দুইদিন পেরিয়ে গেলেও গত রাত পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর আগুন। দীর্ঘ সময় ধরে এ আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ হিসেবে ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় ডিপোটিতে চার হাজারের অধিক কন্টেইনার ছিল। এর মধ্যে কোনটিতে রাসায়নিক বা ‘হাইড্রোজেন পার অঙাইড’ আছে তা নিশ্চিত না হওয়ায় কাজ করতে হচ্ছে সতর্কতার সঙ্গে। এতে কিছুটা সময় লাগছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে। অবশ্য দুপুরে চারটি কন্টেইনার চিহ্নিত করা হয় যেখানে রাসায়নিক পদার্থ ছিল।
তাছাড়া যেসব কন্টেইনারে আগুন লাগেনি সেগুলো আলাদা করা হচ্ছে। যাতে আগুন লাগা কন্টেইনার থেকে হিটের মাধ্যমে এসব কন্টেইনারে আগুন ছড়িয়ে না পড়ে। এক্ষেত্রে কন্টেইনারগুলো আলাদা করা হচ্ছে মুভার দিয়ে। তবে কেবল একটিমাত্র মুভার দিয়ে এ কাজ করায়ও কিছু সময় লাগছে। এছাড়া ভোরের দিকে অগ্নি নির্বাপণে ব্যবহৃত পানির কিছু সংকট দেখা দেয়। পরে অবশ্য নৌ-বাহিনীর একটি দল সেখানে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তায় দেয়।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাত ৯টার দিকে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এক পর্যায়ে ‘হাইড্রোজেন পার অঙাইড’ থাকা কন্টেইনার বিস্ফোরণ ঘটলে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মূলত, বিস্ফোরণের পর থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে সতর্কতা বাড়িয়েছে অগ্নি নির্বাপণে নিয়োজিত সংস্থাগুলো। কারণ, ‘হাইড্রোজেন পার অঙাইড’ থাকা কন্টেইনারগুলো অপসারণ করতে হয় বিশেষ পদ্ধতিতে।
গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম বলেন, আপনারা অনেক ধোঁয়া দেখছেন। কন্টেইনারে কাপড় ছিল, সেগুলো কন্ট্রোলে আসার পর পানি দেয়ার পর ধোঁয়া বেরুচ্ছে। এসময় তিনি বলেন, চারটি রাসায়নিকের কন্টেইনার শনাক্ত করা হয়েছে। সেগুলো আলাদা করে রাখা হয়েছে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের সাথে আমরা কাজ করছি। যদি নতুন করে কোনো কন্টেইনারে আগুন না লাগে, তাহলে দ্রুত নির্বাপন সম্ভব হবে। তবে সেটা কতক্ষণে হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মনির হোসেন উপস্থিত সাংবাকিদদের বলেন, আগুন যাতে না ছড়ায়, অন্যান্য কন্টেইনারে যাতে হিটের মাধ্যমে আগুন না যায় সেটা আমরা নিশ্চিত করছি। তিনি বলেন, প্রতিটি কন্টেইনার আলাদা আলাদা খুলে আগুন নিভাতে হবে। তা না হলে আগুন শেষ হবে না। তবে এখন আর প্রায় ৮-১০টা কন্টেইনারে আগুন আছে। বাকিগুলো মোটামুটি সেভ আছে।
বিএম ডিপোতে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ফেনী ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী সাংবাদিকদের বলেন, এখানে কিছু কন্টেইনারের মধ্যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আছে। নতুন করে যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে এ জন্য ধীরে ধীরে সাবধানতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা বন্দরের মধ্যে এর চেয়ে বড় বড় আগুন নিভিয়েছি।
উল্লেখ্য, গতকাল আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট কাজ করে। এছাড়া সেনাবাহিনীর ২৪ ডিভিশনের ২০০ জনের বেশি সদস্য বিএম ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে বেসামরকি প্রশাসনকে সহায়তা করে।