১৯ দিন পর কারামুক্ত বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল

মামলার পেছনে টিউশনের রেষারেষি? চাইলেন পরিবারের নিরাপত্তা

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ১১ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

শ্রেণিকক্ষের আলোচনার সূত্র ধরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল অবশেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মুন্সীগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা জজ মোতাহারাত আক্তার ভূইয়া গতকাল রোববার জামিন মঞ্জুরের পর বিকাল ৫টার পরে তিনি জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার আবুল বাশার বলেন, আমরা সোয়া ৪টার দিকে জামিননামার কাগজটা হাতে পাই। এরপর যাবতীয় ফরমালিটি শেষে রবিবার বিকাল ৫টা ২ মিনিটে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হৃদয়ের আইনজীবী শাহীন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ কারাগারের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, আদালত থেকে জামিনের কাগজপত্র যাচাই শেষে কারা কর্তৃপক্ষ শিক্ষককে মুক্তি দিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
এ সময় সেখানে হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদার, তাদের দুই সন্তান, আইনজীবীসহ গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ১৯ দিন কারাবাস শেষে বেরিয়ে পরিবারকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত ছিলেন হৃদয় মণ্ডল।
শিক্ষকদের মধ্যে রেষারেষি, প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে কেউ হয়তো ‘বিপথগামী’ শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়েছে এবং মামলা করিয়েছে বলে মনে করছেন হৃদয় মণ্ডল। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে সেটি মিথ্যা। এতে স্কুলের নানা বিষয় জড়িত থাকতে পারে। এ সময় রাষ্ট্রের কাছে পরিবারের নিরাপত্তা চান তিনি। এর আগে তার স্ত্রী ববিতা হাওলাদারও নিরাপত্তা চেয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ছাত্রদের গণিত ও বিজ্ঞান দুটো বিষয় পড়াতেন হৃদয় মণ্ডল। তার ওপর প্রথম হামলা হয় বছর দুয়েক আগে, টিউশনি থেকে বাসায় ফেরার পথে। সর্বশেষ মাস দেড়েক আগেও হামলাকারীরা হৃদয়ের গায়ে ইটের টুকরো ছুড়ে মারে, ঘরে দরজায় লাথিও মারে বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী ববিতা হাওলাদার।
গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির একটি অনির্ধারিত ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করছিলেন হৃদয় মণ্ডল। সেখানে একজন ছাত্র বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের তুলনা করে কিছু প্রশ্ন করে। হৃদয় মণ্ডল সেগুলোর জবাব দেন। ক্লাসের এক ছাত্র ওই আলোচনা মোবাইলে রেকর্ড করে এবং তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দুদিন পর কিছু ছাত্র ও স্থানীয় লোকজন মিলে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
ওই রাতেই স্কুলের অফিস সহকারী আসাদ বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা করলে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে, যা নানামুখী আলোচনার জন্ম দেয়। শিক্ষাবিদ, অধিকারকর্মী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এর প্রতিবাদে সরব হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকলেজ ছাত্রসহ নিহত ৪
পরবর্তী নিবন্ধ৭ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা জরিমানা