তাইজুল-খালেদের বোলিংয়ে সমতায় দিন পার

পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের প্রথম দিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

সকালে ছন্নছাড়া বোলিংয়ে টাইগার বোলারদের ভাগ্যে হতাশাই জুটেছিল। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে ততই উজ্জ্বল হতে শুরু করে টাইগারদের পারফরমেন্স। মাঝের সেশন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। আর শেষ সেশনটায় বাংলাদেশ দলের বোলাররাই ছড়ি ঘুরিয়েছেন। বিশেষ করে তাইজুল ইসলামের কথা বলতে হবে। শেষ দুই সেশনে তিনটি বড় উইকেট শিকার করেছেন তিনি। আর শেষ বিকেলে পথের কাঁটা হয়ে থাকা টেম্বা বাভুমাকে ফিরিয়ে টাইগার শিবিরে স্বস্তি এনে দেন খালেদ আহমেদ। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে গতকাল শুক্রবার পোর্ট এলিজাবেথে টস জিতে ব্যাটিং করতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। দিন শেষে তারা ৫ উইকেট হারিয়ে ২৭৮ রান সংগ্রহ করেছে। বাংলাদেশের বোলারদের জন্য শুরুর দিনেই বিপদ হয়ে দাঁড়ায় আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্ত। প্রথম টেস্টের মতো দ্বিতীয় টেস্টেও যেন ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামেন দুই আম্পায়ার মারিস এরাসমাস ও আলাহুডেন পালেকার। প্রথম দিনেই দুবার রিভিউ নিয়ে উইকেট আদায় করেছে বাংলাদেশ। দুবারই বোলার ছিলেন তাইজুল ইসলাম।
দ্বিতীয় ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। ব্যর্থ ওপেনার সাদমান ইসলামের পরিবর্তে দলে ফিরেন অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল। চোটে পড়া তাসকিন আহমেদের জায়গায় আসেন স্পিনার তাইজুল। অপরদিকে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে খেলতে নামে স্বাগতিকরা। ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু করেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার এলগার ও সারেল এরউই। ৭২ বলে ৫২ রানের জুটি গড়েন তারা। দ্বাদশ ওভারের শেষ বলে জুটি ভাঙেন বাংলাদেশের পেসার খালেদ আহমেদ। উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ২৪ রানে সাজঘরে ফেরেন সারেল। এরপর এলগারকে সঙ্গ দেন কিগান পিটারসেন। একপ্রান্তে থিতু হয়ে ব্যাট করে ৬৬ বলে ৬ বাউন্ডারিতে অর্ধশতক তুলে নেন এলগার। তার ব্যাটে ভর করেই প্রথম সেশনে ১০৭ রানের সংগ্রহ পায় দ. আফ্রিকা। দ্বিতীয় সেশনেও দারুণ ব্যাট করছিলেন এলগার। ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। তবে উড়তে থাকা এলগারকে মাটিতে নামান তাইজুল। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা তাইজুলের কুইকারে পিছিয়ে মারতে চেয়েছিলেন এলগার। কিন্তু তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসে জমা হয়। ফলে শেষ হয় এলগারের ৮৯ বলে ৭০ রানের ইনিংস। সেই সঙ্গে ভাঙে কিগান পিটারসেনের সঙ্গে তার ৮১ রানের জুটি। এলগার থামলেও পিটারসেন ছুটতে থাকেন আপন গতিতে। এবাদতের এক ওভারে টানা ৩ চার হাঁকিয়ে তুলে নেন ফিফটিও। এর কিছুক্ষণ পর নামে বৃষ্টি। খেলাও বন্ধ থাকে। খেলা শুরু হলে বাংলাদেশি বোলারদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান পিটরসেন। এলগারের মতো অতো আগ্রাসী না হলেও সুযোগ পেলেই বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছিলেন তিনি। বৃষ্টির আগে তুলে নিয়েছিলেন ফিফটিও। তবে তার রান ৭০-এর ঘরে পৌঁছানোর আগেই আঘাত হানেন তাইজুল। তার গুড লেন্থের বলে এগিয়ে এসে খেলেছিলেন পিটারসেন। তবে বল ব্যাট স্পর্শ না করে প্যাডে লাগে। লেগ বিফোরের আবেদন করলেও আম্পায়ার সাড়া দেননি। তবে রিভিও নিলে ফলাফল বাংলাদেশের পক্ষে আসে। ১২৪ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন পিটারসেন।
পিটারসেনের বিদায়ের পরও স্বস্তি মেলেনি বাংলাদেশি বোলারদের। কারণ টেম্বা বাভুমা। পিটারসেনের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি গড়া এই ব্যাটার সঙ্গীর বিদায়ের পর নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেন। রায়ান রিকেলটনকে নিয়ে দুর্দান্ত এক জুটি গড়ার পাশাপাশি তিনি টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ফিফটি তুলে নেন। আগের ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৯৩ রান করা এই ডানহাতি ব্যাটার ১১৩ বলে ফিফটি করার পর আরও সংযমী ব্যাটিং করেন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন রিকেলটন। তাদের জুটিতে আসে ৮৩ রান। রিকেলটনকেও শেষ পর্যন্ত বিদায় করেন তাইজুল। দিনের শেষ ভাগে তাইজুলের বল রিকেলটনের গ্লাভস স্পর্শ করে লেগ স্লিপে থাকা ফিল্ডার ইয়াসিরের মুঠোয় জমা হলে ক্যাচ আউটের আবেদন করে বাংলাদেশ দল। কিন্তু আম্পায়ার এরাসমাস সরাসরি তা নাকচ করে দেন। তবে তাইজুল ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। অধিনায়ক মোমিনুল রিভিও নেন। রিপ্লেতে দেখা যায় বল রিকেলটনের গ্লাভসের উপরিভাগে লাগে। ফলে সিদ্ধান্ত বদলে আউট দেন আম্পায়ার। ৮২ বলে ৪২ রান করে বিদায় নেন রিকেলটন।
শেষ বিকেলে প্রোটিয়া শিবিরে বড় আঘাত হানেন খালেদ আহমেদ। টাইগার পেসারের বাউন্স ব্যাকফুটে খেলতে চেয়েছিলেন বাভুমা। কিন্তু বল তার ব্যাট ছুঁয়ে জমা হয় স্লিপে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর তালুতে। দারুণ এই ক্যাচে বিদায় নেন ৬৭ রানের ইনিংস খেলা বাভুমা। দিনের প্রথম ও শেষ, দুটি উইকেটের মালিক খালেদ। মাঝের ৩টি তাইজুলের। দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার কাইল ভেরেইনে ১০ ও উইয়ান মুলডার ০ রানে অপরাজিত আছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএখনও চড়া মাছ-মাংস ও সবজির বাজার
পরবর্তী নিবন্ধচবির শাটল ট্রেনে প্রতিদিনই ঘটছে পাথর নিক্ষেপ