প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ স্থাপনা, বসতি উচ্ছেদে অভিযান চালাবে প্রশাসন এবং সেটি আগামী রোজার ঈদের পর পরই। এ জন্য রেলওয়েসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে দিতে হবে অবৈধ স্থাপনার তালিকা। গতকাল বিকালে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৩ তম সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন এ কথা জানিয়েছেন। এ সময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. নাজমুল আহসান, রেলওয়ে, সিটি করপারেশন, ফায়ার সার্ভিস, পিডিবিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বর্ষা ঘনিয়ে এলেই চট্টগ্রামের পাহাড় নিয়ে একটা আতংক দেখা দেয়। পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা, বসতি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও সামনে চলে আসে। আমরা একটা স্থায়ী সমাধান চাচ্ছি। বাইপাস রোডের (বায়েজিদ ফৌজদারহাট লিংক রোড) ৯০ ডিগ্রি খাড়া পাহাড় সোজা করতে হবে। এ জন্য সিডিএসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা প্রয়োজন। বর্ষায় কারো মৃত্যু হোক তা আমরা চাই না। সবার সহযোগিতা পেলে এ বছর আমরা পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ স্থাপনা ও বসতি সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করতে সক্ষম হব। তিনি বলেন, বায়েজিদ ফৌজদারহাট লিংক রোড বর্ষার জন্য আতংকের। পাহাড় ধ্বসে মাটি রাস্তায় চলে আসে। রাস্তার পাশেই খাড়া হয়ে আছে পাহাড়। এ রোড দিয়ে সাধারণের চলাচল রয়েছে। সিডিএ’র প্রতিনিধি থাকলে ভালো হোতা। যাইহোক পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিডিএ’র সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সভায় পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি বলেন, গেল এক বছরে পাহাড় দখলকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ৯৯ টি মামলা করেছে। এর মধ্যে ৯৭ টি মামলায় আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনুমোদনের তুলনায় ৬৯ হাজার ২১৯ দশমিক ৭২০ ঘন ফুটের বেশি পাহাড় কাটার বিষয় প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ২৯ জানুয়ারি সিডিএকে ১০ কোটির বেশি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বিশাল অংকের জরিমানার পরও পাহাড় এত খাড়া কেন, এটা তো সোজা হওয়ার কথা।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব নাজমুল আহসান বলেন, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীরা উচ্ছেদ ঠেকাতে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছে। আমরা ইতিমধ্যে জবাবও দিয়েছি। বর্তমানে বিষয়টি শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
সভা থেকে জানা যায়, গত বছর বর্ষার সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে গঠিত সাব-কমিটি বায়েজিদ লিংক রোড থেকে ৩৭০ টি পরিবার, ইস্পাহানি মোড়ের আকবরশাহ পাহাড় থেকে ৬টি পরিবার, এ কে খান পাহাড় থেকে ৪৭টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এছাড়া, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন পাহাড় থেকে অবৈধভাবে বসবাসরত ২৫ টি পরিবারকে উচ্ছেদ করেন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১১ জুন নগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি পাহাড় ধ্বসে, দেয়াল ভেঙে, পানিতে ডুবে এবং বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ১২৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলায় ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। ২০১৫ সালের ২ জুন পাহাড় মালিক, সংস্থার সাথে অনুষ্ঠিত সভার আলোকে ইস্পাহানি পাহাড় এবং জেমস ফিনলে পাহাড়ের নাম ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ২৮ টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের তালিকা করা হয়।