ইউক্রেনে কী কী সামরিক ভুল করেছে রাশিয়া

| রবিবার , ২০ মার্চ, ২০২২ at ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী থাকার পরও ইউক্রেনে হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়াকে অতটা শক্তিধর বলে মনে হচ্ছে না। যুদ্ধক্ষেত্রে এ পর্যন্ত তাদের যা পারফরম্যান্স, তা পশ্চিমা অনেক সমর বিশ্লেষককেই হতবাক করছে, একজন তো একে ‘হতাশাজনক’ বলেও অভিহিত করেছেন। রাশিয়ার বাহিনীর অগ্রগতি এখন অনেকটাই যেন থমকে আছে। যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের, সেখান থেকে তারা সামলে উঠতে পারবে কি না, কেউ কেউ তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। কয়েকদিন আগে নেটোর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছিলেন, এটা স্পষ্ট যে রাশিয়ানরা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি, সম্ভবত শেষ পর্যন্তও পারবে না। খবর বিডিনিউজের। কেন এমনটা হল? কোথায় ভুল করলো তারা? বিবিসির এক প্রতিবেদক ঊর্ধ্বতন পশ্চিমা সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সেই ভুলগুলোই চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন।
ভ্রান্ত ধারণা : রাশিয়ার প্রথম ভুল হচ্ছে তারা ইউক্রেনের তুলনামূলক ছোট সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা ও প্রতিরোধের শক্তিকে খাটো করে দেখেছিল। রাশিয়ার বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট ৬ হাজার কোটি ডলারের বেশি, পক্ষান্তরে ইউক্রেন খরচ করে ৪০০ কোটি ডলারের সামান্য বেশি। ইউক্রেনের প্রতিরোধ সক্ষমতা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার পাশাপাশি রাশিয়া এবং আরও অনেকেই মস্কোর সামরিক শক্তিকে অতিরিক্ত বড় করে দেখছিলেন। রাশিয়ার টি-১৪ আর্মাটাকে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ট্যাংক বলেও মনে করা হয়, মস্কোর রেড স্কয়ারে ভিক্টরি ডে’র এক কুচকাওয়াজে সেটি দেখানোও হয়েছিল, অথচ যুদ্ধক্ষেত্রে ওই ট্যাংকের টিকিটিরও দেখা মিলছে না। ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত রাশিয়া যেসব যুদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে, তার মধ্যে আছে পুরনো টি-৭২ ট্যাংক, আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার, কামান ও রকেট লঞ্চার। হামলার শুরুতে আকাশযুদ্ধে রাশিয়াকেই এগিয়ে রাখা হয়েছিল, তারা সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের তিনগুণেরও বেশি জঙ্গিবিমান জড়ো করেছিল। অনেক সমর বিশ্লেষকেরই অনুমান ছিল, রুশরা দ্রুত ইউক্রেনের আকাশের দখল নিয়ে নেবে, কিন্তু সেটা হয়নি। ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষাকে এখনও অনেকটাই কার্যকর মনে হচ্ছে, যা যুদ্ধে রাশিয়ার দ্রুত অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে।
ক্ষয়ক্ষতি ও মনোবল হারিয়ে ফেলা : ইউক্রেনে এই হামলা চালানোর জন্য রাশিয়া প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার সেনা জড়ো করেছিল, যার বেশিরভাগ অংশ এখন যুদ্ধেই। কিন্তু এরই মধ্যে মস্কো তাদের মোতায়েন করা সৈন্যের ১০ শতাংশের মতো হারিয়ে ফেলেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের পক্ষে কার কত হতাহত, সে সম্বন্ধে এখন পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য কোনো সংখ্যা পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনের দাবি, তারা তিন সপ্তাহেই ১৪ হাজার রুশ সেনাকে হত্যা করেছে, তাদের এই ভাষ্য যুক্তরাষ্ট্রও বিশ্বাস করছে না। ওয়াশিংটনের অনুমান, রাশিয়া এখন পর্যন্ত ৭ হাজারের মতো সেনা হারাতে পারে।
রসদ ও সরঞ্জাম : মৌলিক কিছু বিষয় নিয়েও ভুগছে রাশিয়া। পুরনো একটি সামরিক প্রবাদে বলা হতো, নবিসরা কথা বলে কৌশল নিয়ে, পেশাদাররা হিসাব করে সরঞ্জাম। রাশিয়া যে এদিকে খুব বেশি মনোযোগ দেয়নি, তথ্যপ্রমাণ তা-ই বলছে। তাদের সাঁজোয়া বহরে জ্বালানি, খাদ্য ও গুলির সংকট দেখা দিয়েছে। যানবাহন ভেঙে পড়ায় সেগুলো রেখেই এগোতে হয়েছে। রাশিয়া হয়তো যুদ্ধে ব্যবহারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র সংকটেও ভুগছে, ধারণা পশ্চিমা কর্মকর্তাদের। উল্টোদিকে ইউক্রেন বাহিনীর কাছে পাশ্চিমাদের পাঠানো অস্ত্রের একের পর এক চালান যাচ্ছে, যা কিয়েভের সেনাদের মনোবলও চাঙা করে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে আরও ৮০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের এবারের প্রতিশ্রুত অস্ত্রের মধ্যে ট্যাংক ও বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ছোট সহজে বহনযোগ্য ‘কিলার’ ড্রোনও আছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ছোটখাট বিস্ফোরকও নিয়ে যেতে পারবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের হুঁশিয়ারি
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে কুকুরের কামড়ে নারীসহ আহত ৭