নগরীর সড়ক–মহাসড়ক এবং অফিস পাড়ায় এখনো ঈদের আমেজ কাটেনি। ঈদের ছুটি শেষে বৃহস্পতিবার একদিন অফিস–আদালত খুললেও প্রথম কর্মদিবসে কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি চট্টগ্রামে সরকারি–বেসরকারি কোনো দপ্তরে। প্রতিদিনের চিরচেনা যানজটের এই নগরী এখনো ফাঁকা। সড়ক এবং মহাসড়কগুলোতেও নেই যানবাহনের বাড়তি চাপ। তবে আগামীকাল রোববার থেকে আগের মতোই কোলাহলমুখর হয়ে উঠবে নগরী। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে–অফিস–আদালত ও ব্যাংকগুলোতে। টানা ছয় দিনের ঈদের ছুটি কাটিয়ে গত বৃহস্পতিবার অফিস–আদালতে যারা এসেছে তারা শুভেচ্ছা বিনিময় করেই সময় কাটিয়েছেন। ছয় দিনের ঈদের লম্বা ছুটি কাটিয়ে কেউ কেউ কাজ যোগ দিলেও, অনেকেই অফিস শুরু করবেন আরো দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষ করে। তাই বৃহস্পতিবার অফিসপাড়ায় খুব একটা কর্মচাঞ্চল্য ছিল না।
গত রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত ঈদের ছুটি শেষে বৃহস্পতিবারের কর্মদিবসের পরেই শুক্র আর শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি যুক্ত হয়েছে। ফলে অনেকে গত বৃহস্পতিবার দিনটিও ছুটি নিয়ে টানা ৯ দিনের ছুটি ভোগ করছেন। ফলে প্রথম কর্মদিবস গত বৃহস্পতিবার স্বরূপে ফেরেনি চট্টগ্রাম। ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে অনেকটা ফাঁকাই ছিল যানজটের চট্টগ্রাম নগরী। ঈদের ছুটির পর গত বৃহস্পতিবার দেশের সব ব্যাংক খুলেছে, তবে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেছে গ্রাহকের চাপ ছিল না বললেই চলে। অনেকটা ঢিমেতালে চলেছে ব্যাংকিং কার্যক্রম।
যারা অফিস করেছেন তারা ব্যস্ত ছিলেন সহকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে। ব্যাংকের শাখাগুলোতে অলস সময় পার করেছেন অনেকে। ব্যাংকের ভেতরে এক বা দুজন গ্রাহক। নগদ টাকা তোলারও চাপ ছিল না। সরকারি–বেসরকারি ব্যাংক–বীমা, জেলা প্রশাসন কার্যালয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম কার্যালয়, আদালত ভবন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস, শিপিং কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ প্রায় সব অফিসেই ছিল ঈদের আমেজ। আবার অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও খোলেনি।
নগরীর কোনো শপিং এখনো খুলেনি। আজ শনিবার থেকে কিছু কিছু মার্কেট খুলবে বলে জানা গেছে। তবে বোরবার থেকে নগরীর সকল মার্কেট–দোকার পাট আগের নিয়মেই পুরোদমে চালু হবে বলে জানিয়েছেন নগরীর দোকান মালিক সমিতির নেতারা।
তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নগরীর জিইসি মোড়, রেস্টুরেন্ট পাড়া খ্যাতা স্টেডিয়াম, মুরাদপুর, ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার মোড়, চকবাজার, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, আন্দরকিল্লা, জামালখান, চেরাগী পাহাড় এলাকায় প্রায় দোকনপাট খুলেছে। এসব এলাকায় বিশেষ করে উঠতি বয়সী তরুণ–তরুণীদের ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে ঈদের পরদিন বিকালের পর থেকে রেস্টুরেন্টগুলোতে তরুণ–তরুণীদের উপচে পড়া ভিড় লেগে আছে। যারা শহরে ঈদ করেছেন তারাও পরিবার–পরিজন নিয়ে রেস্টুরেন্টে এসেছেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে কদমতলী বাস টার্মিনাল গিয়ে পরিবহন শ্রমিক সাইফুলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘যাত্রী নাই বললেই চলে। এখনও চট্টগ্রামে আহে নাই। জমার টাকা উঠাইতে কষ্ট।’ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ মফিদুল নামে আরেক ড্রাইভার বলে উঠলেন, ‘মানুষ তো আইব শনিবার। শনিবার থাইকা চাপ শুরু হইব।’
রিকশায় তেমন যাত্রী তুলতে পারেননি চাঁদপুরের ইদ্রিস। তিনি জানান, অল্প অল্প করে মানুষ আসা শুরু করছে। সব সময়ে যেমন থাকে তেমন নাই।’
একই অবস্থা নগরীর দূরপাল্লার বাস কাউন্টার দামপাড়া, স্টেশন রোড়, অলংকার মোড়, অক্সিজেন মোড় বাস কাউন্টারগুলোতেও। তেমন যাত্রী নেই। বাস কাউন্টারের কর্মকর্তা এবং ড্রাইভাররা জানান, ঈদ করে শনিবার সকলেই ফিরবেন নগরীতে।
তবে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুতে দেখা গেছে একেবারে ভিন্ন চিত্র। ঈদ শেষে দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শহরে ফিরছে মানুষ। গতকাল শুক্রবার বিকালে শাহ আনামত সেতু এলাকায় দেখা গেছে জনস্রোত। অনেকেই বলেছেন শনিবার অনেকের বেসরকারি অফিস খোলা। তাদেরকে কাজে যোগ দিতে হবে। এজন্য তারা শুক্রবার বিকালে নগরীতে ফিরছেন।