রাণী রাসমণি ঘাট : নগরীর দক্ষিণ কাট্টলীর ঐতিহ্যবাহী রাণী রাসমণি ঘাটে সার্বজনীন মহাতীর্থ বারুণী স্নান উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে গতকাল বুধবার মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে বারুণী স্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল থেকে রাণী রাসমণি ঘাটে এই পুণ্যস্নানে অংশ নেন হাজার হাজার সনাতনী ভক্তবৃন্দ। দূর-দূরান্ত থেকে ঋষি, মহারাজ, বৈষ্ণব, সাধু-সন্ন্যাসীরা স্নান উৎসবে যোগ দেন। এই উপলক্ষে রাণী রাসমণি ঘাটে আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল-গঙ্গা পূজা, বৈষ্ণব সেবা, ঋষি সমাবেশ, শ্রীমদ্ভগবত গীতাপাঠ, ধর্ম মহাসম্মেলন ও মহাপ্রসাদ বিতরণ।
বারুণী স্নান উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি ডা. বিজন কান্তি নাথের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মিলন কান্তি দাশের সঞ্চালনায় ধর্মসম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি উত্তম কুমার শর্মা, সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) মো. ওয়ারিশ, ১১নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর অধ্যাপক মো. ইসমাইল, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পাট বস্ত্র বিষয়ক সম্পাদক আশীষ কুমার সিংহ, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু, আওয়ামী লীগ নেতা এরশাদুল আমীন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন টুটুল প্রমুখ। গীতাপাঠ করেন অমিত সেন।
ধর্মসম্মেলনে বক্তারা বলেন, জীবের মহামুক্তির লক্ষ্যে এই পূণ্যস্নান। ঋষি-সন্ন্যাসীদের সান্নিধ্য পাওয়া যায় এই স্নানে এসে। এখানে নানান শ্রেণী ও পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকে। বৈষ্ণব মতানুসারে, ব্রহ্মা তাঁর কমন্ডুলুর জল নিয়ে বিষ্ণুর পদ ধৌত করেছিলেন। সে থেকে গঙ্গার জন্ম হয়। আর গঙ্গার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রতিবছর মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে সনাতনীরা পূণ্যস্নানে মিলিত হয়। পরিষদ নেতৃবৃন্দ আগত তীর্থ যাত্রীদের সহায়তায় নিয়োজিত র্যাব, পুলিশ, আনসার ও সেবকদের ধন্যবাদ জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

রাউজান : রাউজানের উত্তরের মন্দাকিনী মন্দির ও দক্ষিণের গঙ্গা মন্দির এলাকায় গতকাল বুধবার বারুণী স্নান ও পূজা শেষ হয়েছে।
রাউজান প্রতিনিধি জানান, দক্ষিণের গঙ্গা মন্দিরে এ উপলক্ষ্যে তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে রাতদিন চলছে নামকীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ। গতকাল উপজেলার দুটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি সেখানে সনাতনী নেতৃবৃন্দ ও পূণ্যার্থীদের সাথে কথা বলেন। মন্দির ও স্নানসহ ধর্মকর্ম পালনে সুবিধা অসুবিধা ঘুরে দেখেন। বিদ্যমান সমস্যাসমূহ সমাধানে আশ্বাসসহ অনুদান প্রদান করেন। এ সময় সাংসদের সাথে ছিলেন পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও ইউপি চেয়ারম্যানগণ।
হাটহাজারী : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, উপজেলার ১নং ফরহদাবাদ ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মন্দাকিনী গ্রামে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দুইদিনব্যাপী বারুণী স্নান গতকাল মহাসমারোহে সম্পন্ন হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে মেলা উদযাপনের জন্য কমিটি ও প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
জানা যায়, এ উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় সনাতনী ও উপজাতী ত্রিপুরা সমপ্রদায় প্রত্যেক বছরের ন্যায় মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে সীতাকুণ্ড পাহাড়ের জলপ্রপাত থেকে উৎপত্তি হওয়া মন্দাকিনী খালের পানিতে স্নান করতে আসেন। এতে স্নান করলে পূণের অধিকারী হতে পারে বলে সনাতনী সমপ্রদায় বিশ্বাস করেন। মেলায় সনাতনী সমপ্রদায় ছাড়াও নানা ধর্মের লোকজনের সমাগম ঘটে। উদার মানসিকতার লোকজন এ মেলাকে সমপ্রীতির ও বন্ধুত্বের মেলা বলে আখ্যায়িত করেন। মেলার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। সরকারিভাবে মন্দাকিনী খালে পাকা ঘাটলা নির্মাণের কারণে স্নান তর্পনের জন্য সুবিধা হওয়ায় উপস্থিত পূর্ণ্যার্থীরা মহাখুশি। এবার খালে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকায় স্নানে কোনো অসুবিধা হয়নি।
মেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে গৌবিন্দ প্রসাদ মহাজন ও পাঁচকড়ি শীল জানান, মন্দাকিনি মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ত্রিপুরা ও সনাতন সমপ্রদায়ের বিপুল সংখ্যক পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটে। সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে বারুণী স্নান, পূজা, তর্পণসহ আলোচনা সভা, ধর্মীয় কীর্তন, সাংস্কৃতিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাছাড়া এবার মেলায় আগতদের জন্য মহাপ্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়।
হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, মন্দাকিনী স্নানে ও মেলার শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা বহিনী দায়িত্ব পালন করেছে।
পারকি সৈকত : আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকতে গতকাল সনাতন ধর্ম অনুসারীদের ঐতিহ্যবাহী বারুণী স্নানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা যায়, আনোয়ারাসহ বিভিন্ন এলাকার সনাতন ধর্ম অনুসারীরা বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ বারুণী স্নানে অংশ নেন। চন্ডীপাঠ, গীতাযঞ্জ, মহা প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে এ স্নানোৎসবের আয়োজন হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বারশত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম কাইয়ুম শাহ, সিআইপি দুদুল কুমার দত্ত, উদযাপন কমিটির সভাপতি সমর কান্তি নাথ, সাধারণ সম্পাদক কল্লোল সেন।
বাঁশখালী : বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, পাপকে বিসর্জন দিয়ে মুক্তি পেতে বারুণী পূণ্য স্নানে অংশ নিয়েছেন বাঁশখালীর বঙ্গোপসাগর উপকূলের খানখানাবাদ, বাহারছড়া ও গন্ডামারায় পয়েন্টে। বুধবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এ পূণ্য স্নান উৎসব। সাগর উপকূলে মেলা প্রানবন্ত করতে বসেছে নাগরদোলা, পুতুল নাচ, আর পরসা বসিয়েছে শাখা সিদুর, তালপাখা, শিশু খেলনা, প্রসাধনী, মিষ্টির দোকানের। গৃহস্থলীর সব কিছুই মিলছে এই মেলায়। বিভিন্ন বয়সির ধর্মপ্রাণ ও পূণ্যার্থীর কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা।
রামগড়-সাবরুম সীমান্ত : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, ঐতিহ্যবাহি বারুণী স্নান উৎসবকে ঘিরে বুধবার বাংলাদেশের রামগড় ও ভারতের সাবরুম সীমান্তে ফেনীনদীতে দুদেশের পূণ্যার্থীদের সমাগম ঘটে। সীমান্ত পারাপার বন্ধ থাকায় নদীর মাঝে ফিতা টেনে ভারতীয় সীমান্ত বাহীনি বিএসএফের সর্তক অবস্থানের কারণে নিজ নিজ দেশের অংশে পূজা ও স্নান করে ফিরে গেছেন পূণ্যার্থীরা।
বারুণী মেলা শুধু বাঙ্গালী হিন্দু সমপ্রদায়ের মধ্যে সীমিত নয় বরং ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা, মুসলিমসহ সকল সমপ্রদায়ের মানুষের সমাগম ঘটে এ মেলায়।
রামগড় ৪৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল আনোয়ারুল মাজহার বলেন, ঐহিত্যবাহী বারুণী স্নানোৎসবস্থানে নির্দিষ্ট অংশে পূণ্যার্থীদের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনে কোনো ধরনের বাধা না থাকলেও বিএসএফ ও বিজিবি সীমান্ত পারাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকে।










