বিমানবালাকে যৌন হয়রানি মাস্কের!

| শুক্রবার , ২০ মে, ২০২২ at ৬:৪৩ অপরাহ্ণ

এক বিমানবালাকে ‘যৌন হয়রানির’ অভিযোগ উঠেছে আলোচিত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে।

ওই ঘটনা চেপে যেতে ভুক্তভোগী ওই নারীকে স্পেসএক্স আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার।

তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে মাস্ক অভিযোগকারীকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলে উল্লেখ করেছেন।

বিজনেস ইনসাইডারের দাবি, আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের বদলে মাস্ক এবং তার দুই প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স ও টেসলা নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ না করার এবং যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘চুক্তি’ করতে হয়েছিল ওই বিমানবালাকে।

তিনি নিজে কথা না বললেও তার এক বন্ধু এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। আর নথিপত্র ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্বেষণ করে আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ইনসাইডার ‘নিশ্চিত হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।

ভুক্তভোগীর বন্ধুর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, মাস্কের গালফস্ট্রিম জি৬৫০ইআর বিমান ক্রুদের একজন ছিলেন ওই নারী। মাস্ক প্রায়ই তাকে প্রাইভেট কেবিনে ডেকে ‘শরীর মাসাজ করে দিতে’ বলতেন। এমনকি স্পেসএক্সও ওই কর্মীকে মাসাজ করার বৈধ লাইসেন্স নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

বিজনেস ইনসাইডার-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বিমানবালা তার বন্ধুকে বলেছেন, এক ফ্লাইটে মাসাজ নেওয়ার সময় ‘দেহের নিচের অংশের আবরণ সরিয়ে ফেলেন’ মাস্ক এবং ‘মালিশের চেয়ে বেশি’ কিছু করলে একটি ঘোড়া কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ব্যক্তিগত জীবনে ঘোড়ায় চড়তে পছন্দ করেন ওই বিমানবালা এবং বিষয়টি জানতেন মাস্ক।

ভুক্তভোগীর বন্ধু ইনসাইডারকে বলেছেন, ইলন মাস্ক ও স্পেসএক্স-এর সঙ্গে আপস চুক্তি করার সময় বিমানবালার আইনজীবী ওই বন্ধুর কাছ থেকেও লিখিত বক্তব্য নিয়েছিলেন।

বিমানবালার বন্ধু আরও বলেছেন, মাস্কের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর কর্মক্ষেত্রে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েন ওই বিমানবালা। ওই ঘটনার পর থেকে তাকে শিফট দেওয়া কমিয়ে দেয় স্পেসএক্স। এক পর্যায়ে ওই নারী নিশ্চিত হন যে মাস্ককে প্রত্যাখ্যান করার ফলে তার কাজের সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিজনেস ইনসাইডার-এর প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালে স্পেসএক্সের মানবসম্পদ বিভাগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেন ওই বিমানবালা। স্পেসএক্স কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে শুরুতেই মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে অভিযোগ মীমাংসা করার চেষ্টা করে।

আড়াই লাখ ডলারের মীমাংসা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মাস্ক নিজেও উপস্থিত ছিলেন বলে বিজনেস ইনসাইডারের দাবি।

ওই চুক্তির শর্ত ছিল, আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের বদলে মাস্ক বা তার মালিকানাধীন স্পেসএক্স বা টেসলা প্রসঙ্গে মুখ খুলতে পারবেন না ভুক্তভোগী, যৌন হয়রানির অভিযোগে কোনো মামলাও করতে পারবেন না। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া অর্থ নিয়েও মুখ খোলার সুযোগ থাকবে না ওই নারীর।

বিজনেস ইনসাইডার লিখেছে, বিমানবালাটির বন্ধু তাদের সঙ্গে যোগাযোগের আগে ওই নারীর কাছ থেকে অনুমতি নেননি কারণ তিনি মনে করেছেন, এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আনা উচিত আর সেই বিমানবালা চুক্তিতে আটকা থাকলেও তার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মাস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিজনেস ইনসাইডার। মাস্ক ই-মেইলে বলেছেন, এর উত্তর দিতে তার আরও সময় প্রয়োজন এবং এ গল্পে ‘আরও অনেক কিছু আছে’। তবে তার দাবি, এ অভিযোগ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।

ওই বিমানবালার সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে মন্তব্য করতে পরে আরও সময় দিলেও মাস্ক আর যোগাযোগ করেননি বলে বিজনেস ইনসাইডারের ভাষ্য।

তবে মাস্ক টুইট করে বলেছেন, “আমি ওই মিথ্যাবাদীকে চ্যালেঞ্জ করছি, যে দাবি করেছে তার বন্ধু আমাকে নাঙ্গা দেখেছে। কী দেখেছে সে (দাগ বা ট্যাটু), শুধু একটা বর্ণনা দিক, যেটা সাধারণ মানুষ জানে না। সেটা সে করতে পারবে না কারণ ওরকম কিছু কখনও ঘটেনি।”

আরেক টুইটে মাস্ক বলেছেন, সামনের মাসগুলোতে তার ওপর রাজনৈতিক আক্রমণ ‘লক্ষ্যণীয় হারে বাড়বে’ বলে তার ধারণা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগরু চুরি করে পালানোর সময় গাড়িসহ খাদে
পরবর্তী নিবন্ধমসলার ঝালও বাড়ছে