বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের সকল প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। জাতীয় সংসদে গত রোববার বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শিল্প পার্ক উদ্বোধনের সময় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এখানে যত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, সব প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের লোকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। জনগণের এ চাওয়ার প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জানিয়েছিলেন।
ভবিষ্যত বাংলাদেশের এক ‘রূপকল্প’ হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত-সমৃদ্ধ-শিল্পোন্নত সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে বর্তমান সরকারের একটি সফল উদ্যোগ এই শিল্প নগরী। একে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে এই শিল্প নগরীতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই থেকে ১০ কিলোমিটার এবং বন্দর শহর চট্টগ্রাম থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ইছাখালী, চর শরত, চর মোশাররফ, চর লক্ষ্মী ও সাধুর চরে সমুদ্র উপকূলে ৩৩ হাজার একর জমিতে এটি নির্মিত হচ্ছে। চারদিক থেকে সুবিধাজনক ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে একটি বড় ক্যানভাসে স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করছে। এটি সমুদ্র তীরবর্তী অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ায় আরো বেশি কার্যকর হবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর সম্পর্কে বলেছেন, ‘এককথায় এই অর্থনৈতিক জোন আমাদের জন্য একটা গেম চেঞ্জার হবে। এটা আমাদের অর্থনীতির পুরো পথের নকশাই বদলে দেবে। এর কারণে আমাদের অর্থনৈতিক গ্রোথ বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে, বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে; সঙ্গে দেশের বিনিয়োগও বাড়বে। এটার প্রভাব শুধু চট্টগ্রামেই পড়বে না, সারা দেশেই পড়বে। আশপাশের দেশের অনেক অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়বে। আর সারা দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল যখন চালু হয়ে যাবে, আমরা ধারণা করছি, প্রায় ১ কোটি মানুষের চাকরি হবে, যার সুফল পুরো বাংলাদেশ পাবে। তবে এই সুফল পেতে গেলে আমাদের কিছু বিষয়ে ঠিক করতে হবে। যেমন আমাদের দেশের ব্যবসায়িক কিছু নিয়মকানুন একটু সহজ করতে হবে। কারণ নিয়মগুলো কঠিন থাকলে বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে যাবে। এ ছাড়া অবকাঠামো উন্নত করে ভালো যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পরিবারের স্বাস্থ্য-শিক্ষা সুরক্ষা দিতে হবে এবং সরকারি সংস্থারগুলোর সুষ্ঠু সমন্বয় করতে হবে। সর্বোপরি বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো করতে পারলেই এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনীতি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব। আমাদের সুবিধা হলো দেশে এখন অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়ে গেছে। আমাদের অর্থনৈতিক গ্রোথ খুব ভালো, তাই আমাদের ইনকামও বেড়ে গেছে। এ জন্য এ দেশেই একটা ভালো বাজার তৈরি হয়ে গেছে। বিদেশিরা জানে, এখানে শিল্পকারখানা করলে পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি এখানকার বাজারে বিক্রি করতে পারবে। তা ছাড়া এখন আমাদের বিদ্যুতের অবস্থাও অনেক ভালো। সব মিলিয়েই বলা যায়, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হবে আমাদের গেম চেঞ্জার।’
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, শাসন, অর্থনীতি, বাস্তুসংস্থান, সম্পদ এবং স্থানীয় জনগণকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর দেশের প্রথম পরিকল্পিত শহর, যা সত্যিকারের বিশ্বমানের ব্যবসা ও শিল্প কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করবে। এতে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং এই শিল্প নগর থেকে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি বাজারের জন্য উৎপাদন শুরু করতে শহরটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করতে শুরু করেছে। মহাপরিকল্পনার একটি হচ্ছে স্থানীয় জনগণের উন্নতি সাধন। সেই হিসেবে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি’র দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি। আমরা চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই দাবির প্রতি সমর্থন প্রদান করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেবেন।