২০১৮ সালের এপ্রিল-মে মাসে জন্ডিসের প্রকোপ দেখা দেয় নগরীর হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায়। মৃত্যু হয় ৩ জনের। বছর পেরুতেই (২০১৯ সালের জুলাই মাসে) পানিবাহিত ডায়ারিয়া-কলেরা ছড়িয়ে পড়ে ঘরে-ঘরে। দুই বছর ব্যবধানে এবার ফের পানিবাহিত ডায়রিয়া ও কলেরা রোগের কবলে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে হালিশহর ছাড়াও বন্দরসহ সমুদ্রবর্তী এলাকাগুলোতে এবার পানিবাহিত এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৪ দিনে এসব এলাকার দেড় শতাধিক রোগী ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসিয়াস এন্ড ডিজিজেস) ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর আক্রান্তদের প্রতি ৫ জনের ১ জনের (২৩ শতাংশের) শরীরে ভিবরিও কলেরির (কলেরার) জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিআইটিআইডির ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিসের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মামুনুর রশীদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, আক্রান্তদের প্রায় ২৩ শতাংশ রোগীর শরীরে ভিবরিও কলেরির (কলেরার) জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে।
এটি সাধারণ ডায়রিয়ার তুলনায় একেবারে ভিন্ন জানিয়ে ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, এই জীবাণু আক্রান্তের ফলে আক্রান্ত রোগীর শরীর থেকে মলের পরিবর্তে একদম পানি বের হতে থাকে। এতে করে ওই রোগী দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়েন। এ ধরনের রোগীকে যথাযথ ফ্লুইড থেরাপি দিতে না পারলে ওই রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি থাকে।
এদিকে, ডায়রিয়া আক্রান্ত ৪০ জনেরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক। আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৩০ জন। বিআইটিআইডি সূত্রে জানা গেছে, কলেরা সার্ভিলেন্স প্রোগ্রামের আওতায় কলেরা শনাক্তকরণের কলকিড টেস্ট কার্যক্রম চালু রয়েছে বিআইটিআইডিতে। এ প্রোগ্রামের আওতায় ২০১৪ সাল থেকে কলেরা শনাক্তকরণের টেস্ট (পরীক্ষা) হয়ে আসছে এ হাসপাতালে। টেস্ট কিট দিয়ে মাত্র আধ ঘণ্টায় এ পরীক্ষার ফল জানা যায় জানিয়ে ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন যেসব নতুন রোগী আসে, আমরা তাদের সবার এই কলেরা টেস্ট করছি।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়া ও কলেরা মূলত পানিবাহিত (ব্যাকটেরিয়াজনিত) রোগ। পানির কারণেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। অর্থাৎ জীবাণুযুক্ত বা দূষিত পানি যে কোনো ভাবে শরীরে প্রবেশ করার কারণেই এসব এলাকার বাসিন্দারা ডায়রিয়া-কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অধিকাংশই (৯০ ভাগ) সমুদ্রবর্তী (হালিশহর ও বন্দর) এলাকার বলে জানিয়ে ডা. মামুনুর রশীদ বলছেন, দূষিত পানি হয়তো ফুটিয়ে পান করছেন। কিন্তু যে কোনো ভাবে দূষিত পানি শরীরে প্রবেশ করছে। হয়তো গোসল করার সময়, মুখ ধোয়ার সময়, ওজু করার সময়, নয়তো থালা-বাসন ধোয়ার সময়, কিংবা রান্না-বান্না বা শাক-সবজি কাটার সময় দূষিত পানি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। মোটকথা, যেকোনো ভাবে ওই দূষিত পানি মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে বা করছে। যার কারণে পানিবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
বিআইটিআইডি সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ করে গত ১৯ মে থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হারে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসা শুরু করে। এ পর্যন্ত অনেকেই সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন। তবে এখনো আক্রান্ত রোগীরা আসছেন।
বিআইটিআইডির তথ্য অনুযায়ী, ১৯ মে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৪৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। ২০ মে ভর্তি হয়েছেন ৪১ জন। ২১ ও ২২ মে ভর্তি হয়েছেন যথাক্রমে ৪৩ ও ৩৩ জন। চার দিনে মোট ১৬০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মাঝে পরীক্ষায় ৩৬ জনের শরীরে কলেরার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল (সোমবার) ৪৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।