রাঙ্গুনিয়ায় বন্য হাতির তান্ডব অব্যাহত রয়েছে। প্রায় প্রতি রাতেই উপজেলার দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার চার ইউনিয়নের বিভিন্ন লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতির পাল। এক মাসের ব্যবধানে তিন কৃষকে মৃত্যু, সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি এবং কৃষকের ফসলাদি নষ্ট করছে এসব হাতি। এতে আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ মঙ্গলবার হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের মীরেরখীল এলাকার আব্দুল নবীর পুত্র আবদুর রশিদ (৬০)। এই ঘটনার পর গতকাল বুধবার ভোর রাতেও মীরেরখীল গ্রামের লোকালয়ে বন্য হাতির পাল তান্ডব চালিয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ দিলদার। তিনি বলেন, কয়েকটি হাতি গ্রামের ভেতর এসে বেশ কয়েকজন কৃষকের ধানের গোলা ভেঙে ধান খেয়ে সাবাড় করেছে। এভাবে প্রায় প্রতিরাতেই দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার চার ইউনিয়নে হানা দিচ্ছে বন্য হাতির পাল। লোকালয়ে হাতির প্রবেশ ঠেকাতে বনবিভাগের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
জানা যায়, গত ১ জুলাই দিবাগত রাতে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ত্রিপুরা সুন্দরী এলাকায় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় আবদুল আজিজ (৬৫) নামে এক কৃষকের। তিনি পদুয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের উত্তর পাড়া গ্রামের মৃত গুরু মিয়ার ছেলে। এছাড়া গত ২৬ জুন সন্ধ্যায় নারিশ্চা ১ নং ওয়ার্ডের মোবারক আলী টিলায়ও বন্যহাতির আক্রমণে মোহাম্মদ শাহ্ আলম (৫৫ ) নামে আরও এক কৃষকের মৃত্যু হয়। তিনি শিলক ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মাইজপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এর মাসখানেক আগে হাতির আক্রমণে গিয়াস উদ্দিন (২৭) নামে এক কৃষক গুরুতর আহত হন। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এভাবে গত কয়েক বছরে হাতির আক্রমণে অন্তত ২০ জন মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছেন শতাধিক।
এছাড়া ঘরবাড়ি-ফসলাদিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে লোকালয়ে এসে বেশ কয়েকটি হাতিও মারা যায় এই কয়েক বছরে। হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের বনবিভাগ ক্ষতিপূরণ দিলেও লোকালয়ে হাতি আসা বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন, হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে নিয়মিত। এছাড়া হাতি মানুষের দ্বন্ধ নিরসনে নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় সভা ও সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পাহাড় কেটে উজাড় করার ফলেই বনে হাতির খাবারের সংস্থান হচ্ছে না। ফলে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্য হাতির পাল। তাই বনভূমি উজাড় ঠেকানোর পাশাপাশি বনে হাতির পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান করতে হবে। এজন্য বৃহৎ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।












