‘একবার ভূমিকম্পের পর সাফা (শিল্পী, অভিনেতা, লেখক সাফায়াত খান) স্ট্যাটাস দিয়েছিল এ রকম : ভূমিকম্পে দুনিয়া কাঁপছে। চারদিক থেকে আজান আর উলুধ্বনি ভেসে আসছে। প্রাণভয়ে ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেছে। আমি শুয়ে আছি ঘরে। বেরুতে পারছি না। দীর্ঘদিনের অসুখে চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলা বন্ধুটিকে এছাড়া আর কোনোদিন কোনো আক্ষেপ করতে দেখিনি। অবশ হয়েছে শরীর, কিন্তু মুখের হাসি কখনো থামেনি।
শরীর-মনের ওপর এসেছে একের পর এক ঝড়। কতো অস্ত্রোপচার, মাসের পর মাস কতবার হাসপাতালে থাকতে হয়েছে তাকে। তবুও সাফার মুখ মলিন দেখিনি। শরীরের কষ্টে, আর্থিক দৈন্যতায় কীভাবে হাসতে হয় সাফা শিখিয়ে দিয়েছে আমাদের। কোনো কিছুর কাছে মাথা নত করেনি সে।’ সাফায়াত খানের মৃত্যুর পর ফেসবুকে উপরোক্ত স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাঁর বন্ধু কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার। স্ট্যাটাসে তিনি সাফাকে তাদের ‘শৈশবের আনন্দের নাম’ বলে উল্লেখ করেছেন। শিল্পী, অভিনেতা ও লেখক সাফায়াত খান চলে গেছেন গতকাল। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ার নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি। (ইন্না লিল্লাহে…রাজেউন।) তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্রসহ অনেক আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও গুণগ্রাহী রেখে যান। প্রসঙ্গত, সাফায়াত খান দীর্ঘদিন ধরে দূরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। খবর পাওয়ার পর তাঁর বাসভবনে ভিড় করেন অনেক কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও নাট্যকর্মী। শিল্পী শাফায়াত খানের নামাজে জানাজা গতকাল বাদ আছর নালাপাড়ার সিটি মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে গরিবউল্লাহ শাহ মাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়। সাফায়াত খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে। ছবি আঁকার পাশাপাশি তিনি অভিনয় ও নিয়মিত গল্প, কবিতা লিখতেন। তিনি অঙ্গন থিয়েটার ইউনিটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওদের প্রযোজিত অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। তাঁর গল্পগ্রন্থের নাম ‘অলৌকিক মেয়ে মানুষ’।