‘দূর হয়ে যাক মৃত্যু জরা ভয়/ লাগুক প্রাণে মঙ্গল বারতা/ আগামী দিনের নতুন সূর্যোদয়/ ঢেকে দিক সব জীর্ণ অক্ষমতা।
আজ সূর্যটা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়তেই কালের গর্ভে বিদায় নেবে ১৪২৮। স্মৃতির খাতাটা আরো কিছুটা ঋদ্ধ হবে তাতে। পাতায় পাতায় লেখা হবে আরো কিছু হাসি-কান্না-দুঃখ-শোক-মিলন আর বিরহের কাব্যগাথা। নতুনের আগমন চির প্রত্যাশিত, চির কল্যাণকর। যুগ যুগ ধরে তাই নতুনের আবাহন আর পুরনোর স্মৃতিচারণের মধ্যেই মানুষের জীবনধারা প্রবাহিত, ভবিষ্যতও চলবে এভাবেই।
রবীন্দ্রনাথের শাশ্বত বাণী ‘কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও/ তারি রথ নিত্যই উধাও/ জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয় স্পন্দন/ চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন’। কালের এ রথ এগিয়ে চলছে তার নির্দিষ্ট গতিবেগে। পেছন ফিরে তাকানোর কোনো অবকাশ নেই। এ রথ চরম নিরাসক্ত, ভাবাবেগহীন। দুর্যোগে যেমন নিস্পৃহ, উৎসবেও তেমনি নিরুচ্ছ্বাস। আজ সকল হিসেব চুকিয়ে বন্ধ হবে হালখাতা। ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসের কাসুন্দি ভেসে যাবে কালের স্রোতে। অতীত শুধু স্মৃতি হয়ে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে, হতাশার মাঝে আশার আলো জ্বালিয়ে পথের সারথি হবে।
চট্টগ্রামবাসীই শুধু নয়, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে উদগ্রীব পুরো দেশ। ব্যর্থতার দায়ভার পুরনোর কাঁধে তুলে নতুনের আবাহনে ব্যস্ত সবাই। জীর্ণ, পুরনো, কুসংস্কার, রোগ-ব্যাধি ও ধর্মান্ধ শক্তি ধুয়ে মুছে যাক; বিদায়ী সূর্যের কাছে এই প্রণতি জানাবে বাঙালি। কিন্তু ফেলে আসা দিন, রাত জাগা পাখি হয়ে হরহামেশাই মনের গহীনে জানান দেবে নিজের উপস্থিতি।
‘চিত্রা নক্ষত্র হইতে চৈত্র হইল নাম/ বসন্ত বিদায় নিল, বর্ষ শেষ যাম।/ চড়কের উৎসব, গাজনের গান,/ সেই সঙ্গে বর্ষ হইল অবসান’। আর ‘সংক্রান্তি’ শব্দটি বাংলায় হুবহু এসেছে সংস্কৃত ‘সংক্রান্তি’ থেকে। এর অর্থ, আকাশে পরিক্রমণের পথে এক রাশিচক্র থেকে অন্য রাশিচক্রে সূর্যের আবর্তন। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় নতুন একটি সৌর বছর। কৃষিনির্ভর বাংলার সামাজিক জীবনে একদা এটি ছিল বৃহত্তম উৎসব। দার্শনিক এবং সাংস্কৃতিক উভয় প্রেক্ষাপটেই অসীম তাৎপর্য বহন করে চৈত্র সংক্রান্তি। কেননা এ দিনের মধ্য দিয়েই পূর্ণতায় উপনীত হয় ঋতুচক্রের আবর্তন, শুরু হয় নতুন ঋতুর আবাহন। গ্রামবাংলায় রকমারি সামাজিক আচারের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হয়।
চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে লোকমেলা বেশি হয় গ্রামেগঞ্জে। কালের বিবর্তনে চৈত্র সংক্রান্তির গুরুত্ব ও উদযাপন এখন অনেকটা ম্লান। তারপরও কোনো কোনো গ্রামে ও শহরে কিছু কিছু সংগঠন এ ঐতিহ্যকে লালন করে বলে আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠানের।
এবার নগরীতে ১৪২৮ সালকে বিদায় জানানোর আয়োজন করা হয়েছে শুধুমাত্র সিআরবির শিরীষতলায়। নববর্ষ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে আজ বিকাল ৪টায় শিরীষতলা মঞ্চে বেলুন উড়িয়ে ১৪২৮ বঙ্গাব্দের বিদায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। এ সময় নববর্ষ উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।