যুদ্ধের অজুহাত দেখিয়ে যেসব ব্যবসায়ী আগের আমদানি করা তেলের দাম বাড়িয়েছে তারা সরকারকে বিপদগ্রস্ত করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মাহাবুব-উল-আলম হানিফ।
তিনি আজ বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজার শহরের মোটেল উপলের জারা কনভেনশন সেন্টারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু দেশে মজুদ তেল যুদ্ধের আগেই আমদানি করা হয়েছে। যুদ্ধের পরে নতুন করে দেশে কোনো তেল আমদানি করা হয়নি। তাহলে যুদ্ধের আগে আনা তেলের দাম এখন কোনোভাবে বাড়ানোর যুক্তি মেনে নেয়া যায় না।”
যারা বিভিন্ন অজুহাতে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে মানুষকে বিপদগ্রস্ত করতে চায়, তারা সরকারকে বিপদগ্রস্ত করতে চায় মন্তব্য করে মাহাবুব-উল-আলম হানিফ এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় মাহবুব-উল-আলম হানিফ আরো বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার হাত ২৬ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর রক্তে রঞ্জিত; তাই সেই বেগম খালেদা জিয়া কোনোদিন মানবতার মা হতে পারে না, তিনি হত্যাকারীর মা হতে পারেন।”
বিএনপি মহাসচিব সম্পর্কে তিনি বলেন, “মীর্জা ফখরুল পৃথিবীর সব মিথ্যার রেকর্ড ভেঙে এগিয়ে গেছেন। কারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করতে চায়, কারা স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছিল, এখনও কারা স্বাধীনতা বিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে তা দেশবাসী জানে।”
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “দেশের সব অর্জন এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে, আর দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।”
হানিফ বলেন, “বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক, এ সম্পর্ক চিরকালের। ইচ্ছে করলেই কেউ তা মুছে ফেলতে পারবে না। আওয়ামী লীগকে যারা নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করেছিলো, বরং তারাই নিশ্চিহ্ন হয়েছে। জনগণ তাদেরকেই ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।”
তিনি বলেন, “আজকের বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদেরকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে টিকে থাকতে হবে। আর এ লক্ষ্যে আমাদেরকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আত্ম-মর্যাদার সাথে আরো সামনে এগিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি, একটি বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে আমাদের মাথা উঁচু করে চলতে হবে।”
গত ইউপি, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যেসব আওয়ামীলীগ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হয়েছেন, প্রতিনিধি সভার শুরুতে তাদেরকে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেয়া হয়।
প্রতিনিধি সভায় অতিথি হিসাবে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, ধর্ম-বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, জাফর আলম এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, শাহিন আক্তার এমপি, কানিজ ফাতেমা আহমেদ মোস্তাক এমপি ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদসহ আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভার কমিটি এবং স্থানীয় সরকারের দলীয় জনপ্রতিনিধিগণসহ প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, “দেশে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর সাংগঠনিক কার্যক্রমে আরো বেশি গতিশীলতা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে এবং তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে নতুনভাবে গোছানোর জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিনিধি সভা করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের প্রাণ তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে এই আয়োজন। আশা করছি, এই সভার মাধ্যমে কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ আরও সুসংগঠিত, শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হবে।”
পরে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান। এর আগে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড়িয়ে সভার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।