শীত যেতে না যেতেই সারা দেশের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলো ও আশপাশের কটেজগুলোতেও মশার উপদ্রব তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। রাতে তো বটেই, দিনেও মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি দিনেও মশারি ছাড়া ঘুমানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। মশার যন্ত্রণায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মারাত্মক ব্যাঘাত হচ্ছে। তবে মশা নিধনের কোনো উদ্যোগ বা জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে। দ্রুত মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত রোগ-জীবাণু। এসব মশার মধ্যে ক্ষতিকর মশার উপস্থিতি থাকতে পারে।
পাহাড় আর গাছপালায় বিশাল ক্যাম্পাসে ১২টি আবাসিক হল, ক্যাম্পাসের আশেপাশের মেস-কটেজগুলোতে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর বসবাস। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকেন ক্যাম্পাসের কোয়ার্টার, কলোনী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাসায়। যারা প্রতিনিয়ত মশার যন্ত্রণায় সময় পার করছেন। এক মিনিটও যেন শান্তি নেই মশার জন্য।
শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জুয়েল রানা বলেন, মশার উপদ্রব বেড়েছে আশংকাজনক হারে। হল, ক্লাসরুম, লাইব্রেরি ও ঝুপড়ি সবখানেই শুধু মশা আর মশা। আমাদের অনেকেই মশার কামড়ে অসুস্থ হয়েছে। সামনেই ডেঙ্গুর মৌসুম। এর আগেই কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সন্ধ্যা হলেই দরজা-জানালা আটকে বসে থাকি। কয়েল জ্বালায়, তবু মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা মেলে না। মশার কামড়ে ঠিকমত পড়ালেখাও করতে পারছি না। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে মশা নিধনের কোনো পদক্ষেপ এখনো নিতে দেখিনি, এখনো কোথাও মশার ঔষধ ছিটাতে দেখিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, হল ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ঘুরে করে দেখা যায়, হল ও সড়কের পাশের ড্রেন, ডোবাসহ নানা জায়গায় জমে থাকা পানি ও ঝোপঝাড়ে মশার ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে, তৈরি হচ্ছে লার্ভা। গত বছরের আগস্ট মাসে চবির একদল গবেষক চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে মশার ক্ষতিকর লার্ভার সন্ধান পেয়েছে। এসব মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে শতভাগ।
সেই গবেষক দলের সদস্য সচিব ও চবি উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক আজাদীকে বলেন, গত বছর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেল ক্রসিংয়ের পাশে একটি বাড়ি ও পুরাতন শামসুন নাহার হল (উত্তর ক্যাম্পাস) থেকে ক্ষতিকর মশার লার্ভা পেয়েছি। এখন ক্ষতিকর মশার উপস্থিতি আছে কিনা, সেটা গবেষণার বিষয়। যদি থেকে থাকে তাহলে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
আলাওল হলের প্রভোস্ট মোহাম্মদ ফরিদুল আলম আজাদীকে বলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসন আমাদের এখনো কিছু জানায়নি। তবে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। পুরোপুরি মশা নিধন করা না গেলেও কিছুটা কমানো সম্ভব। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।












