দিনভর নানা নাটকীয়তা শেষে গতকাল মধ্যরাতের পর পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারের পতন হয়েছে। অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে বিদায় করতে বিরোধীদের দরকার ছিল পার্লামেন্টের ৩৪২ আইনপ্রণেতার মধ্যে অন্তত ১৭২ জনের সমর্থন। অনাস্থা ভোটে ইমরানের বিরুদ্ধে পড়ে ১৭৪ ভোট। খবরে বলা হয়েছে, ফলাফল ঘোষণার আগেই হেলিকপ্টার করে ইসলামাবাদ ছেড়েছেন ইমরান খান। ইমরান খান ছিলেন পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী। তার ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে দেশটির নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীও তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারলেন না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরীফ পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে গতকাল ইমরান খানের ভাগ্যনির্ধারণী অনাস্থা ভোটকে ঘিরে গতকাল দিনভর পাকিস্তানে নানা নাটকীয়তা চলে। অধিবেশন শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায়। তবে অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণ পর দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তা মুলতবি করা হয়। এভাবে তিন দফা মুলতবি শেষে ইফতারের পর আবার অধিবেশন শুরু হয়। তখন জানানো হয়, রাত সাড়ে ৯টায় আবার অধিবেশন বসবে। রাতে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি শুরুর আগে নিজেদের পদ থেকে পদত্যাগ করেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। খবরে বলা হয়, পদত্যাগের আগে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে যান। ডন জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বিদেশি ষড়যন্ত্রে অংশ নিতে পারবেন না জানিয়ে পদত্যাগ করেন স্পিকার কায়সার। এরপর প্যানেল স্পিকার আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই পার্লামেন্টে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট শুরু হয়। এরপর সাদিক পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষের ঘণ্টা পাঁচ মিনিট ধরে বাজিয়ে ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে সদস্যদের এটি জানাতে বলেন। এরপর পরিষদ কক্ষের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি শুরু হয়। অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে থাকা সদস্যদের সাদিকে বাম দিকের গেইট দিয়ে বের হয়ে যেতে বলা হয়। এরপর তিনি প্রথা অনুযায়ী চার মিনিটের জন্য অধিবেশন মুলতবি করেন।
এর আগে অনাস্থা ভোটকে নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান আর্মির ত্রিপল ওয়ান ইনফন্ট্রি ব্রিগেড বা কুপ ব্রিগেড প্রধানমন্ত্রীর বাসভনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ইসলামাবাদের সড়কেও অবস্থান নিয়েছে ট্যাংক। আকাশে উড়ছে হেলিকপ্টার। সেনাদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পার্লামেন্ট হাউজ ও তার আশপাশের এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করেছে পাক পুলিশ।