দ্বিতীয় দফায় ডিপিপির খসড়া চূড়ান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৪ জুন, ২০২২ at ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় দফায় প্রণয়ন করা ডিপিপির (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) খসড়া অবশেষে চূড়ান্ত হয়েছে। চূড়ান্ত হওয়া এ খসড়া বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই এ ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে যাচ্ছে জানিয়ে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, পরিকল্পনা কমিশনে পর্যালোচনা শেষে সেটি প্রিএকনেক সভায় যাবে। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে এর আগে (২০১৯ সালে) একটি ডিপিপি প্রস্তুত করে বেসরকারি একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। প্রস্তুত করা ডিপিপিতে নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেটি বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই ও নতুন করে ডিপিপি তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় দফায় এ ডিপিপি ও মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়। স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আব্দুল হামিদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইয়েন্সএর সাবেক উপাচার্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী এবং স্থপতি তারিক হাসানসহ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গড়া একটি টিম এ ডিপিপি প্রণয়নের সাথে সম্পৃত্ত ছিলেন। ডিপিপি ও মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া প্রস্তুত করে প্রায় ৬ মাস আগেই তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় এ সংক্রান্ত কমিটি। খসড়া গ্রহণ করে তাতে কিছুটা পরিমার্জনের পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে খসড়াটির পরিমার্জনের কাজ চলছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ যৌথভাবে এ কাজ করছে। কয়েকদিনের মধ্যেই পরিমার্জনের এ কাজ শেষ হবে জানিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদ রশীদ আজাদীকে বলেন, পরিমার্জন হিসেবে প্রস্তাবিত অবকাঠামোগুলোর আলাদা আলাদা ফ্লোর বিন্যাস করার নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ আমরা এখন সে কাজটি করছি। কয়েকদিনের মধ্যেই এ কাজ শেষ হবে। এর পরপরই এ ডিপিপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। সর্বোচ্চ ১০/১২ দিনের মধ্যেই এটি (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে যাবে বলে জানান প্রকৌশলী ফরহাদ রশীদ। আর পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের পর সেটি একনেক সভায় উত্থাপনের জন্য পাঠানো হবে।

যা রয়েছে ডিপিপিতে : খসড়া ডিপিপি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণেই খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৪’শ কোটি। আর বাদ বাকি অর্থ খরচ হবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, আসবাবসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়ে। অবশ্য অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলেই যন্ত্রপাতি, আসবাবসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

প্রস্তাবিত অবকাঠামোর মধ্যে থাকছে৮’শ শয্যার একটি হাসপাতাল ভবনসহ ১২টি ১৫ তলা ভবন। এসব ভবনের মধ্যে প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের জন্য কোয়ার্টার, আইএইচটি (ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি) ভবন, হোস্টেল ভবন (বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২টি এবং আইএইচটি’র শিক্ষার্থীদের জন্য ২টি), নার্সেস ডরমেটরি, স্টাফ কোয়ার্টার প্রভৃতি। এর বাইরে ১০ তলা বিআইটিআইডি ভবন, ৪ তলা টিএসসি ও ক্যাফেটেরিয়া ভবন, ২ তলা বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ও ভিসির বাংলো, দ্বিতল কেন্দ্রীয় মসজিদ ভবনসহ সবমিলিয়ে ২০টির বেশি ভবনের প্রস্তাবনা রয়েছে ডিপিপিতে। অবকাঠামোর পাশাপাশি ক্যাম্পাসে গড়ে তোলা হবে দৃষ্টিনন্দন বঙ্গবন্ধু চত্বর। একনেক সভায় উত্থাপনের আগ পর্যন্ত প্রকল্প প্রস্তাবনায় কিছু কাঁটছাঁট কিংবা সংযোজনবিয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান।

মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিশেষজ্ঞ একটি টিম এ ডিপিপি ও মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত করেছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের পরিকল্পনা শাখা এই ডিপিপি পর্যালোচনা করেছে। তারা কিছু পরামর্শও দিয়েছে। এখন ডিপিপিটি পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও অবকাঠামোর নকশাডিজাইন দৃষ্টিনন্দন মনে হয়েছে বলেও জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মো. ইসমাইল খান।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলছেন, এখানে আটশ শয্যার হাসপাতাল হবে। শুধু অবকাঠামোই থাকছে না, জাতির জনকের স্মরণে গড়ে তোলা হবে বঙ্গবন্ধু চত্বর। সবমিলিয়ে প্রাকৃতিক নৈঃসর্গের অপরূপ একটি ক্যাম্পাস আমরা পেতে যাচ্ছি। নির্মাণ কাজ শেষ হলে যা দৃশ্যমান হবে।

৯ প্রতিষ্ঠানের অনাপত্তি পত্র সংগ্রহ : মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অবকাঠামো নির্মাণে এরই মাঝে ৯টি প্রতিষ্ঠানের অনাপত্তি পত্র যোগাড় করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অবকাঠামো নির্মাণে জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, সিভিল এভিয়েশন, সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ), ওয়াসা, পিডিবি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি. (জিটিসিএল), কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (কেজিডিসিএল) এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের অনাপত্তি পত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এর বাইরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনাপত্তি পত্র পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন (চূড়ান্ত পর্যায়ে) রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদ রশীদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহজযাত্রীদের কষ্ট দূর করতে পেরেছি : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসড়কে কাদা-পানি, কচু লাগিয়ে প্রতিবাদ