সরকারি ওষুধ চুরি ঠেকাতে হার্ডলাইনে প্রশাসন

১০ ওয়ার্ডের সর্দার বদলি, আউটসোর্সিংয়ের একাধিক কর্মচারীকে অব্যাহতি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১২ মার্চ, ২০২২ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ পাচারে জড়িত রয়েছে হাসপাতালের কর্মচারীরাই। হাসপাতালের রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহের জন্য সরকারিভাবে এসব ওষুধ দেয়া হয়। কিন্তু গরীব রোগীদের বিনামূল্যে পাওয়ার কথা থাকলেও হাসপাতাল থেকে এসব ওষুধ পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বাইরে। আর এই পাচার চক্রে জড়িত খোদ হাসপাতালের কর্মচারীরাই। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি বিনামূল্যের ওষুধ বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতেনাতে দুজনকে আটক করে হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। এদের একজন হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী আশু চক্রবর্তী (৩২)। তিনি ২৬ নং ওয়ার্ডে দায়িত্বরত। অপরজন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারী মো. সৈয়দ (৫০)। পরে তাদের পুলিশের হাতে সোর্পদ করা হয়। আটকের পর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশু চক্রবর্তীর বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ ওষুধ জব্দ করা হয়।
এই দুজনকে আটকের পর সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রির সাথে হাসপাতালের কর্মচারী ও অন্যান্য স্টাফের বেশ কয়টি চক্র যে জড়িত, সেটি প্রকাশ্যে আসে। মূলত এরপর থেকেই সরকারি ওষুধ চুরি ঠেকাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চমেক হাসপাতাল প্রশাসন। ঘটনার পরপর চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন, পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের এবং সরকারি কর্মচারী আশু চক্রবর্তীকে বিধি অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল প্রশাসন।
এরপরও আরো বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওই ঘটনার পরপরই ২৬ নং ওয়ার্ডসহ অন্তত ১০টি ওয়ার্ডের সর্দারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর শৃঙ্খলাজনিত কারণে এরইমধ্যে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে আউটসোর্সিংয়ের ৪/৫ জন কর্মচারীকে। তাছাড়া সরকারি ও আউটসোর্সিংয়ের আরো বেশ কিছু কর্মচারীর বদলি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, ঘটনা জানার পরই আমরা এখন পুরোদমে হার্ডলাইনে। ওষুধ চুরি ঠেকানোর পাশাপাশি হাসপাতালের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কঠোর হচ্ছি। এ ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে কেউ ছাড় পাবে না। শৃঙ্খলাজনিত কারণে এরইমাঝে আউটসোর্সিংয়ের বেশ কয়জন কর্মচারীকে তাদের কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বেশ কয়টি ওয়ার্ডের সর্দার সরিয়ে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। অন্যান্য স্টাফও বদলি প্রক্রিয়াধীন। আরো বেশ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে আমরা একটি সিস্টেমে আনার চেষ্টা করছি। কয়েক মাসের মধ্যে হাসপাতালে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এদিকে, ওষুধ চুরির বিষয়টি ধরা পড়ার পরপরই হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার, ওয়ার্ডের সর্দার, নার্সিং সুপারভাইজার ও বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে আলাদা আলাদা বৈঠক করা হয়েছে জানিয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. অংসুই প্রু মারমা বলেন, আমরা সবার সাথে বসেছি। যারা দীর্ঘদিন ধরে একই ওয়ার্ডের সর্দার হিসেবে ছিল, তাদের আমরা অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছি। একইভাবে আরো বদলির প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২৬ নং ওয়ার্ডে আলাদা নজর রয়েছে জানিয়ে আগামী ৬ মাসের মধ্যে হাসপাতালে পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে বলেও জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, সরকারি ওষুধ চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার এক মাস পর বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) চমেক হাসপাতালের সরকারি ওষুধের দোকানে (স্টোরে) অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাজমুছ সাদাতের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের শুরুতে বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনে যায় দুদকের তদন্ত টিম। সেখানে চমেক হাসপাতাল পরিচালকের সাথে তারা কথা বলেন। পরে নিচতলায় ওষুধের দোকানে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। হাসপাতালের স্টোর ও ফার্মেসিতে ওষুধ সরবরাহের নথিপত্র যাচাইয়ের পাশাপাশি অর্থোপেডিক (২৬ নং) ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। অভিযান শেষে বিকেল তিনটার দিকে দুদকের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। হাসপাতালের স্টোর থেকে ফার্মেসিতে ওষুধ সরবরাহ এবং সেগুলো রোগীদের মাঝে বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছুটা গরমিল পাওয়ার তথ্য জানান তারা। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলেছেন, যত রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে তার চেয়ে বেশি ওষুধ স্টোর থেকে ফার্মেসিতে নেওয়া হচ্ছে। হটলাইনে ভুক্তভোগী রোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তা তদন্ত করতেই এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅন্যের হয়ে নিয়োগ পরীক্ষা, চবি শিক্ষার্থীসহ দুজন ধরা
পরবর্তী নিবন্ধবাসায় ঢুকে পিটিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা