শত্রুর মুখে ছাই ঢেলে পদ্মা সেতু : শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক সাফল্য

ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া | রবিবার , ১২ জুন, ২০২২ at ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

দুই নিয়ে দুনিয়া। যেমন শত্রুমিত্র, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পুত্রকন্যা, মাবাবা, হাসিকান্না, সুখদু:, হ্যাঁনা, কোর্টকাচারী, যশঅযশ, লাভঅলাভ, সকালসন্ধ্যা ইত্যাদি। ভারতের রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালাম বলেছেন, ‘আপনাকে ঝগড়াবিবাদ করে শত্রু তৈরী করতে হবে না, আপনি একটা ভালো কাজ করেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার একটা শত্রু তৈরী হয়ে যাবে’। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করত: বাঙালি জাতির ভাবমূর্তি বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মহান লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের নিজস্ব অর্থায়নে একটা সেতু নির্মাণ তৈরীর সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই একটা ভালো এবং উত্তম কাজ। যখনই এই কাজে হাত দেয়ার পরিকল্পনা করলেন তখনই শত্রুরা ফোঁস করে উঠলেন এবং কাজে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করতে শুরু করলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা অটল। যা বলেছেন একবার, তাইই হবে। অনেকে অনেক রকম মন্তব্যের ঝুড়ি ছেড়ে দিলো, এমন কি বললো, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের পক্ষে পদ্মা সেতু নির্মাণ কী করে সম্ভব ! অথচ ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়ে গেলো এবং তা হলো শত্রুর মুখে ছাই ঢেলে।

আমরা যারা সাধারণ নাগরিক তারা বাইরে থেকে অনেক কিছু অবলোকন করি, এটা রাজনীতিবিদদের অনুধাবন করা উচিত। রাজনীতিকে জটিল করলে ফল শুভ হয় না। কোন্‌ কোন্‌ বিষয়ে রাজনীতি করা উচিত তা রাজনীতিবিদদের সঠিকভাবে অনুধাবন করতে হবে। উন্নয়নশীল প্রকল্প নিয়ে রাজনীতিবিদদের ভাবনা প্রগতিশীল হওয়া উচিত। পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে ২১টি জেলার যে সংযোগ বৃদ্ধি পাবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে এটা রাজনীতিবিদদের বুঝতে নিশ্চয়ই কষ্ট হবার কথা নয়। সেক্ষেত্রে এই মহাপ্রকল্পের প্রতি সমর্থন দিলে রাজনীতিবিদরাই শ্রদ্ধার আসনে বসবে। কিন্তু শুধু বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা করা মানে ‘নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা’। আমাদের রাজনৈতিক চর্চা মূলত: হিংসাবিদ্বেষ প্রসুত। আমরা পারি নাই ওনারা কেন পারবে। এই ধরণের হিংসাবিদ্বেষপূর্ণ রাজনীতির মতাদর্শ পরিহার করা উচিত। তাহলে একটা সুস্থ রাজনীতির ধারা প্রবর্তিত হবে। এক সরকার পারেনি বলে আরেক সরকার পারবে না তা হয় না। সরকার পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে পারলে অবশ্যই প্রত্যেক সরকার সফল হবেন। যেমন শেখ হাসিনার সরকার দক্ষ বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে ৪১তম অবস্থানে আসন গ্রহণ করেছে।

পদ্মা সেতুর দ্বারা দেশের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি হবে এতে রাজনীতিবিদদের এত ঈর্ষার কারণ কেন? আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মুক্তিযুদ্ধে এটিই ছিল আমাদের প্রতিশ্রুতি। আমরা ‘বঙ্গবন্ধুর সৈনিক’ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাই ২০৪১ সালে যাতে উন্নত দেশের কাতারে আমরা স্থান করে নিতে পারি। ১৮ কোটি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একটা বিষয় শুধু সেটি হচ্ছে ‘উন্নত বাংলাদেশ’ চাই।

চিন্তাবিদ গোখেলে বলেছেন, ‘What Bengal things today, India thinks it tomorrow। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন বাঙালিকে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য। আমরা উন্নত শির নিয়ে বিশ্বে দাঁড়াতে চাই এই বলে যে, ‘বল বীর, চির উন্নত মম শির’। বঙ্গবন্ধু এই শিক্ষাই দিয়েছেন ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত এক মহান আদর্শের ধারায়। বাঙালি জাতি যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে তজ্জন্য কত বাঙালিকে রক্ত দিতে হয়েছে, আত্মাহুতি দিতে হয়েছে, শহীদ হয়েছে। মাস্টার দা সূর্যসেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এদের বিপ্লব গাথা আমাদেরকে পথ দেখায়। বঙ্গবন্ধু বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন বাঙালি নেতৃত্ব দিতে জানে। আজ দূরদর্শী রাজনীতিবিদ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্ব সমাদৃত, বিশ্ব প্রশংসিত। নেতার নেতৃত্বগুণ মানুষ যাতে উপলব্ধি করতে পারে সেভাবেই নেতা নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাবেন। বাংলাদেশ একটা প্রাকৃতিক সম্পদের ভরপুরের দেশ। আমাদের সমুদ্র সম্পদকে যদি সত্যিকারভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমি মনে করি আমরা ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত হবো। সেজন্যই মাননীয় নেত্রীর প্রতি অনুরোধ থাকবে বিস্তৃত সমুদ্র এলাকা যে আমাদের হাতে এসেছে তার সম্পদকে খুঁজে বের করার জন্য জোড় প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অনেক খনিজ সম্পদ, জলজ সম্পদে ভরপুর এই সমুদ্র সীমানা। আমাদের কৃষিজ সম্পদকে বাড়াবার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে বনজ সম্পদেরও। সর্বোপরি যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বিশাল খাদ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।

করোনার মতো বিশ্বব্যাপী মহামারি মোকাবেলা করে দেশকে যে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রাখার সক্ষমতা মানবতাবাদী শেখ হাসিনার সরকার দেখিয়েছে তা আজ বিশ্বে প্রশংসিত। দুর্নীতি মোকাবেলায় যে জিরো টলারেন্স এটিকে অব্যাহত রাখতে হবে। একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গঠনে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। এই শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে একটি সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। ধর্মান্ধতাকূপমণ্ডুকতা পরিহার করে যুগোপযোগী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা সম্ভব।

আওয়ামী লীগ সরকার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল। অনুরূপভাবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক চেতনার শিক্ষানীতি প্রবর্তন করতেই হবে, দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এগিয়ে নিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে। শত্রু থাকবে, শত্রুকে ভয় করলে চলবে না। নিন্দুক, হিংসাবিদ্বেষভরা প্রতিহিংসাপরায়ন লোক থাকবেই। যাঁর মধ্যে সততানৈতিকতাবিশ্বস্ততা থাকবে, ততদিন সে কাউকে ভয় করবে না। গণমানুষের নেতা শেখ হাসিনাও ভয় করে না। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, সততাই তাঁর মূলমন্ত্র। জয়তু পদ্মা সেতু। জয়তু শেখ হাসিনা।

লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, প্রাবন্ধিক, . বি. পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটি
পরবর্তী নিবন্ধজিনিয়াস মেধাবৃত্তির পুরস্কার বিতরণ