থামছে না মাটি ও বালু লুট

ডুলাহাজারা-খুটাখালী সংরক্ষিত বন বর্ষায় ভূমিধসের শঙ্কা

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২৮ মে, ২০২২ at ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ও খুটাখালীতে পাহাড় ও টিলা সাবাড় করে মাটি লুট, বিভিন্ন ছড়াখালে অসংখ্য শ্যালো মেশিন ও শক্তিশালী ড্রেজার বসিয়ে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলনের কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ ভূমিধসের আশঙ্কা করছে পরিবেশ সচেতন মহল। বিশেষ করে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে তোলা ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সীমানা দেয়ালও হুমকির মুখে পড়েছে গত তিন বছর ধরে চলে আসা পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের কারণে। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী ও ফুলছড়ি রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর এবং ডুলাহাজারাস্থ সাফারি পার্ক লাগোয়া রংমহল ও দাঙ্গারবিলে পরিবেশ বিধ্বংসী এই কর্মকাণ্ড বর্তমানেও চলমান রয়েছে। যদিওবা উচ্চ আদালত ডুলাহাজারা ও খুটাখালীর বালু মহালগুলোর কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে। এরপরও আদালতের নির্দেশনা অমান্য এবং প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট এই অপকর্ম চলমান রেখেছে। এতে করে চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণ হলেই ভূমিধসের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। অভিযোগে জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ডুলাহাজারা বনবিটের পাগলির বিল ও ফুলছড়ি রেঞ্জের খুটাখালী ও মেদাকচ্ছপিয়া বনবিটের মধুশিয়া এলাকা থেকে কয়েক বছর ধরে চি‎হ্িনত বালু ও মাটি খেকোচক্র নির্বিচারে পাহাড় ও টিলা শ্রেণির বনভূমির মাটি লুট করে চলছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ছড়া ও সমতল করে ফেলা বনভূমির ওপর শক্তিশালী শ্যালোমেশিন ও ড্রেজার বসিয়ে ভূ-গর্ভের অন্তত ৪০-৫০ ফুট গভীর থেকে বালু উত্তোলন করে দিনরাত সমানে শত শত ট্রাকযোগে পাচার অব্যাহত রেখেছে। এতে ৩টি বনবিটের অন্তত ২৫-৩০ একর বনভূমি পুকুরে পরিণত হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন যৌথ অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের মেশিন, পাইপ ধ্বংস করলেও বালু ও মাটি লুট কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। পরিবেশ বিধ্বংসী এই অপকর্মে জড়িতরা বারবার ছাড় পেয়ে যাওয়ায় ফের তারা একই কর্মকাণ্ড সংঘটিত করছে।
বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযান চালিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলনের উপকরণ ধ্বংস করলেও জড়িতদের আটক করা যাচ্ছে না। অভিযান চালাতে যাওয়ার আগেই জড়িতরা গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যায়। এমনকি বনবিভাগ আদালতে মামলা দায়ের করলেও অপরাধীদের দমন করা যাচ্ছে না।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বনবিভাগের পাগলির বিল শুধুমাত্র ডুলাহাজারা বনবিটের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। এখানে কিছু অংশ ফুলছড়ি রেঞ্জের মেদাকচ্ছপিয়া বনবিটেরও আওতাধীন। এরপরও বনবিভাগ পাগলির বিলের বনভূমি রক্ষার জন্য আন্তরিক। তবে বালু ও মাটি খেকোচক্রে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদেরকে কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, কয়েকবছর ধরে নির্বিচারে পাহাড় ও বনভূমি থেকে বালু ও মাটি লুট করায় বর্তমানে পাগলির বিল ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এসব কারণে চলতি বর্ষামৌসুমে ভয়াবহ ভূমিধসসহ বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
অপরদিকে ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের দক্ষিণাংশের সীমানা দেয়াল লাগোয়া রংমহল ও দাঙ্গার বিলের ব্যক্তি মালিকানাধীন টিলা শ্রেণির জমি থেকে অন্তত ৫০ ফুট গভীর থেকে বালু ও মাটি লুট করার কারণে পার্কের সীমারা দেওয়াল হুমকির মুখে রয়েছে। একই কারণে গতবছরও পার্কের অন্তত ১২০ ফুট সীমানা দেওয়াল ধসে যায়। এবারও একই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডুলাহাজারা, খুটাখালী বনবিটের পাগলির বিল, মধুশিয়া ও রংমহল, দাঙ্গারবিল থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না। ইতোমধ্যে এসব বিষয় জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর দৈনিক আজাদীকে বলেন, জেলা প্রশাসনের বালু মহাল ইজারা দিয়েছে এক জায়গায়। সেই জায়গার কাগজপত্র নিয়ে মাটি লুট ও বালু উত্তোলন করা হয়েছে অন্য জায়গা থেকে। অবশ্য ইতোমধ্যে উচ্চ আদালত পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকাণ্ড বন্ধে নির্দেশনা দিয়ে রুল জারি করার পর জেলা প্রশাসন থেকে বালু মহাল ইজারার বিপরীতে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। তবে প্রভাবশালীরা কোনোকিছু না মেনে পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধেও ব্যাপক ষড়যন্ত্র চলছে।
ডুলাহাজারা ইউনিয়নের সচেতন ব্যক্তিরা জানান, রাতারাতি বিপুল টাকার মালিক বনে যাওয়ার লোভে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করায় ডুলাহাজারার পরিবেশ বিপন্ন হয়ে উঠেছে। এমনকি বর্তমানে ডুলাহাজারার আলোচিত রংমহলের রং-রূপই পাল্টে ফেলা হয়েছে। বনবিভাগ বালি ও মাটি লুটের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করলেও প্রকৃত আসামিরা মামলা থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। দিনমজুর ও নিরিহ শ্রেণির লোকজন আসামি হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিসিএসে বসা হলো না পিংকীর
পরবর্তী নিবন্ধপদ্মা সেতুর ৩০ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেছে