চবি উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা রুমঝুম ভূঁইয়া পড়াশোনা করেছেন ব্রাহ্মণপাড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবিদ্বার মফিজ উদ্দিন আহমেদ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কে ইউ লুভেন এবং ভিইউবি বেলজিয়ামে। পঞ্চম আর অষ্টম শ্রেণিতে পেয়েছেন টেলেন্টপুল বৃত্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বি. এসসি (অনার্স) আর এমএস-এ পেয়েছেন সর্বোচ্চ সিজিপিএ এবং জিপিএ। যখন অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী, বিয়ে করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক মো. খায়রুল্লাহকে। সংসার এবং একাডেমিক দুটো বিষয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করেছেন ফারহানা। সিলেটে অবস্থানকালে শাবিপ্রবিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে এমফিল ছাত্রী হিসেবে গবেষণা করেছেন। যার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস এবং এলসেভিয়ারের মতো প্রকাশনা থেকে। তারপর মলিকুলার বায়োলজিতে দ্বিতীয় মাস্টার্স সম্পন্ন করতে পাড়ি জমান বেলজিয়ামে। স্বামী খায়রুল্লাহ তখন পিএইচডি করছেন কে ইউ লুভেনে। সেখানে পড়াশোনার সময় পৃথিবীতে আসে একমাত্র পুত্র রাযীন খায়রুল্লাহর। উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করে তিনি ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল দেশে ফিরেন স্বামী এবং ১০ মাস বয়সী পুত্র রাযীনকে নিয়ে। ২০১৮ সালে যোগ দেন চবিতে প্রভাষক হিসেবে। দেশে ফেরার পাঁচ মাস পর ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর আকস্মিকভাবে মারা যান স্বামী। শিশুপুত্র রাযীন তখন মাত্র ১৫ মাস বয়সের। থেমে থাকেন নি ফারহানা। কাজের মাধ্যমে শোককে শক্তিতে পরিণত করতে চেয়েছেন তিনি। ২০২১ সালের স্কোপাসের তথ্য অনুযায়ী তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা দশ নারী বিজ্ঞানীদের মধ্যে হয়েছেন পঞ্চম। আপনজন গত বা পরিবারের মানুষের কর্মব্যস্ততার কারণে ফারহানা খুব সামান্যই সহযোগিতা পান। শিক্ষক, গবেষক, জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষক, বিএনসিসির প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তিন বছরের ছেলেকে মায়ের কাছে রেখে বিএমএ থেকে প্রিকমিশনড ৬৩ দিনের ট্রেনিং করেছি গতবছর। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক বাবা মো. আব্দুর রশীদ ভূঁইয়া, হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মা বেগম আয়েশা ছিদ্দিকা, ভাই নওশের আর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বোন ফাহমিদা তার কাজের সময়ে সাহায্য করে। সহপাঠ্যক্রমিক শিক্ষায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ফারহানা চায় আরো জানতে, শিখতে আর নিজের জানাটুকু তার ছাত্রদের মাঝে বিলিয়ে দিতে। ফারহানা তার নিজের জীবনকে অন্যের জন্য উদাহরণ হিসেবে রাখতে চান যে সময়ের সাথে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে হয় ভালো কাজের মাধ্যমে।