‘কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রথমে ইউনিট কমিটি গঠন করতে হবে। এরপর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠন করা হবে ওয়ার্ড এবং থানা কমিটি। ইউনিট কমিটির আগে সদস্য সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। নগর বিএনপিকে গত অক্টোবর মাসে এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছিল কেন্দ্র। তখন কেন্দ্র থেকে সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যে একটি ‘তথ্য সংগ্রহ ফরম’ও সরবরাহ করে। এর প্রেক্ষিতে সদস্য সংগ্রহ ফরম ছাপায় নগর বিএনপি। পরবর্তীতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাংগঠনিক বিষয়ে প্রতিবেদন সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করলে আটকে যায় পুরো প্রক্রিয়া। অবেশেষে দীর্ঘ পাঁচ মাস পর পুরনো সে প্রক্রিয়া নতুন করে শুরুর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন নগর বিএনপির আওতাভুক্ত সাংগঠনিক কমিটি গঠন কার্যক্রম তদারকের দায়িত্ব পাওয়া কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান। অনেকটা গোপনে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল তিনটা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নগরের একটি রেস্টুরেন্টে মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত দেন তিনি।
জানা গেছে, নগরের আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে গত ২১ মার্চ পৃথক পাঁচটি উপ-কমিটি করে দেন তারেক রহমান। গঠিত উপ-কমিটির মনিটরিংয়ের জন্য আহমেদ আজম খানকে প্রধান করে আরেকটি তদারক কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল উপ-কমিটির সদস্যদের নিয়ে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেন তিনি। এতে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ ও জালালুদ্দিন মজুমদার এবং পাঁচ উপ-কমিটি’র প্রধান এস এম সাইফুল আলম (পাহাড়তলী, খুলশী ও হালিশহরের দায়িতপ্রাপ্ত), আলহাজ্ব এম এ আজিজ (কোতোয়ালী, চকবাজার ও বাকলিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত), কাজী বেলাল (ডবলমুরিং-সদরঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত), নাজিমুর রহমান (চান্দগাঁও, বায়েজিদ ও পাঁচলাইশের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও এরশাদ উল্লাহ (বন্দর পতেঙ্গা ও ইপিজেড থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত) উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আহমেদ আজম খান সবাইকে অবহিত করে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেয়া সিদ্ধান্তগুলোই তিনি তুলে ধরছেন। সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, প্রথমে নগরের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের প্রতিটির আওতায় তিনটি করে ইউনিট কমিটি গঠন করা হবে। অর্থাৎ মোট ১২৯টি ইউনিট কমিটি গঠন করা হবে। তবে এসব ইউনিট কমিটি গঠন করা হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে। এ জন্য প্রতিটি ইউনিট থেকে কমপক্ষে ১০০ জন করে সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। সদস্য সংগ্রহ যারা পূরণ করবেন তাদের ভোটে ইউনিটের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হবে। নির্বাচিতরা পরে ২১, ৩১ বা ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ইউনিট কমিটি গঠন করবেন। এর পর ইউনিট নেতৃবৃন্দের ভোটের মাধ্যমে ওয়ার্ড এবং ওয়ার্ড নেতৃবন্দের ভোটে থানা কমিটি গঠন করা হবে। এ পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা হবে তিন মাসের মধ্যে। তবে ইউনিট কমিটি গঠনের জন্য সময়সীমা বেধে দেয়া হয় ১৫ দিন।
সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যে আহমেদ আজম খান উপ-কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে ফরম হস্তান্তর করেন। যদিও এসব ফরম পাঁচ মাস আগে নগর বিএনপির উদ্যোগে ছাপানো হয়েছিল। গতকালকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিএনপির কোনো অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ সদস্য ফরম পূরণ করতে পারবে না। তবে নগর, থানা ও ওয়ার্ড বিএনপিতে বর্তমানে পদে থাকা নেতৃবৃন্দকেও সদস্য ফরম পূরণ করতে হবে।
জানা গেছে, সদস্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবীসহ সুধীজন হিসেবে পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে উপ-কমিটির প্রধানকে যোগাযোগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সাংগঠনিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় যে সাংগঠনিক টিম গঠন করে দিেেয়ছিলেন তারা কাজ শুরু করেছে। তাদের হাতে সদস্য সংগ্রহ ফরম তুলে দেয়া হয়।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদত হোসেন আজাদীকে বলেন, প্রতিটি ইউনিট থেকে কমপক্ষে একশ জন সদস্য সংগ্রহ করা হবে। তবে যেসব এলাকায় ভোটার সংখ্যা বেশি সেখানে সদস্য সংখ্যাও বেশি হতে পারে। তিনি বলেন, তৃণমূল থেকে দলকে শক্তিশালী করার জন্য আগে ইউনিট কমিটি গঠন করা হবে। একটি উপ-কমিটির প্রধান ও নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম আজাদীকে বলেন, ভারাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় যে নির্দেশনা দিয়েছেন তার শুভ সূচনা হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামী-আন্দোলন সংগ্রামে সাফল্য আসবে।