয়ার ব্যবস্থা করে দিন। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করাতেও রাজি আছেন বলে জানান তিনি।
বাপ্পী বড়ুয়ার মা গতরাতে দৈনিক আজাদীতে ফোন করে বলেন, ব্যাপারটি নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতায় যেতে চান না তারা। তিনি বলেন, ইনোভা হাসপাতাল থেকে আমাদেরকে মৃত বাচ্চাসহ রিলিজ দেয়া হয়েছে। আমরা গ্রামের বাড়িতে এসে বাচ্চাটিকে দাহ করে ফেলেছি। ছোট্ট শিশুকে দাহ করার নিয়ম আপনাদের আছে কিনা- এই প্রশ্নে বাপ্পী বড়ুয়ার মা (শিমু বড়ুয়া) জানান, আসলে কেউ কেউ দাহ করে। স্থানীয় মেম্বার তো কোনো বাচ্চার সৎকার হয়নি বলে জানিয়েছেন বললে তিনি বলেন, আমরা খুব গোপনে সব কাজ সম্পন্ন করেছি। কাউকে কিছু জানাইনি। তিনি ইনোভা হাসপাতালের ছাড়পত্রটিও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের হোয়াটস অ্যাপে পাঠান। তিনি সেটিকে ডেথ সার্টিফিকেট বলে দাবি করলেও সেখানে উল্লেখ আছে নিজেদের ইচ্ছায় গ্রহণ করা ডিসচার্জ লেটার হিসাবে। ওই সার্টিফিকেটে নবজাতক কন্যাশিশুটি যে এনসিপালেকোল রোগে আক্রান্ত সেটি উল্লেখ রয়েছে।
বাপ্পী বড়ুয়া তার কন্যাশিশু চমেক হাসপাতালে মারা গেছে বলে আগের দিন দাবি করেছিলেন মর্মে স্মরণ করিয়ে দিলে তার মা বলেন, আসলে সন্তান হারিয়ে তাদের মাথা ঠিক নেই। বাপ্পী বড়ুয়া এবং তার স্ত্রী অসুস্থ বলেও তিনি দাবি করেন। তারা সুস্থ হয়ে চট্টগ্রামে ফিরে আসবেন বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, গত রোববার রাত ১০টা নাগাদ পাঁচলাইশ জাতিসংঘ পার্কের পাশে নবজাতক এক কন্যা শিশুকে কাপড়ের পুঁটলিতে মুড়িয়ে ছুড়ে ফেলা হয়। এই কন্যা শিশুটির কপালে একটি বাড়তি মাংসপিণ্ড রয়েছে। এর আগের দিন শনিবার রাতে জামাল খানস্থ ইনোভা হাসপাতালে চকবাজারের জনৈক বাপ্পী বড়ুয়ার স্ত্রী এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, ওই নবজাতকের কপালে রয়েছে একটি বাড়তি মাংসপিণ্ড। এ কারণে এই দুই শিশুই এক কিনা প্রশ্ন ওঠে।
বাপ্পীর মা দফায় দফায় দৈনিক আজাদীর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, আমার পুত্র এবং পুত্রবধূকে বাচ্চাটি দিয়ে দিন। আপনিই ব্যবস্থা করে দিন। আমরা বাচ্চাটিকে নিয়ে আসতে চাই। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করিয়ে আমাদের দেয়ার ব্যবস্থা করুন।
এদিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন জাতিসংঘ পার্কের পার্শ্বে কন্যাশিশুকে ছুড়ে মারার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)। সংস্থার ডাইরেক্টর (অর্গানাইজিং) ও চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান, প্যানেল ল’ ইয়ারবৃন্দ যথাক্রমে এডভোকেট এ এইচ এম জসীম উদ্দিন, এডভোকেট জান্নাতুন নাঈম রুমানা, এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন, এডভোকেট প্রদীপ আইচ দীপু, এডভোকেট মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন খালেদ, এডভোকেট মো. হাসান আলী, এডভোকেট মো. বদরুল হাসান, এডভোকেট মো. জিয়া উদ্দিন আরমান প্রদত্ত এক যুুক্ত বিবৃতিতে শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতার এহেন ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পুলিশ প্রশাসন, সরকারের লিগ্যাল এইড ও জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক ও প্রবেশন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিবৃতিদাতারা বলেন, দণ্ডবিধির ৩১৭ ধারায় মা-বাবা বা শিশুর দায়িত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি যদি ১২ বছর বা তৎ নিচে কোনো শিশুকে পরিত্যাগ বা বর্জন করে তার সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ (সাত) বছর। যা আমলযোগ্য অপরাধ। ২০১৩ সালের শিশু আইনের ৯ম অধ্যায়ে ও শিশু সংক্রান্ত বিশেষ অপরাধ সমূহের দণ্ড সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। মানবাধিকার আইনবিদগণ উক্ত শিশুর সুচিকিৎসা, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব নির্ণয়সহ যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও সরকারের লিগ্যাল এইড কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এ ব্যাপারে তথ্যানুসন্ধ্যান পূর্বক আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।