এক বছরের ব্যবধানে দেশে চা উৎপাদন এক কোটি কেজিরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে চা চাষের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দশ বছরে চা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে অন্তত ৩০ হাজার একর জমিতে। এর পরিমাণ আরো বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন চা বাগানে নানা কার্যক্রম চলছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চা রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েও নানা ধরনের কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।
চা বোর্ডের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, করোনাকালে দেশে চা উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এক কোটি কেজিরও বেশি চা উৎপাদন বৃদ্ধি পুরো সেক্টরকে বেশ আশাবাদী করে তুলেছে। ১৬৭টি বাগান জুড়ে চলছে উৎপাদনের মহাযজ্ঞ। ২০২১ সালে দেশে ৯ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার ৬শ’ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ১ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার কেজি বেশি। ২০২০ সালে দেশে ৮ কোটি ৬ লাখ ৩ হাজার ৪শ’ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬ হাজার ৯শ’ কেজি। গত বছর করোনার ভয়াল সময়েও দেশে চা উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। দেশের চা বাগানগুলোতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চা সেক্টরের জন্য সরকারের আর্থিক প্রণোদনা, মন্ত্রণালয় এবং চা বোর্ডের মনিটরিং, পরামর্শ প্রদান, মালিক শ্রমিকদের নিরলস চেষ্টা উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে বাগান সম্প্রসারণ, ক্লোনের মাধ্যমে ভালো জাতের চারা তৈরি এবং রোপণ, রোগ প্রতিরোধী চারা রোপণ, বেশি ফলনের চারা তৈরি করে বাগান সম্প্রসারণ, পানির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে চা চাষ অতীতের গৌরব ফিরে পেতে শুরু করেছে। এক বছরের ব্যবধানে এক কোটি কেজিরও বেশি চা উৎপাদন বৃদ্ধি এ সব কর্মকাণ্ডেরই সুফল বলে সূত্র জানিয়েছে। ব্রিটিশদের হাত ধরে দেড়শ’ বছরেরও বেশি সময় আগে ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামেই চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৮৫৪ সালে সিলেট অঞ্চলে চা চাষ শুরু হয়। দেশে ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। এরমধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় চা বাগানসহ চট্টগ্রামে বাগান রয়েছে ২২টি। তবে সবচেয়ে বেশি বাগান রয়েছে মৌলভীবাজারে ৯১টি। এ ছাড়া হবিগঞ্জে ২৫টি, সিলেটে ১৯টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, রাঙামাটিতে ২টি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১টি চা বাগান রয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলের পাশাপাশি সমতল ভূমিতেও চা চাষ নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এরই প্রেক্ষিতে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে চায়ের জমি। বর্তমানে দেশে ১ লাখ ৬২ হাজার একর ভূমিতে চা চাষ করা হচ্ছে। গত ১০ বছরে চা চাষের আয়তন ৩০ হাজার একরেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে উৎপাদনেও বড় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আধুনিক নানা প্রযুক্তি, রোগ প্রতিরোধী ওষুধ, উন্নতজাতের চারা উৎপাদন, সার কীটনাশক সহ নানা সুযোগ সুবিধার কারণে চা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধারা ধরে রাখা সম্ভব হলে চলতি বছর দেশের চা উৎপাদন ১০ কোটি কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ২০২৫ সালে ১২ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার অগ্রসর হচ্ছে।
চা বোর্ডের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রচুর। এ জন্য বিদেশে রপ্তানি ক্রমে কমে আসছে। আমাদের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে অতীতের মতো আবারো চা রপ্তানিতে বাংলাদেশ হারানো ঐতিহ্য উদ্ধার করতে পারবে। বর্তমানে ১৯টি দেশে চা রপ্তানি হয় বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, তবে চা রপ্তানির পরিমাণ মোটেই সন্তোষজনক নয়। পরিমাণ আরো অনেক বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের পার্বত্যাঞ্চলে অনেক বেশি চা বাগান গড়ে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে অন্তত ১ কোটি কেজি চা রপ্তানির লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।












