‘এই গরুটার দড়ি শক্ত করে বেঁেধছো? ওটাকে খড় দাও’। এভাবেই কর্মচারীদের নানা নির্দেশনা দিচ্ছিলেন একজন মহিলা। এসময় একজন ক্রেতা আসেন। তিনি একটা গরু পছন্দও করেন। তখন তিনি দাম জানতে চাইলে মহিলা কর্মচারীদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, গরুটা খাইম থেকে বের কর। সাথে ক্রেতাকে বললেন, আগে ভালো করে দেখুন। গরুটা একটু হেঁটে দেখায়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ব্যতিক্রমী এ দৃশ্য দেখা গেছে নগরের বিবিরহাট গরুর বাজারে। ব্যতিক্রম এই অর্থে, পুরো বাজারের একমাত্র নারী বিক্রেতা তিনি। তাছাড়া নগরের বাকি ছয়টি বাজারেও এখন পর্যন্ত নারী বিক্রেতা চোখে পড়েনি। আলাপকালে জানা গেছে, তার নাম সালমা। গতকাল সোমবার সকালে ২১টি গরু নিয়ে এসেছেন চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে। প্রতিটি গরুর দাম এক লাখ থেকে পৌনে দুই লাখ টাকার মধ্যে। সবগুলো গরু লালন-পালন করেছেন নিজের খামারে। গরুর হাটে একজন মহিলা বিক্রেতা এসেছেন শুনে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে কীনা তার খোঁজ নিতে আসেন পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দীন মজুমদার। তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, এটা খুব পজেটিভ খবর। একজন নারী উদ্যোক্তা তার খামারের গরু বিক্রির জন্য এনেছেন। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এমন চিত্র দেখা গেলেও চট্টগ্রামে দেখা যায় না। ওই জায়গা থেকে আমি একটু সারপ্রাইজডও। তার সঙ্গে কথা বলেছি। কোনো সমস্যা হলে জানাতে বলেছি। তিনি (সালমা) আমাদের জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে তার আত্মীয় আছেন। রাতে তিনি সেখানে চলে যাবেন। তখন
তার ভাই গরুগুলোর দেখভাল করবেন। ওসি নাজিম বলেন, সামগ্রিকভাবে পশুর হাটে যাতে বিশৃঙ্খল কিছু না ঘটে সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি আছে। সার্বক্ষণিক আমাদের ফোর্স আছে। বিক্রেতা-ক্রেতার যে কোনো সমস্যা সমাধানে আমরা তৎপর। কথা হয় বিবিরিহাট গরুর বাজারের ইজারাদারের প্রতিনিধি রেজাউল করিম রিটনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত ক্রেতারা যে ধরনের গরু খুঁজছেন তেমন গরুই এনেছেন সালমা আপা। ফলে সালমা আপা তার গরুগুলো যে খাইমে বেঁধেছেন সেখানে ভিড় বাড়ছে। অবশ্য এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়নি। তবে অনেকেই দরদাম করেছেন। আশা করছি শেষ পর্যন্ত আপার সবগুলো গরুই বিক্রি হয়ে যাবে। রিটন বলেন, বাজারের একমাত্র মহিলা বিক্রেতা সালমা আপা। তাই ওনার যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখছি। গতকাল বিবিরহাট বাজারে ২২ গাড়ি গরু এসেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে নগরের বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, এবার ক্রেতার চাহিদার শীর্ষে আছে ষাঁড় এবং মাঝারি সাইজের গরুর। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের কাছে এ ধরনের গরুর চাহিদা বেশি। মাঝারি সাইজের গরু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ হাজার টাকা থেকে এক-দেড় লাখ টাকায়। মূলত এ দামে বিক্রি হওয়া গরুর ক্রেতাই বেশি।
গতকাল কর্ণফুলী নূর নগর হাউজিং মাঠের গরুর বাজারে ৮৫ হাজার টাকায় একটা লাল রঙের ষাড় কিনেন আবদুল মতিন। তিনি বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমি এবং আমার ভাই যৌথভাবে কোরবানি দেব এবার। মধ্যবিত্ত হিসেবে বেশি দামে গরু কেনার সামার্থ্য নেই। তাই মাঝারি সাইজের কিনলাম। তবে চেষ্টা করেছি দাগমুক্ত সুন্দর গরু কেনার।
সাগরিকা পশুর হাটে ১৯টি গরু বিক্রি করতে এনেছেন ফজল মিয়া। তিনি বলেন, সাগরিকা বড় গরুর জন্য প্রসিদ্ধ হলেও আমি মাঝারি এবং সামান্য বড় সাইজের গরু আনলাম। তবে সবগুলোই ষাঁড়। ৮০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে রয়েছে সবগুলো গরু। মধ্যবিত্তের কথা চিন্তা করেই মাঝারি সাইজের গরু বিক্রির জন্য এনেছেন বলে জানান তিনি।
এ বাজারে কথা হয় অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া তানভীরের সঙ্গে। সে এসেছে তার চাচ্চুর সঙ্গে। তার একটাই আবদার, বড় গরু না হলে সমস্যা নেই। কিন্ত লাল রঙের এবং ষাঁড় কিনতে হবে। ভাতিজার এ আবদার পূরণ করতে গিয়ে চাচা মোশারফ হোসেনও কিনলেন ৯২ হাজার টাকায় একটি ষাঁড়।
সাগরিকা পশুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমাদের বাজারে সবধরনের গরু পাওয়া যাচ্ছে। ২০ লাখ টাকা দামের গরু যেমন আছে তেমনি ৪০-৫০ হাজার টাকা দামের গরুও আছে। তবে মনে হচ্ছে বড় সাইজের গরুর ক্রেতার চেয়ে মাঝারি সাইজের গরুর ক্রেতার বেশি।
কোরবান উপলক্ষে এবার নগরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থায় সাতটি পশুর হাট বসানো হয়। এর মধ্যে চারটি অস্থায়ী। এগুলো হচ্ছে- কর্ণফুলী গরু বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার, পতেঙ্গা লিংক রোড সংলগ্ন খেজুরতলা মাঠ এবং ৪১নং ওয়ার্ডস্থ বাটারফ্লাই পার্কের পাশে। এছাড়া আছে তিনটি স্থায়ী পশুর হাট। হাটগুলো হচ্ছে- সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। এসব বাজারে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লাহ, নাটোরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে গরু এনেছেন বেপারিরা। এছাড়া চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, আনোয়ারা ও বাঁশখালী থেকে গরু আনা হয় বিক্রির জন্য।