ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা প্রয়োজন সঠিক পদক্ষেপ

| বৃহস্পতিবার , ২১ জুলাই, ২০২২ at ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অস্বীকার করা যাবে না যে, আমাদের শহর-নগরগুলোতে মশা এখন সারা বছরের সমস্যা। সামপ্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব মহামারি রূপ নিয়েছে। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এরই মধ্যেই গত ২২ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে জানা গেছে।

গত ১৯ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৭ জুলাই পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৬৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায়। তবে এর ৮৬ ভাগই আক্রান্ত হয়েছেন জুন ও চলতি জুলাই মাসে। মোট ৬৫ জনের ৫৬ জনই এই দেড় মাসে আক্রান্ত। অবশ্য জুন মাসের তুলনায় চলতি জুলাইতে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। গত জুন মাসে ২৩ জনের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। আর জুলাইয়ের ১৭ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ জন। হিসেবে গত এক মাসের তুলনায় চলতি মাসের ১৭ দিনে রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেশি। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ডেঙ্গুর প্রকোপ থেমে নেই উল্লেখ করে আজাদীর প্রতিবেদনে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। এবারও মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ঠিকই, তবে বেশির ভাগই ডেঙ্গু পরীক্ষা করেনি বা করাচ্ছে না। অনেকে আবার কোনো পরীক্ষা না করে বাসায় বসেই চিকিৎসা নিচ্ছে। করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়েও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও, তা ততটা কার্যকর হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো শহরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলছে। একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের অন্য শহরগুলোতেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের জন্য এটা বিব্রতকর যে গত ৫০ বছরেও মশা সমস্যার কোনো সন্তোষজনক সমাধান হয়নি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, যথাযোগ্য জনবল সমস্যা। সিটি করপোরেশনের কোনো প্রশিক্ষিত জনবল নেই। মেডিকেল কীটতত্ত্ববিদ নেই। মশা নিবারণ, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের জন্য এখন পর্যন্ত সরকার কোনো পলিসি, নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি। তাঁরা বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যর্থতার পেছনে দায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতা। সরকার মশক নিবারণ কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান গঠন করতে পারে। যারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সমন্বয় করে মশক দমনে ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এডিস মশাবাহী ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় ২০০০ সালে। ৯৩ জন মারা যায় সেবার। সকলে সচেতন হয়ে উঠলে ধীরে ধীরে কমতে থাকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। উল্লেখ্য, ডেঙ্গু জ্বর একটি এডিস মশা বাহিত ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় ব্যাধি। ব্যাধিটির উপসর্গগুলির মধ্যে আছে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি এবং গিটে ব্যথা এবং একটি বৈশিষ্ট্য ত্বকে র‌্যাশ যা হামজ্বরের সমতুল্য। স্বল্প ক্ষেত্রে অসুখটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভার-এ পর্যবসিত হয়, যার ফলে রক্তপাত, রক্ত অনুচক্রিকার কম মাত্রা এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ অথবা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম-এ পর্যবসিত হয়, যেখানে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কম থাকে।

শহরে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ কমাতে এডিশ মশার বংশ বিস্তার রোধে সব চেয়ে বড় দায়িত্ব হলো সিটি করপোরের্শনের। মশার বংশ বিস্তার রোধে কাজ করতে হবে, যেমন ডোবা নালা পরিষ্কার রাখতে হবে। ময়লা আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। নগরী জুড়ে মশার ওষুধ ছিটাতে হবে। শুধুমাত্র সামাজিক সচেতনতা নয়, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ রক্ষা করতে পারে ডেঙ্গুর মহামারি। নিজের ঘর ও উঠান থেকে শুরু করতে হবে পরিচ্ছন্নতা। কোন স্থানে কিছুতেই জমতে দেওয়া যাবে না পানি। জলাবদ্ধতা নিরসন করা গেলে আঁতুড় ঘরেই নিধন হবে মহামারি ডেঙ্গু। সাধারণত ফুলের টব, পরিত্যক্ত ড্রাম, ফেলে দেওয়া বোতল, ভাঙা বালতি ইত্যাদিতে এক বা দুই দিনের জমে যাওয়া পানিতে জন্ম নেয় মশার লার্ভা। আর এক সপ্তাহের ভেতর হয়ে উঠে ঘাতক। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সমন্বয় করে মশক নিধনে পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে