রাঙ্গুনিয়ায় ছকিনা বেগম (৮০) নামে এক বৃদ্ধার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মাওলানা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বৃদ্ধা উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মাওলানা গ্রামের মৃত আবদুল হাকিমের স্ত্রী। এই ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। সেই মামলায় বৃদ্ধার পুত্রবধূ রবিজা বেগমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃদ্ধার মেয়ে মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার মা নিজে বিষ খাননি। তাকে বিষ পান করানো হয়েছে।
কে পান করিয়েছেন, কেন করিয়েছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার প্রবাসী ভাই মোহাম্মদ ইলিয়াসের স্ত্রী রবিজা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জানান, রবিজা ও তার কন্যা হিরা আক্তারই তার মাকে বিষ পান করিয়ে হত্যা করেছেন। কারণ তারা কেউই তার বৃদ্ধা মাকে পছন্দ করতেন না। তারা সবসময়ই তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন। মনোয়ারা বেগম আরও জানান, গত কোরবানির পর হতেই তার মা বিভিন্নজনের ঘরে গিয়ে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতেন, তাকে বাড়িতে খাবার খেতে দিতেন না। অন্যদিকে তারা তাকে দিয়ে ৪-৫ টা গরুর লালন পালন করাতেন। মনোয়ারা বলেন, আমার মা হজ করেছেন। তিনি নিজ থেকে কখনোই আত্মহত্যা করতে পারেন না।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, বিষপান করেছেন সেটা জানার পরও ওই বৃদ্ধা অনেকক্ষণ জীবিত ছিলেন। কিন্তু কেউই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। জীবিত অবস্থায় বৃদ্ধা তার পুত্রবধূর অনেক নির্যাতন সয়েছেন।
গ্রেপ্তারের আগে মৃত বৃদ্ধার মেয়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রবিজা বেগম বলেন, আমি, আমার মেয়ে এবং শাশুড়ি এক প্রতিবেশী অসুস্থ চাচি শাশুড়িকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য তারা আমাকে আসতে দিচ্ছিলেন না। তাই আমি সেখানেই ছিলাম। কিন্তু আমার মেয়ে ও শাশুড়ি আমাকে রেখে বাড়িতে ফিরে যান। কিছুক্ষণ পর বাড়ির পাশে এলে আমার স্বামী বিদেশ থেকে ফোন দেন। তাই আমি কথা বলতে বলতে বাড়ির পাশে যাই। সে সময় আমার মেয়ে হিরা চিৎকার করে বলতে শুরু করে মা, দাদু নাকি বিষ খেয়েছে। মেয়ে যখন এ কথা বলতেছে তখন আমার স্বামীও ফোনে সে কথা শুনেছেন। আমার স্বামী তখন বলেন তুমি একা বাড়িতে ঢুকিও না। কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাও। তাই আমি সৎ শাশুড়ির ছেলে ও আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ঘরে ঢুকেই দেখি এ অবস্থা। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা।
এদিকে ঘটনাস্থলে যাওয়া দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দুপুর ১ টার দিকে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি এবং এলাকার স্থানীয় মেম্বার ও প্রতিবেশীদের নিয়ে ঘরে ঢুকে দেখি লাশ মৃত অবস্থায় শোয়ানো আছে। মরদেহ থেকে ও কক্ষটিতে বিষের গন্ধ পাওয়া যায়। একটি বিষের বোতলও ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করি। আমরা লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এই ঘটনায় নিহত বৃদ্ধার মেয়ে মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা করেছেন। সেই মামলায় গৃহবধূ রবিজা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।