ছুরি, ব্লেড, রুটি প্রস্তুতকারক পণ্য, সিনথেটিক ফাইবার, স্টিম আয়রণ, সুইট কর্ণ, বেকিং পাউডারের আড়ালে আমদানি করা হয় উচ্চ শুল্কযুক্ত সিগারেট। এর মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে সর্বমোট ১০৫ কোটি ৭২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩৩ টাকা। ২০১৮ সালের ৪, ১১ ও ২৭ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর, ৩ এপ্রিল থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর, ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর, ১৭ অক্টোবর থেকে ২৬ ডিসেম্বর, ১৪ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর এবং ৩১ অক্টোবর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সরকারি বেসরকারি চক্র পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে, প্রতারণা, জালিয়াতি ও অসদাচরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় গতকাল দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ পৃথক পৃথকভাবে ১১ টি মামলা করেছেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তার, মাহবুবুল আলম, নারগিস সুলতানা ও মো. জাফর সাদেক। যেখানে আসামি করা হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সাবেক ও বর্তমানে কর্মরত ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১১ জন আমদানিকারক ব্যবসায়ী, সিএন্ডএফ এজেন্টস প্রতিষ্ঠানের ১৪ জন ও ৩ জন অনুপ্রবেশকারীকে।
১১ মামলার কাস্টমস সংশ্লিষ্ট আসামিরা হলেন, কাস্টমসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, অফিস সহায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম, শুল্কায়ন গ্রুপের প্রাক্তন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার লিপি, মো. মেহেরাব আলী, সাইফুন্নাহার জনি, কাস্টমসের প্রাক্তন রাজস্ব কর্মকর্তা মো. হাবিবুল ইসলাম, এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ এবং উচ্চমান সহকারী মো. আব্দুল্লাহ আল মাছুম। এর মধ্যে কামরুল হক ১০টি এবং মো.সিরাজুল ইসলাম সুলতান আহমদ ও ফিরোজ আহমেদ ১১ মামলারই আসামি।
আমদানিকারক-ব্যবসায়ী আসামিরা হলেন- ঢাকার মিমি লেদার কটেজের গোলাম মোস্তফা, এস কে এস এন্টারপ্রাইজের রাসেদুল ইসলাম কাফি, এইচ এল ট্রেড কর্পোরেশনের মো. আব্দুল হান্নান দেওয়ান, আর কে ইন্টারন্যাশনালের বিথী রানী সাহা, এস এ এম ইন্টারন্যাশনালের মো. সেফায়েত উল্লাহ, এস ডি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনালের নাসরীন রায়হান, এ কিউ ট্রেডিংয়ের আব্দুল কুদ্দুস রায়হান, জাহিদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মো. জাহিদুল ইসলাম, মানিকগঞ্জের সুপার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের রবীন্দ্র নাথ সরকার ওরফে রবি, গাজীপুরের খান এন্টারপ্রাইজের মো. রাশেদুল হোসেন খান এবং লক্ষীপুরের এস পি ইন্টারন্যাশনালের মো. সেলিম। এরা প্রত্যেকেই একটি করে মামলার আসামি।
সিএন্ডএফ এজেন্ট সংশ্লিষ্ট আসামিরা হলেন, সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স এম অ্যান্ড কে ট্রেডিংয়ের মোফাজ্জেল হোসেন মোল্লা, চাকলাদার সার্ভিসের মো. হাবীবুর রহমান (অপু) চাকলাদার, এম আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মো. মিজানুর রহমান চাকলাদার, লাবনী এন্টারপ্রাইজের মো. রাশেদ খান, মো. রুহুল আমিন, মো. আরিফুর রহমান, স্মরণিকা শিপিং কাইজেন লিমিটেডের মো. কামরুল ইসলাম, জাভেদ আহমেদ, তানজিন মোরশেদ. মো. শরীফ উদ্দিন, মো. আব্দুল কাফি, মো. আনিছুর রহমান, মজুমদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ইকবাল হোসেন মজুমদার, লায়লা ট্রেডিং কোম্পানির মো. জসিম উদ্দিন। এদের মধ্যে চাকলাদার ২ টি, মো. রাশেদ খান, রুহুল আমিন ও আরিফুর রহমান ৩ টি করে মামলার আসামি। বাকীরা সবাই একটি করে মামলার আসামি হয়েছেন।
অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে মো. আব্দুল গোফরান ও মো. জহুরুল ইসলাম ১০ টি করে মামলার আসামি। অপর অনুপ্রবেশকারী মো. আবুল কামাল ১টি মামলার আসামি।
দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক নাজমু সাদাত আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে, প্রতারণা, জালিয়াতি ও অসদাচরণের মাধ্যমে উচ্চ শুল্কযুক্ত সিগারেট আমদানি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। যেটি দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি আরো বলেন, পৃথক এ ১১ টি মামলায় আসামিরা পৃথক পৃথক যোগসাজসে পৃথক পৃথক অংকের সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। টাকার পরিমাণ হলো ৮ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা, ৮ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০ টাকা, ৮ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩২ টাকা, ৮ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৫২ টাকা, ৮ কোটি ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৯০৪ টাকা, ৮ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৫৪ টাকা, ২৪ কোটি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৪ টাকা, ৮ কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৯ টাকা, ৮ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার ৯৭৩ টাকা, ৮ কোটি ১৫ লাখ ৬ হাজার ১১২ টাকা এবং ৮ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ১৮৩ টাকা।