দেড়শ’ কোটিরও বেশি টাকা দামের এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটির ভবিষ্যত পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রকেটের আঘাতে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়া জাহাজটি ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরে ঠিকানাহীনভাবে ভাসছে। এটিকে কবে উদ্ধার করা হবে বা কিভাবে উদ্ধার করা হবে সেই সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো রোডম্যাপ কারো কাছে নেই। তবে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ইতোমধ্যে জাহাজটির ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জাহাজটির ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে কত টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধির প্রকৃত অবস্থা কেউ জানে না। রকেট হামলায় জাহাজটির ব্রিজ দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ায় এটি পুরোপুরি চলাচল অযোগ্য। এর বাইরে জাহাজটির আর কি কি ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ব্রিজ দুমড়ে মুচড়ে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়া জাহাজটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ভাসছে। যে কোনো সমুদ্রগামী জাহাজ থেকে নাবিকেরা নেমে গেলেও সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলায় থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান নিহত হন। একদিন পরই ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া জাহাজটির দুই নারীসহ ২৮জন নাবিককে উদ্ধার করে একটি বাংকারে নিয়ে রাখা হয়। ওখান থেকে রোমানিয়া হয়ে গতকাল বুধবার নাবিকেরা দেশে ফিরেছেন। হতভাগ্য থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হাদিসুর রহমানের লাশ ইউক্রেনেই রয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে তার মরদেহ দেশে আনা হবে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নাবিকরা জীবন হাতে নিয়ে নেমে যাওয়ার পর দেড়শ’ কোটি টাকা দামের জাহাজটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ভাসছে। এটি কারো কোনো দায়িত্বে বা হেফাজতে দিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। এতে করে জাহাজটির ভবিষ্যতই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এটি কখন কিভাবে উদ্ধার করা হবে তাও অনিশ্চিত। মেরিন ট্রাফিকের ট্র্যাকিংয়ে ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজকে আউট অফ রেঞ্জ দেখাচ্ছে। এর ফলে জাহাজটির সবকিছুই অনিশ্চিত। তবে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, রকেট হামলায় জাহাজটির ব্রিজ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে জাহাজটির রাডার সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। জাহাজটিতে নাবিকও নেই। ফলে জাহাজটি আউট অফ রেঞ্জ দেখাচ্ছে।
বিএসসির পক্ষ থেকে ক্ষতির ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে একাধিক কর্মকর্তা জানান, আসলে জাহাজটির প্রকৃত অবস্থা জানতে আরো সময় লাগবে। এই ব্যাপারে সার্ভেয়ার কাজ করবে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করবে। সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠানকে বিএসসির পক্ষ থেকে এমভি বাংলার সমৃদ্ধির ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই উক্ত সার্ভেয়ার প্রতিষ্ঠান সরজমিনে সবকিছু দেখে একটি রিপোর্ট প্রদান করবে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই জাহাজটির ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা নাবিকেরা ভালোয় ভালোয় দেশে পৌঁছেছেন আপাতত এটিই আমাদের বড় সান্তনা। জাহাজটির বীমা কাভারেজ রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পুরোটাই আদায় করা সম্ভব হবে। তবে ঠিক কতদিন সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন চীন থেকে ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার এবং তিনটি অয়েল ট্যাংকার মিলে ৬টি জাহাজ ক্রয় করেছিল। এরমধ্যে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা দামের এমভি বাংলার সমৃদ্ধি ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিএসসির বহরে অন্তর্ভুক্ত হয়। বিপিসি ২৯ নাবিকসহ সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডেল্টা শিপিং লাইন্সের কাছে জাহাজটি ভাড়া দিয়েছিল। ডেনমার্কের ওই কোম্পানিই জাহাজটিকে মুম্বাই থেকে তুরস্ক হয়ে ইউক্রেনে পাঠিয়েছিল। ইউক্রেন থেকে জাহাজটির টাইলস তৈরির কাচামাল নিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে ইউক্রেন বন্দরে পাইলট না পাওয়ায় জাহাজটি আটকা পড়ে এবং একদিনের মাথায় রকেট হামলার শিকার হয়। এতে ২৯ নাবিকের একজন নিহত হন।