খ্যাতিমান নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলের হাতে গড়া চলচ্চিত্র শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট (বিএফআই) আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের নানা অধ্যায় নিয়ে ৬টি প্রামাণ্যচিত্রের প্রিমিয়ার শো গতকাল চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় দিন প্রথম পর্বে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী পালন করেন প্রতিষ্ঠানের সদস্যগণ। তানভীর মোকাম্মেলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্মিত এসব প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। তাই দর্শকের কমতি ছিল না। প্রথম দিন শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রদর্শিত হয় ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ মানিক ও ড. নাজিয়া মাহমুদের গবেষণা ও পরিকল্পনায় নির্মিত ‘জনযুদ্ধ ৭১’। প্রামাণ্যচিত্রটিতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অভূতপূর্ব নানা রণকৌশল, প্রান্তিক মানুষদের অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। উপস্থাপিত হয়েছে গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীদের সাক্ষাৎকার ও যুদ্ধের চিত্র, যুদ্ধে নারীর অবদান, পাকিস্তানিদের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ, বাংলাদেশের জনগণের অমানবিক দুর্ভোগ ও প্রতিরোধ, প্রতিশোধস্পৃহা ও বিজয়োল্লাসের কাহিনী।
বিকেল ৫টায় সৈয়দ ওয়াসিউদ্দিন আহমেদ, কাজী মুসফিকুস সালেহীন ও নুর-উন-নবীর গবেষণা ও পরিকল্পনায় নির্মিত ‘বীর চট্টলার প্রতিরোধ যুদ্ধ’ প্রদর্শিত হয়। প্রামাণ্যচিত্রটিতে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম শহরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের ঘটনাবলীকে তুলে ধরা হয়েছে। ব্যাপকতা, সাহসিকতা ও ভয়াবহতার কারণে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ চট্টগ্রামের এ যুদ্ধকে ‘স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের’ সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রানা মাসুদ ও মতিউর সুমনের গবেষণা ও পরিকল্পনায় নির্মিত ‘বিলোনিয়ার যুদ্ধ’ প্রদর্শিত হয়। নানা কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় ফেনীর বিলোনিয়ার যুদ্ধটি কেবল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নয়, বিশ্বের সামরিক ইতিহাসেও এক ব্যতিক্রমী ও আলোচিত যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুই শতাধিক সৈন্য হতাহত হয়। পাকিস্তানি সেনাদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটিয়ে ১০ নভেম্বর বিলোনিয়া শত্রুমুক্ত হয়।
দ্বিতীয় দিন গতকাল তাজউদ্দীন আহমদের ৯৭তম জন্মদিন উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হয়। তাজউদ্দীনকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম, তাজউদ্দীনের জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আলোচকগণ বলেন, তাজউদ্দীন সম্পর্কে যতবারই জানার চেষ্টা করি, ততবারই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। তিনি সারা জীবন তাঁর কাজে, কথায়, দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলে যাননি। তিনি কখনো সমঝোতা করেননি। তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সাথে।
দ্বিতীয় ও শেষ দিন তিনটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় সন্দীপ মিস্ত্রী ও তাপস বিশ্বাসের গবেষণা ও পরিকল্পনায় ‘মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকার’ প্রদর্শিত হয়। প্রামাণ্যচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রথম সরকারটির গঠন ও কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে।
বিকেল ৫টায় সন্দ্বীপ কুমার মিস্ত্রী ও মো. কাওসার আহমেদ আবীরের গবেষণা ও পরিকল্পনায় নির্মিত ‘একাত্তরের নৌ-কমান্ডো’ প্রদর্শিত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সগীর মোস্তফা ও সাজ্জাদ খানের গবেষণা ও পরিকল্পনায় নির্মিত ‘আকাশে মুক্তিযুদ্ধ : কিলোফ্লাইট’ প্রদর্শিত হয়। প্রতিটা ছবির বাজেট ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রামাণ্যচিত্রগুলো নির্মাণে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন তানভীর মোকাম্মেল।