সংগীতশিল্পীদের সকল দাবি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘সংগীতের জাতীয় উৎসব ও সম্মেলন’ উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, করোনাকালীন ২০ হাজার সংগীতশিল্পীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার সময় শিল্পীদের বিশেষ সহায়তা তহবিলে ছিল ৩০ কোটি টাকা। এখন ফান্ড ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। শিল্পীদের যেসব দাবি আছে তা বিবেচনা করার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
স্বনামধন্য রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তব্য রাখেন সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের মহাসচিব এবং গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশের সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের মহাসচিব এবং মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি নকীব খান, সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের আরেক মহাসচিব এবং সিংগার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ।
সভাপতির বক্তব্যে রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, সারা দেশের সংগীতের সঙ্গে জড়িতদের এক ছাতার নিচে আনা সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের লক্ষ্য। ৫০ বছর ধরে গীতিকবি, সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পীরা নানা অনিয়ম, অবহেলা আর প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এ পরিস্থিতি উত্তরণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ।
শহীদ মাহমুদ জঙ্গী তার বক্তব্যে সংগীতশিল্পীদের উন্নয়নে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরে বলেন, কপিরাইট অফিসের যে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে শিল্পীদের পৃথক অফিস বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি সংগীত একাডেমি গড়ে তোলার দাবি জানাই। এছাড়া তিনি সরকারি হাসপাতালে সংগীত শিল্পীদের জন্য পৃথক সিট রাখাসহ শিল্পীদের জীবনমান উন্নয়নে একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরেন।
নকীব খান বলেন, সংগীতের উন্নয়নে সকলকে কাজ করতে হবে। পৃথিবীর সপ্তম ভাষা বাংলা। বাংলা গানকে পৃথিবীর দরবারে পরিচিত করতে সকল শিল্পীকে একযোগে কাজ করতে হবে।
কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, সংগীত অঙ্গনে সম্পৃক্ত সকলকে নিয়ে আমাদের এ উদ্যোগ। এ উদ্যোগ সফল করার জন্য সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।
এরপর বিকাল ৬টা নাগাদ শুরু হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব। যার মধ্য দিয়ে উঠে আসে চট্টগ্রামের সংগীত ও সংস্কৃতি। শুরুটা হয় সমরজিৎ রায়ের উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে। এরপর পর্যায়ক্রমে মঞ্চে গান পরিবেশন করেন চট্টগ্রাম সংগীত ভবনের শিল্পীরা, প্রেমসুন্দর বৈষ্ণবের কণ্ঠে চট্টগ্রামের প্রচলিত আঞ্চলিক গান, রাঙামাটির জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিলের পাহাড়ি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের পরিবেশনা এবং চট্টগ্রামের ব্যান্ড দূরবীন।
দ্বিতীয় পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, কুমার বিশ্বজিৎ, হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, জয় শাহরিয়ার ও কিশোর দাশ। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ পর্যায়ক্রমে মঞ্চে আসে দেশের তিন জনপ্রিয় ব্যান্ড রেনেসাঁ, দলছুট ও সোলস।
সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ-এর অন্যতম মহাসচিব ও গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশের সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী জানান, চট্টগ্রামের সফল আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ২৪ জুন এই উৎসব হবে সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। এরপর ১ জুলাই বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ১৬ জুলাই উৎসবের চূড়ান্ত অনুষ্ঠান ও জাতীয় সম্মেলন ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেঙে। পুরো উৎসব ও সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সচিব শিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল।
৫০ বছর ধরে গীতিকবি, সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পীরা নানা অনিয়ম, অবহেলায় শিকার হওয়ার পাশাপাশি প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে গীতিকবি, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীরা এক ছাতার নিচে এসেছেন। গত বছরের ১০ জুলাই গঠন করা হয় ‘সঙ্গীত ঐক্য বাংলাদেশ’। গীতিকারদের সংগঠন গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ, কণ্ঠশিল্পীদের সংগঠন সিঙ্গার্স এ্যাসোসিয়েশন ও সুরকারদের সংগঠন মিউজিক কমপোজার্স সোসাইটি থেকে চারজন করে প্রতিনিধি নিয়ে নতুন এ সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়।
মহামারি করোনার আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সংগঠনটি সারা দেশে নিজেদের পরিচিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল সংগঠনটির উদ্যোগে চট্টগ্রামে সঙ্গীতের জাতীয় উৎসব ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।