এক শিক্ষকের ৪ সন্তানই বুয়েট শিক্ষার্থী, একজন চিকিৎসক

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৫ জুলাই, ২০২২ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় এক স্কুল শিক্ষকের চার পুত্র বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী। বড় দুজন বুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করে যোগ দিয়েছেন কর্মস্থলে এবং ছোট দুজনের একজন বুয়েটে অধ্যয়নরত এবং অন্যজন সদ্য ভর্তি হয়েছেন।

শুধু পুত্ররাই এগিয়ে নন, তার দুই কন্যার একজন ঢাকা পিজি হাসপাতালের চিকিৎসক এবং অন্যজন পড়ছেন দশম শ্রেণিতে। গর্বিত এই পিতার নাম আমিনুর রহমান। তিনি উপজেলার মরিয়মনগর কাটাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বাড়ি উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের ছাইনীপাড়া গ্রামের কালারাজার বাড়িতে।

জানা যায়, শিক্ষক আমিনুর রহমান ও গৃহিণী মা আলেয়া বেগমের বড় সন্তান হাসান মনির বুয়েটের ২০০৯১০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজ থেকে ২০০৭ সালে এসএসসি ও ২০০৯ সালে এইচএসসি শেষ করে অংশ নেন বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায়। সেখানে তিনি মেধাতালিকায় ৫৭তম স্থান পেয়ে ভর্তি হন ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক (ইইই) বিষয়ে। বর্তমানে তিনি ঢাকায় মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার ছোট বোন ও পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান ডা. আয়েশা সুলতানা মুক্তা। তিনিও চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে ২০১০ সালে

এইচএসসি সম্পন্ন করে ভর্তি হন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে। তিনি বর্তমানে অবস এন্ড গাইনী বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। বুয়েটের ২০১৩১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী এই পরিবারের তৃতীয় সন্তান হাসান মুরাদ। হাসান মুরাদ চট্টগগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৯ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকার ৭৪তম স্থান অর্জন করেন তিনি। সেখান থেকে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারি (সিএসই) বিভাগ থেকে বিএসসি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি চুয়েটে লেকচারার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এখনও বুয়েটে পড়ছেন এই শিক্ষক পরিবারের চতুর্থ সন্তান হাসান মাসুম। তিনি বর্তমানে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মাসুম বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা ২০১৮১৯ ব্যাচে ৮০তম মেধাতালিকা অধিকার করেন। অন্যদিকে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা ২০২১২২ ব্যাচে ৩২৪তম মেধাতালিকা অর্জন করে চান্স পেয়েছেন পঞ্চম সন্তান হাসান মামুন। তিনি বুয়েটে ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে ভর্তি হচ্ছেন। পরিবারের চতুর্থ সন্তান হাসান মাসুম বলেন, বুয়েটের সাথে আমাদের পরিবারের পরিচয় ২০০৯ থেকে। আমার বড় ভাই হাসান মনির যখন চান্স পায়, তখন ভাইয়ার ভর্তি সময় আমরা সবাই ঢাকা যায়। ছোট ছিলাম অনেক বেশি কিছু মনে নাই। তবে ভাইয়ার ভর্তির দিন বুয়েট মেডিকেল সেন্টারের সামনে এক আন্টির সাথে আম্মু যখন কথা বলছিল তখন ওনার একটা কথা এখনও মনে আছে ‘ছোটরা বড়দের পথেই যায়।’ আন্টি হয়ত কথার কথা বলছিল কিন্তু মনে হয় আজকে ঐ কথাটা সত্যি হল। এদিকে চার সন্তানকে বুয়েটে এবং একজনকে চিকিৎসক করার পর প্রশংসায় ভাসছেন শিক্ষক পিতা আমিনুর রহমান। তাদের এমন সফলতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তাদের প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন নেটিজেনরা। আকবর হোসেন রুবেল নামে একজন লেখেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয় ও গৌরবের বিষয়। যেখানে বর্তমানে একজন মেধাবী সন্তানকে বুয়েটে পড়নো কঠিন, সেখানে একে একে চার সন্তান বুয়েটের শিক্ষার্থী। তাদের পিতামাতাকে অভিনন্দন জানিয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার বলেন, গ্রামের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেও যে সন্তানকে বুয়েটে পড়ানো সম্ভব, তাও আবার চার সন্তানকে সেটিই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন শিক্ষক আমিনুর রহমান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার সৈকতে গোসল করতে নেমে স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে ছাত্রলীগ নেতা খুনের ঘটনায় আটক ৭