ঈদের ছুটিতে দেশের প্রধান অবকাশ যাপন কেন্দ্র কক্সবাজার এখন টইটুম্বর। পর্যটক বোঝাই যানবাহনের চাপে শহরের রাস্তাঘাটে চলছে মারাত্মক ট্রাফিক জ্যাম। হোটেলগুলোতে খালি নেই কোনো কক্ষ। হোটেল মালিকরা বলছেন, কক্সবাজারে পর্যটকদের এই উপচে পড়া ভিড় আজ শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। মহামারী করোনার প্রভাব হ্রাস পাওয়ায় দুই বছর পর কক্সবাজার আবার সরগরম হয়ে উঠেছে। এবারের ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন শুরু হয়েছে ঈদের কয়েকদিন আগেই। তবে গতকাল শুক্রবারই সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছেন বলে জানান সৈকতের ব্যবসায়ীরা। ঈদের দিন থেকে শহরের তারকা মানের হোটেলগুলোতে এবং গত বৃহস্পতিবার থেকে শহরের বিভিন্ন মানের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেলের শতভাগ কক্ষ অতিথিপূর্ণ হয়েছে। আজ শনিবার পর্যন্ত হোটেলের প্রায় সকল কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে বলে জানান হোটেল মালিকরা।
হোটেল মালিকরা জানান, বর্তমানে কক্সবাজার শহরেই রয়েছে ছোটবড় ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস। যেখানে প্রায় দেড়লাখ পর্যটক রাত যাপন করতে পারে। এছাড়া শহরের বাইরে ও সমুদ্র তীরবর্তী উপ–শহরগুলোসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে রয়েছে আরো প্রায় ৩শ আবাসিক হোটেল ও কটেজ, যেগুলোতেও প্রায় ১৫ হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। তবে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেখানকার হোটেলগুলো ছাড়া জেলার অন্যান্য পর্যটন উপশহরগুলোতেও এখন উপচে পড়া ভিড়।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন (টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা–সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, গত কয়েকদিন ধরেই কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতজুড়েই মানুষের বিচরণ দেখা গেছে। তবে ঈদের ছুটিতে আসা পর্যটকরা শহরে ট্রাফিক জ্যামের কারণে চরম বিরক্তি প্রকাশ করছে। শহরবাসীও একই কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। পাশাপাশি যানবাহন সংকটের কারণে কয়েকগুণ অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে যানবাহন চালকরা।
হোটেল মালিকদের মতে, প্রতিবছর দুই ঈদ ছাড়াও থার্টিফার্স্টের ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এসময় হোটেল–মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। এবারের ঈদের ছুটিতেও প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে। তবে শুক্রবার একদিনেই অন্তত দেড় লাখ পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। আজ শনিবারও একই সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করবেন বলে জানান ট্যুরিজম সার্ভিস এসোসিয়েশন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার। তবে রোববার সরকারি অফিস খোলা থাকায় এদিন থেকে চাপ কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ঈদের আগেরদিন থেকে শহর ও সমুদ্র সৈকতকে বিশেষ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে পুলিশ। আগামী ৯ মে পর্যন্ত তিন স্তরের এ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বাড়তি চাপের কথা মাথায় রেখে পর্যটন এলাকায় আইনশৃক্সখলা রক্ষাসহ অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনের ৪ জন সহকারী কমিশনারকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত ২ মে তাদেরকে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হয়।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, ঈদ উপলক্ষে শহর ও শহরতলীর পর্যটন স্পটগুলোতে টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি শহর ও সমুদ্র সৈকতে চব্বিশ ঘন্টা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা থেকে সপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা প্রকৌশলী আরজুল হক অভিযোগ করেন, সংকটকে পুঁজি করে হোটেল ভাড়া থেকে যানবাহন ভাড়া পর্যন্ত সব কিছু কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। যানবাহন সংকট ও ট্রাফিক জ্যামের কারণে কক্সবাজারে চলাচল করা অনেক কষ্টের।











