কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দেশে পণ্যমূল্য বাড়াতে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিএনপি ‘বাতাস’ দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। একইসঙ্গে বিএনপি মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য দ্রব্যমূল্য বিষয়ে মাঠে কর্মসূচি পালন করছে বলেও দাবি করেন তিনি। অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, সরকার নজর রাখছে। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে বই মেলার সমাপনী, মহান একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ও সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এতে সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মুমিনুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বই মেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে মাঠে কর্মসূচি দিয়েছে। আবার রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিচ্ছে, বাতাস দিচ্ছে- স্টক করে পণ্যমূল্যটা বাড়াও। যাতে দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। অসাধু ব্যবসায়ী যেমন দেশবিরোধী কাজ করছে, বিএনপিও একই সাথে দেশবিরোধী কাজ করছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন তা বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা দেখে না। দেখেও না দেখার ভান করে। তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। কর্মসূচির মূল বিষয় দ্রব্যমূল্য। তিনি বলেন, করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র পৃথিবীতে কিছু কিছু পণ্যের মূল্য বেড়েছে। ইউরোপে পণ্যের মূল্য গত এক দশকে সবচেয়ে বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বেড়েছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্য। বাংলাদেশে কিন্তু ইউরোপের তুলনায় অনেক কম বেড়েছে। আমদানি নির্ভর কয়েকটি পণ্যের মূল্য বেড়েছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্বল্প আয়ের লোকজন যাতে কম দামে এসব পণ্য কিনতে পারে সেজন্য টিসিবির আওতা বেড়েছে। এর মাধ্যমে এক কোটি পরিবার যাতে কম দামে পণ্য কিনতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার দেশের কল্যাণে কাজ করছে। প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। মোটা চালের দাম এখন ৪০ টাকা। চট্টগ্রাম শহরে একজন রিকশাওয়ালা একবেলা রিকশা চালিয়ে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করে। তারা মোটা চাল ১৮-২০ কেজি কিনতে পারে। উত্তর বঙ্গে একজন শ্রমিকের মজুরিও ৫০০-৭০০ টাকার কম নয়। সেখানেও একজন শ্রমিক কমপক্ষে ১২ কেজি বা আরো বেশি চাল কিনতে পারে। বাংলাদেশে এ পরিস্থিতি ছিল না। ১৩-১৪ বছর আগে একজন রিকশাওয়ালা ৩-৫ কেজি চাল কিনতে পারতো। নিম্ন আয়ের লোকজনের উপার্জন বেড়েছে। কিন্ত বিশ্বব্যাপী পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কিছুটা দাম বাড়লেও বাংলাদেশে পণ্যের সংকট নাই।
তিনি বলেন, ইউরোপ আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে আমরা দেখতে পাই সেখানে কোনো অনুষ্ঠান কিংবা পূজা-পার্বণের আগে পণ্যের মূল্য কমিয়ে দেয়া হয়। রমজান-ঈদ, পূজা-পার্বণ আসলে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা দেখা যায় পণ্যমূল্য বাড়ানোর চেষ্টা করে। এটা প্রচণ্ড অসততা এবং জনগণের সাথে প্রতারণা। যারা এগুলো করবে তারা জনবিরোধী কাজ করবে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি নেতারা বলছেন সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। নয়া পল্টনের অফিসে বসে গত ১৩ বছর ধরেই আমাদের বিদায় ঘণ্টা বাজাচ্ছেন তারা। কিন্তু তাদের ঘণ্টায় মানুষ সাড়া দেয় নাই। ১৩ বছর ধরেই এই বিদায় ঘণ্টার মধ্যেই আছি আমরা। আরো কত বছর তাদের এই বিদায় ঘণ্টা বাজাতে হয় সেটি জনগণ ঠিক করবে। তাদের ঘণ্টা বাজানোর মধ্যেই আগামী নির্বাচনে জনগণ আমাদেরকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিবে। যারা বিভ্রান্তির চেষ্টা চালায়, তাদের চিহ্নিত করুন, তাদের বর্জন করুন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে গেছে, আমরা যেহেতু এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তাই আমরা অনেকেই অনুভব করতে পারি না। যে মানুষটি ১২ বছর আগে বিদেশ গেছে মাঝখানে দেশে আসে নাই, সে যখন বাংলাদেশে আসে তখন পরিবর্তনটা লক্ষ্য করে।
তিনি বলেন, গত মাসের শেষ সপ্তাহে আমি ভারতের পূর্বাঞ্চলে কয়েকটি রাজ্যে গিয়েছিলাম। বৈঠকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বললেন, তিনি প্রতিবছর ঢাকায় আসেন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। প্রতি বছরই তিনি পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটি আমাদেরকে প্রচণ্ডভাবে উৎসাহিত করছে। আসামের রাজ্যপাল এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীও ঠিক একই কথা বলেছেন।