চবির সেই নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল, তদন্ত কমিটি

অডিও ফাঁস

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৬ মার্চ, ২০২২ at ৭:২২ পূর্বাহ্ণ

আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অডিও ফাঁস বিতর্কে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেটের গতকাল অনুষ্ঠিত ৫৩৭তম সভায় নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ সম্বলিত এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ইনস্টিটিউটে গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সিন্ডিকেটের এ সভা চলে। চবি উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এতে সভাপতিত্ব করেন।
সিন্ডিকেট সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভাগটির (ফারসি ভাষা ও সাহিত্য) নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ সম্বলিত সিদ্ধান্ত বাতিলের তথ্য জানানো হয়। একই সাথে ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম মাইনুল হক মিয়াজীকে আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএস মনিরুল হাসানকে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান ও অধ্যাপক ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, অডিও ফাঁসের বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। এ ঘটনা আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। ঘটনা শুনে আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলি। তিন দিন ঘুমাতে পারিনি। সাত দিন কোনো লেখালেখি করতে পারিনি। যে নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সে নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেটে (শনিবার অনুষ্ঠিত) বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও সততার স্বার্থে সে নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হয়েছে। একই সাথে এ ঘটনা তদন্তের জন্য চার সদস্যের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি জড়িতদের চিহ্নিত করে যে শাস্তির সুপারিশ করবে আমরা (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) সেভাবেই ব্যবস্থা নেব। যে-ই জড়িত থাকুক, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সেলিনা আখতার, প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বলেন, ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ কর্তৃপক্ষের গোচরে আসার সাথে সাথে গত ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটহাজারী মডেল থানায় একটি জিডি করা হয়। পরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অডিও ক্লিপে কণ্ঠ থাকা হিসাব নিয়ামক অফিসের ৩য় শ্রেণির কর্মচারী আহমদ হোসেন ও উপাচার্যের পিএস খালেদ মিসবাহুল মোকর রবীনকে শো’কজ করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের শো’কজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সাথে খালেদ মিসবাহুল মোকর রবীনকে উপাচার্যের দপ্তরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি ৯ জানুয়ারি গোচরীভূত হলেও থানায় জিডি করা ছাড়া এতদিন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দাবি করেছেন, জড়িতরা যাতে এলার্ট হতে না পারেন সেটি চিন্তা করে অন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিষয়টি তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাছাড়া মূল হোতাদের শনাক্তকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো ততটা গভীরে যেতে সমর্থ হতেন না। আর তখন ওই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে সবাই বিষয়টি জেনে যেত। সেটি হলে এ ঘটনায় জড়িতরা এবং নেপথ্যে থাকারাও সতর্ক হয়ে যেতেন। এসব বিষয় চিন্তা করে আমরা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিই। আর রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে অন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে এখন যেহেতু গণমাধ্যমে চলে এসেছে, তাই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুজনকে শো’কজ করা হয়েছে। উপাচার্যের পিএসকে প্রত্যাহার করে অন্য শাখায় বদলি করা হয়েছে।
অডিও ক্লিপে আসা বিভিন্ন তথ্যের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমি ধারণা করছি, এ ধরনের একটি সিন্ডিকেট থাকতে পারে। যারা আমাকে, বিশ্ববিদ্যালয়কে বেকায়দায় ফেলতে চায়। নিজের আশেপাশে থাকাদের মধ্য থেকেও কেউ যদি এ কাজে জড়িত থাকে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমেও তদন্ত করাতে চান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, আমি চাই মূল হোতারা চিহ্নিত হোক। সেটা যেভাবেই হোক। দুদকের মাধ্যমে হলেও। এ ঘটনায় থানায় করা জিডিটি মামলায় রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে ছাত্রলীগের অবরোধ
পরবর্তী নিবন্ধঅধ্যক্ষের কক্ষের সামনে ফুলের টব ভাঙল ছাত্রলীগের একাংশ