ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ভয়েস অভ আমেরিকা, জার্মানির সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেসহ বেশ কয়েকটি বিদেশী সংবাদ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়া বারবার অভিযোগ করে বলে আসছে, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো প্রায়ই বিশ্বের আংশিক এবং রাশিয়া-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গিই তুলে ধরে অথচ পশ্চিমারা ইরাকের মতো দেশে কিংবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিদেশে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের জন্য তাদের নিজ নিজ নেতাদেরই জবাবদিহি করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
আজ শুক্রবার(৪ মার্চ) রাশিয়ার যোগাযোগ তদারককারী প্রতিষ্ঠান ‘রোসকমাদজর’ বলেছে, তারা বিবিসি, ভয়েস অভ আমেরিকা, রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি, জার্মানির ডয়চে ভেলে এবং অন্যান্য গণমাধ্যমের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে।
রাশিয়ায় বিদেশী এইসব ওয়েবসাইটের তথ্যপ্রবাহে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নিয়মিত ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর কারণেই এই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই গণমাধ্যমগুলো ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ তাৎপর্য, এর স্বরূপ, যুদ্ধাভিযানের পদ্ধতি (জনগণের ওপর, বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা), রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি এবং বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা নিয়ে মিথ্যাচার করেছে।
বিবিসি জানায়, রুশ সংবাদমাধ্যমকে ইউক্রেনের আগ্রাসনকে বিশেষ সামরিক অভিযান হিসেবে বর্ণনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষেও একটি নতুন আইন পাস হয়েছে।
সেই আইনে সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে ভুয়া খবর প্রচারকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং এর জন্য বড় অংকের জরিমানা এবং সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কেউ নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানালে তারও বিচারের এখতিয়ার আছে এ আইনের আওতায়।
এর জেরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়ার স্বাধীন সংবাদমাধ্যম টিভি রেইন সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। রুশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অভিযোগ, এই চ্যানেল কট্টরপন্থাকে উস্কানি দিচ্ছে।
এরপর শুক্রবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক সংবাদদাতা জানান, বিবিসির রুশ ভাষার পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়েস অভ আমেরিকার ওয়েবসাইটও ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করে খোলা যাচ্ছে না। ভয়েস অভ আমেরিকার ইংরেজি সাইটে ঢোকা গেলেও বিবিসিতে ঢোকা যাচ্ছে না।
বিবিসি বলেছে, রাশিয়ার এই কড়াকড়িতে তারা নিবৃত্ত হবে না। নির্ভুল, স্বাধীন তথ্যের অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। রাশিয়ার জনগণকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয় যাদের লাখো জন প্রতি সপ্তাহে বিবিসি নিউজের ওপর নির্ভর করে। বিবিসি নিউজ রাশিয়ার জনগণ এবং বাদবাকি বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলবে।