কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বদলে দিতে পারে ভবিষ্যৎ যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি

শেখ বিবি কাউছার | মঙ্গলবার , ৫ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

যুদ্ধ কামনা করে এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। তারপরও অতীতে অনেক যুদ্ধ হয়েছে, হচ্ছে, সামনেও হবে। অতীতের দিকে একটু ফিরে যায়। দেখি সে সময় রাজা, সুলতান, সম্রাটদের যুদ্ধ পরিচালনার ‘কৌশল’ কি ছিল? অনেক সময় কম সৈন্য নিয়েও যুদ্ধে জয়ী হয়েছে এমন ঘটনাও কিন্তু কম নেই ইতিহাসের পাতা !
৭১২ খ্রিঃ মুহাম্মদ বিন কাসিম রাজা দাহিরকে পরাজিত করার জন্য ব্যবহার করেন সবচেয়ে আধুনিক অস্ত্র ‘মানজানিক’’ বা ‘বালিস্ত’। এটি ছিল এক প্রকার প্রস্তর- নিক্ষেপক কামান। অবাক করা ব্যাপার হলো এ যন্ত্র চালাতেই লাগতো পাঁচশত লোক। বড় বড় দুর্গ, রাজপ্রাসাদ, অট্টালিকা ধ্বংস করা হতো এ যন্ত্রের মাধ্যমে। এ যুদ্ধে মুহাম্মদ বিন কাসিম জয় লাভ করেন।
তরাইনের ২য় যুদ্ধে পৃথ্বীরাজের সৈন্য সংখ্যা ছিল মুহাম্মদ ঘুরীর সৈন্য সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু সুলতান মুহাম্মদ ঘুরী একটা বিশেষ কারণে এ যুদ্ধে জয় লাভ করেন। তাহলোঃ যথাযথ কৌশল প্রয়োগ। ঘুরীর রণকৌশল ছিল পৃথ্বীরাজের তুলনায় অনেক উন্নত।
এবার আসি মুঘল বংশের প্রতিষ্ঠাতা জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের কথায়। আপনি জেনে অবাক হবেন মাত্র ১১ বছর বয়সে বাবর উত্তরাধিকার সূত্রে ফরগণা রাজ্যের অধিপতি হন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে তিনি দিল্লি সালতানাতের শেষ সুলতান ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে দিল্লিতে মুঘল বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। এ যুদ্ধ জয়ী হওয়ার পেছনে আছে কিন্তু ‘কৌশল’। কী সেই কৌশল? বাবরের কৌশল ছিল পানিপথের প্রথম যুদ্ধে সর্বপ্রথম কামানের ব্যবহার এবং সাথে ছিল মাত্র ১২ হাজার দক্ষ ও শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী। যেখানে ইব্রাহিম লোদির সৈন্যসংখ্যার তুলনায় সম্রাট বাবরের সৈন্যসংখ্যা কিছুই না। কিন্তু সম্রাট বাবরের কৌশলের কাছে পরাজয় ঘটে দিল্লি সালতানাতের।
এবার আসুন জেনে আসি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিবে কে? এখন আর কামান, গোলা, বারুদ কিংবা হাতি, ঘোড়া এগুলোর ব্যবহার নেই। যুগের সাথে সাথে বদলে গেছে রণ অস্ত্রের ধরণও। সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে, রাশিয়া যে আধুনিক অস্ত্রগুলো ব্যবহার করছে তার মধ্যে অন্যতম ‘হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র’’( উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র যা শব্দের চেয়ে ৫-২৭ গুণ দ্রুত গতিতে চলে)। এর নাম
‘কিনঝাল’। কিনঝালের আনুষ্ঠানিক ব্যবহারও এই প্রথম। এর আগে কোনো যুদ্ধে বা সামরিক অভিযানে এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কথা স্বীকার করেনি রুশ সরকার।
আগেই বলেছি যুদ্ধ কেউ আশা করে না কিন্তু শান্তি আশা করে সবাই! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তিই বদলে দিবে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি। দিচ্ছে কিন্তু সেটাই। আগামী যুদ্ধ কৌশলে বিরাট ভূমিকা রাখবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা- এআই। তারা মনে করছেন মানুষ এবং যন্ত্র দুয়ের বুদ্ধিমত্তা একযোগে কাজে লাগালে শত্রুশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিকল্পনায় এগিয়ে থাকার সুযোগ পাওয়া যাবে। বর্তমানে পরাশক্তি দেশগুলো যেমনঃ চীন, জাপান, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরনো প্রথায় যুদ্ধ সরঞ্জামের পেছনে ব্যয় বরাদ্দ হ্রাস করে তা নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করবে। এবং ঐগুলো দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করবে। তবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। একটি হলো শত্রুপক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠ পর্যায়ের পরামর্শ, অন্যটি হলো, সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ। এ বিষয় গুলো অনেক ক্ষেত্রে যুদ্ধ বা সংঘাত ঠেকাতে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
লেখক: প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানিয়ে চললে বড়ই সুন্দর এই জীবন
পরবর্তী নিবন্ধজন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণে জটিলতা!