‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের শুরুটা করেছিলেন এভাবেই। সাত বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ রেডিওতে শুনেছিলেন ছড়াকার আ.ফ.ম মোদাচ্ছের আলী। তার শিশু মনে দাগ কাটে বঙ্গবন্ধুর ডাক ‘ভাইয়েরা আমার’। এখনো লালন করেন সেই অনুভূতি। শিশুকালে যে অনুভূতির জন্ম তা এ প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের সামনে তুলে ধরতে লিখেছেন সেদিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা। তবে তা গল্পচ্ছলে, ‘ভাইয়েরা আমার’ গ্রন্থে। বইটি এবার বইমেলায় বেরিয়েছে। তাছাড়া ‘নেতা থেকে বঙ্গবন্ধু’ নামে একটি বই বেরিয়েছে তাঁর।
নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলায় দৈনিক আজাদীর সঙ্গে কথা হয় আ.ফ.ম মোদাচ্ছের আলীর। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে আমার বয়স ছিল সাত। শহরের চন্দনপুরা বাসায় ছিলাম তখন। আমাদের বাসায় একটা মারফি রেডিও ছিল। রেসকোর্স থেকে সরাসরি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ প্রচার করার কথা ছিল। এ ভাষণ শুনার লক্ষ্যে রেডিওর জন্য অতিরিক্ত ৮টি ‘চান্দা ব্যাটারি’ কিনে রেখেছিল আমার বাবা। কিন্তু সেদিন ভাষণ শুনতে পারিনি।
তিনি ওইদিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ভাষণ শুনার জন্য বাবাসহ সবাই অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু দুপুরে শোঁ শোঁ শব্দ করে রেডিও বন্ধ হয়ে গেল। বাবা রেডিওর নব ঘুরে দেখলেন আকাশবাণী চলছে। তার মানে রেডিও খারাপ হয়নি। পরে জানা গেল পাকিস্তান সরকার ভাষণ প্রচার করতে দেয়নি। পরে পূর্ব পাকিস্তানের রেডিও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধর্মঘট ডাকায় পরদিন সে ভাষণের রেকর্ড প্রচার করা হলো। রেডিওতে ভেসে আসা ‘ভাইয়েরা আমার’ এখনো আমার কানে বাজে।
তিনি বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার’ শব্দটি আমার শিশু মনে ধারণ করেছিলাম। ওই অনুভূতির বিষয়টি আমার গ্রন্থে তুলে ধরেছি। তাই বইয়ের নামও দিয়েছি ‘ভাইয়েরা আমার’। বঙ্গবন্ধু ‘ভাইয়েরা আমার’ যে ডাক দিয়েছিলেন তার মাধ্যমে সারা জাতিকেই ডাক দিয়েছিলেন। বাচ্চাদের ৭ মার্চের ঘটনাটি আমার দেখা জীবনের গল্প দিয়ে তুলে ধরেছি।
‘নেতা থেকে বঙ্গবন্ধু’ সম্পর্কে বলেন, বাঙালির বাঁচার দাবি ৬ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর জবানবন্দিসহ নেতা মুজিব কীভাবে বাংলার বন্ধু ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে উঠেছিলেন, ইতিহাসের আলোকে তার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও ঘটনার বিবরণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ১৯৭২ সালে নিউইয়র্ক টেলিভিশনে ডেভিড ফ্রস্টের নেওয়া বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎরটির বেশ কিছু অংশও তুলে ধরি। যেখানে উঠে এসেছে পাকিস্তানিদের বর্বরতার ইতিহাস।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত লেখালেখি, বই রচিত হয়েছে বিশ্বের আর কোন জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতার নামে এতো লেখা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। ৭৫ এর অবরুদ্ধ সময়েও তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছে। তবে গত ১০ /১২ বছরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অসংখ্য ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ লেখা হয়েছে যা আশার কথা। বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি বলা হয়। তাঁকে অপশক্তিরা আড়াল করে রাখতে চেয়েছিল কিন্ত পারেনি পারবেও না। তিনি ইতিহাসের মহানায়ক।