প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ১১২তম জন্মদিবস উপলক্ষে প্রীতিলতা ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ, পথসভা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত ইউরোপীয়ান ক্লাবের সামনে ও পটিয়ার ধলঘাটে এসব পথসভা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রীতিলতা ট্রাস্ট : চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন বলেছেন, বীরকন্যা প্রীতিলতা নারী জাগরণের অগ্রদূত। যুগ যুগ ধরে তিনি নারীর প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক। প্রীতিলতার স্বদেশী মহিমাময় ত্যাগের ভাস্বর সত্যিই বিরল। বীরকন্যা প্রীতিলতার জীবন সংগ্রামকে ধারণ করে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। গত বৃহস্পতিবার প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ১১২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
পটিয়ার ধলঘাটে বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্ট আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রীতিলতা ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পংকজ চক্রবর্তী। বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টের উপদেষ্টা ড. গুরুপদ চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান, ধলঘাট ইউপি চেয়ারম্যান রণবীর ঘোষ টুটুন, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা বদিউল আলম, পটিয়া সাহিত্য সভার আহবায়ক আহমদ কবির, ট্রাস্টি মো. আলী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সংগীত শিক্ষক বরুণ পালিত ও কমল সরকারের পরিচালনায় প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক জোটের শিল্পীরা সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। এছাড়াও অঞ্জন কান্তি বিশ্বাসের আর্থিক সহযোগীতায় শিশু খাদ্যসামগ্রী উপহার হিসাবে প্রদান করা হয়।
তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ : বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে প্রীতিলতা ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাবের সামনে এ পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সিঞ্চন ভৌমিকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মো. জসিম, মো. রাসেল, মো. ফারুক, সাজু দাশ, সুপ্লব চৌধুরী, দিবাকর দাশ প্রমুখ। এ সময় বক্তারা বলেন, বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের প্রেরণার উৎস। আমরা জীবন সংগ্রামে বিজয়ী হলে এই প্রীতিলতার ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসি। ঠিক একইভাবে কোনো অশুভ শক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদের উত্থান হলে আমরা এই প্রীতিলতার ভাস্কর্যের কাছে প্রেরণা জোগাতে ছুটে আসি। যুগে যুগে প্রীতিলতার আদর্শ আমরা আগামী প্রজন্মের কাছে বলে যাব। বক্তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে একই সূত্রে গাঁথা। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হলো বিপ্লবীদের যে সমস্ত স্মৃতি রক্ষা করা হচ্ছে সবগুলো বিপন্ন স্মৃতি। যেমন চট্টগ্রাম জেল কারাগারে ঐতিহাসিক নির্দশন ফাঁসির মঞ্চে বিপ্লবী নেতা তারকেশ্বর দস্তিদারের নাম ও মুর্যাল সংযুক্ত করা হয়নি। ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি দামপাড়া পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগারটির নামকরণ করা হলো পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ ও পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করার জন্য। ঠিক একইভাবে যাত্রা মোহন সেনের বাড়ির নামকরণ করেছে স্বাধীনতা জাদুঘর। আমরা বলেছি এটির নামকরণ করা হোক যাত্রা–যতিন–নেলী সেনগুপ্ত জাদুঘর। বিপ্লবীদের কোনো দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন না করার কারণে আমাদের দেশের ছেলে–মেয়েরা এই গৌরবগাথা ইতিহাস জানে না। তাই আমরা সরকারের কাছে বারবার দাবি জানিয়ে আসছি ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল যুব বিদ্রোহ দিবস, ১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারি মাস্টারদা সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি দিবস, ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মাহুতি দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হোক।







