বাংলাদেশের একটিমাত্র চলচ্চিত্রে তিনি প্লেব্যাক করেছিলেন। মমতাজ আলি পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘রক্তাক্ত বাংলা’য় ১৯৭২ সালে। সলিল চৌধুরীর লেখায় ও সুওে ‘ও দাদা ভাই মূর্তি বানাও’ গানটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংগীতের শ্রেষ্ঠ একটি নিদর্শন। এই গানের দ্বিতীয় অন্তরায় তিনি গেয়েছিলেন, ‘আমি তো চিরটা দিন কাছে রবো না, যাবো যে সুদূরে খুঁজে পাবে না।’ ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি সুদূরে হারিয়ে গেছেন পার্থিবভাবে। তবে এ-বিশ্ব যতদিন টিকে থাকবে সংগীতও টিকে থাকবে ততদিন। আর তাঁর কণ্ঠসুষমাও টিকে থাকবে ঠিক ততদিন। তিনি সুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী- লতা মঙ্গেশকর।
পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বেশি ভাষায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এবং সবচেয়ে বেশি সময় জুড়ে সংগীত পরিবেশন করেছেন এই মহাশিল্পী। দীর্ঘ জীবনও পেয়েছেন নশ্বরভাবে। জীবনের শেষ কয়েক বছর প্রকাশ্যে গান না গাইলেও সংগীত জগতের অভিভাবক হয়ে বিরাজিত ছিলেন। তেমন বিশেষ অসুস্থতাও ছিল না তাঁর। বিধ্বংসী কোভিড ও তৎসৃষ্ট নিউমোনিয়া জনিত অসুখে ভুগেছেন মাত্র ২৫ দিন। এই ২৫ দিন তাঁর কুশল কামনায় উৎকণ্ঠিত ছিল সারা বিশ্ব। বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তাঁর অসুস্থতার সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। তাঁর প্রয়াণের পর বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব ও শ্রদ্ধার সঙ্গে যেভাবে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে তাঁর প্রয়াণ সংবাদ এবং তাঁর জীবনভিত্তিক প্রতিবেদন প্রচার করেছে তাতে আবারও প্রমাণিত হয়েছে সারা পৃথিবীতে তিনি কতো সমাদৃত ছিলেন।
ভারতের প্রধান সব ভাষা এবং বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা মিলিয়ে তিনি ৩৬টি ভাষায় ৫০ হাজারের বেশি গানে কন্ঠ দিয়েছেন যা গত চার দশকের অধিক সময় ধরে রেকর্ড হিসেবে গিনেস বুকে উদ্ধৃত হয়ে আসছে। উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষার দশ হাজারের বেশি ছবিতে তিনি প্লেব্যাক করেছেন। স্বভাবতই এই রেকর্ড কেউই আর হয়তো অতিক্রম করতে পারবেন না। বর্তমানে সংগীতের অবনয়ন দেখে এই প্রতীতি জন্মায়। এতো অধিক সংখ্যক গানে কন্ঠ দেয়ার নেপথ্যের কারণ; প্রচুর ভাষায় তিনি গেয়েছেন এবং পেয়েছেন দীর্ঘসময়ের ক্যারিয়ার (১৯৪২-২০২২, ৮০ বছর)। নিঃসন্দেহে এটি একটি বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। তবে এটা নিছক সৌভাগ্যের ব্যাপারও নয়, এর নেপথ্যে ছিল অক্লান্ত পরিশ্রম, নিরবচ্ছিন্ন চর্চা, আন্তরিক পেশাদারিত্ব এবং স্বীয় মাধ্যমের প্রতি সর্বোত্তম ভালোবাসা। এর সঙ্গে সহজাত প্রতিভা আর ঈশ্বর প্রদত্ত দক্ষতা মিলে গড়ে উঠেছিল এক অনন্য অসাধারণ সাংগীতিক শিল্পীসত্তা যার তুলনা বিশ্ব সংগীতে দ্বিতীয় রহিত।
স্বাভাবিকভাবেই অজস্র উপমা, উপাধি, বিশ্লেষণে বিভূষিত হতেন বিশ্ব সঙ্গীত সাম্রাজ্যের অপরাজিত এ- সম্রাজ্ঞী। তবে তিনি যেন ছিলেন সুরের দেবীর মূর্তররূপ। লতা মঙ্গেশকর এই নামটিই রাজ কাপুরের কথায় ‘আওয়াজোঁ কা দেবী’, রাজকাপুর বলতেন, ‘দেবী সরস্বতী লতা মঙ্গেশকরের বাস করেন।’ সাবিনা ইয়াসমিনের কথায় ‘লতাজী হলেন সুরের সরস্বতী’, সুরের সরস্বতী বিদায় নিলেন দেবী সরস্বতীর বিসর্জনের দিনেই। তাঁর কন্ঠের যাদু নিয়ে অনেক মিথ অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত। তাঁর কন্ঠসুধা ছিল সত্যিই অপার্থিব। অতি আশ্চর্যময়। ফলে শ্রোতারা তাঁর কন্ঠের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে এসব মিথ তৈরি করতেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। লতার গায়কীর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সুস্পষ্ট শুদ্ধ উচ্চারণ ও এবং উদাত্ত স্বর ও সুর ক্ষেপণ।। তাঁর মাতৃভাষা মারাঠি। যদিও অধিকাংশ গান তিনি গেয়েছেন হিন্দিতে। যখনই যে ভাষায় তিনি গান করতেন গানের মর্মার্থ বুঝে নিতেন। তারপর সে ভাষার রীতি নীতি আত্মস্থ করে গানটি লিখে নিতেন দেবনগরী হরফে। যে হরফে মারাঠি, হিন্দিসহ উত্তর ভারতীয় প্রায় সব ভাষা লেখা হয়ে থাকে। ফলে গানটি বিশুদ্ধ উচ্চারণে গাইতে পারতেন। যখনই যে ভাষায় গেয়েছেন মনে হতো তিনি সে ভাষারই শিল্পী। এটা শতভাগ পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা এবং উৎকর্ষের ফলে হতো। পারফেকশনিজমের চূড়ান্ত প্রকাশ ছিল তাঁর গান।
অত্যন্ত পরিশীলিত ও অভিজাত রুচিসম্পন্ন লতার জীবন যাপন ছিল অত্যন্ত সাধারণ। বিনয় ও সৌজন্যবোধ ছিল তাঁর বড় গুণ। অত্যন্ত রন্ধন পটিয়সী ছিলেন। তাঁর রান্নার ভক্ত ছিলেন মেহেদী হাসান। অনাড়ম্বর যাপিত জীবনে সবসময় সামাজিকতা রক্ষা করতেন। তবে কোনো ঘরোয়া আসরে গান করতেন না। এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছিলেন একবারই। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে। ভারতীয় সেনাদের বাংলাদেশ ত্যাগ উপলক্ষে ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় কন্ঠশিল্পী ও অভিনয় শিল্পীদের সমন্বয়ে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন সেখানে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে লতা মঙ্গেশকরও আসেন। বেশ কয়েকটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও তিনি যোগ দেন। কিন্তু গান গেয়েছিলেন কেবল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধেই তিনি গেয়ে শোনান, ‘আমার গোপন ব্যথার মাঝে তোমায় খুঁজে পাই’ গানটি।
ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’সহ সবকটি পুরস্কার ও পদকে তিনি ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন বিদেশের অনেক রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার। তন্মধ্যে ফরাসি সরকারের সর্বোচ্চ পদক লিজিয়োঁ দ্য নর (লিজিয়ন অব অনার) অন্যতম। ফিল্ম ফেয়ার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এতবার পেয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তিনি এ-দুটি পুরস্কার আর নেবেন না বলে ঘোষণা দেন, কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, তাঁর জন্যে অন্যান্য শিল্পীরা পুরস্কারপ্রাপ্তিতে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও রয়েছে তাঁর সহযোগী ভূমিকা। দেশে বিদেশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারতীয় শিল্পী বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম ছিলেন লতা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তায় ১৯৭১ সালে শচীন দেব বর্মণের নেতৃত্বে যখন মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতের শিল্পী কলাকুশলীরা যৌথভাবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর সেখানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি সলিল চৌধুরীর মিউজিক্যাল স্কোয়াডে কোরাস এবং একক সংগীত পরিবেশন করতেন সেসব অনুষ্ঠানে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের যে একটিমাত্র চলচ্চিত্রে তিনি প্লেব্যাক করেন সে ছবিটিও ছিল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক- রক্তাক্ত বাংলা।
বঙ্গসংস্কৃতির প্রতি সবসময় আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল লতা। বাড়িতে শিক্ষক রেখে বাংলা শিখেছিলেন। বাংলা বলতে পারতেন বেশ ভালোভাবেই। বাঙালি দুই সুরস্রষ্টাা শচীন দেব বর্মন ও সলিল চৌধুরীর অপরিসীম অনুরাগী ছিলেন। অনুরাগী ছিলেন বাঙালি চলচ্চিত্রকার বিমল রায়ের। এই তিনজনের আজীবন সান্নিধ্যে ছিলেন তিনি। কয়েকটি বাংলা গানেও সুর করেছেন, যেগুলি গেয়েছেন কিশোর কুমার। তারই দুটি অনন্য উদারহণ, ‘নয়ন সরসী কেন,’ ‘তারে আমি চোখে দেখিনি’। তেমনি কিশোরও লতার জন্যে বেশ কয়েকটি বাংলা গানে সুরারোপ করেছেন, তারই একটি ‘ভালোবাসার আগুন জ্বেলে কেন চলে যায়।’ রবীন্দ্রসংগীতের অত্যন্ত অনুরাগী ছিলেন। কিন্তু ভয়ে রেকর্ড করতে চাইতেন না। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অনেক জোরাজুরিতে তারই সঙ্গে দ্বৈতকন্ঠে প্রথম রেকর্ড করেন দুটি রবীন্দ্রসংগীত, ‘মধু গন্ধে ভরা’ ও ‘তোমার হলো শুরু’। চলচ্চিত্রে প্রথম রবীন্দ্রসংগীত করেন নরেশ মিত্র পরিচালিত ‘বউ ঠাকুরানীর হাট’ ছবিতে; ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে’ ১৯৫৩ সালে। এপর আরো কয়েকটি ছবিতে রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছেন লতা।
কয়েকশ বাংলা গান করেছেন বেসিক ও প্লে ব্যাক মিলে। বাংলা গানে তাঁর আবির্ভাব হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। প্রথম সে গান ছিল, ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা। তবে বাংলা সংগীতে লতার অসাধারণ সব গান সলিল চৌধুরীর কম্পোজিশনে। দুজনের রসায়ন ছিল অনবদ্য। দুজনেই দুজনের প্রতিভায় ছিলেন অভিভূত। বেশ কয়েকটি বাংলা লোকসংগীতও গেয়েছেন তিনি। মূলত অপরেশ লাহিড়ি ও সলিল চৌধুরীর পরিচালনায় ও কম্পোজিশনে। বলা বাহুল্য এক্ষেত্রেও তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। বাংলায় শেষবারের মতো গান করেন ২০১৪ সালে।
ভারতবর্ষের প্রধান নবীন সকল সুরকারের সুরে তিনি গেয়েছেন। তবে তাঁর অসাধারণ কন্ঠমাধুর্য ও কন্ঠবৈচিত্র্য যাকে ভোকাল মেলোডি ও ভোকাল ভার্সেটাইলিটি বলা হয় তা মূর্ত হয়েছে নওশাদ আলি, শচীন দেববর্মন, মদন মোহন, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও রাহুল দেব বর্মন এই ছয় সুরস্রষ্টাার সৃষ্টিতে। দেখা যাচ্ছে এঁদের চারজনই বঙ্গসন্তান।
জগজিৎ সিং বলেছিলেন, ‘বিশ শতকের বিস্ময়কর তিনটি ঘটনা হলো…মানুষের চাঁদে পদার্পণ, বার্লিনের দেওয়াল ভাঙা এবং লতা মঙ্গেশকরে জন্ম।’ উস্তাদ আমির খাঁর স্মরণীয় উক্তি ‘আমরা তিন ঘন্টা ধরে শ্রোতার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করি, লতা তিন মিনিটেই তা করে দেয়। এই সুরসাধ্বীর জন্ম ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরে এক মারাঠি পরিবারে ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। পিতা পন্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী ও মঞ্চাভিনেতা এবং নাট্যকার। মা সেবন্তী মঙ্গেশকর। চার বোন লতা, আশা, মীনা ও ঊষা এবং একমাত্র ভাই হৃদয়নাথের মধ্যে তিনিই জ্যেষ্ঠ। ভাইবোনের পাঁচজনেই স্বনামখ্যাত সংগীতশিল্পী, ভাই হৃদয়নাথ প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক। লতার প্রথম নাম ছিল হেমা হার্দিকার মঙ্গেশকর। হেমার জন্মের কিছুদিন পর পিতা দীননাথ স্থিত হন মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরে। বাবার কাছেই সংগীত ও অভিনয়ে হাতে খড়ি। পাঁচ বছর বয়সে বাবার লেখা নাটকে গান ও অভিনয়ের সূত্রে সূত্রপাত ঘটে শিল্পীজীবনের। এসময়ে বাবার লেখা একটি নাটকে লতিকা নামের একটি চরিত্রে অভিনয়ে এতই প্রশংসা পান যে তাঁর নামই পরিবর্তন হয়ে প্রথমে লতিকা ও পরে হয় লতা। ১৯৪১ সালে বেতারে প্রথম গান করেন। ১৯৪২ সালে পিতা দীননাথ আকস্মিক ভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে পুরো পরিবারে ভার এসে পড়ে লতার ওপর। মাত্র ১৩ বছর বয়সে। পাশে এসে দাঁড়ান পিতৃবন্ধু চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক মাস্টার বিনায়ক। এ-বছরেই লতা মাস্টার বিনায়কের নবযুগ চিত্রপাট সিনেমা কোম্পানির মারাঠি ছবি কিতি হাসালে অভিনয় ও গান করেন। তবে গানটি শেষে বাদ পড়ে। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মারাঠি ছবিতে অভিনয় ও সংগীত পরিবেশন করেন তিনি। ১৯৪৫ সালে বিনায়কের হিন্দি ছবি বড়ি মাতে প্রথম হিন্দি গান করেন। এ-ছবিতে তিনি ও ছোটবোন আশা অভিনয়ও করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি মুম্বাই চলে আসেন। মুম্বাই এসে প্রথমে উস্তাদ আমান আলী খান এবং পরে উস্তাদ আমানত খানের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন। এসময় প্লে ব্যাকে তাঁকে সহযোগিতা করেন সুরকার গোলাম হায়দার। তাঁর সুরে ‘মজবুর’ ছবিতে ১৯৪৮ সালে ‘দিল মেরা তোরা’ গানটি লতাকে প্রথম সাফল্য এনে দেয়। এরপর ১৯৪৯ সালে খেমচাঁদ প্রকাশের সুরে ‘মহল’ ছবিতে ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ তাঁর যাত্রাপাথ সুগম করে দেয়। এরপর ক্রমশ তাঁর এগিয়ে চলা, দশকের পর দশক, প্রজন্মের পর প্রজন্ম। সে অগ্রযাত্রা সৃষ্টি করে গেছে একের পর এক ইতিহাস।
লতা মঙ্গেশকর মোট নয়টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁকে নিয়ে অনেক প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। তার মধ্যে ‘লতা অন হার ওন ভয়েজ’ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। অন্যটি ‘কুছ খোয়া কুছ পায়া’। সংগীত পরিচালনা করেছেন পাঁচটি মারাঠি ছবিতে। প্রযোজনা করেছেন পাঁচটি ছবি। গুলজার পরিচালিত ‘লেকিন’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ প্রযোজকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৯১ সালে।
প্রখ্যাত সাংবাদিক খালিদ মোহাম্মদকে ২০২০ সালে দেয়া জীবনের শেষ সাক্ষাৎকারে লতা বলেছিলেন, ‘আমি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করি। তবু একবার চলে গেলে আমি সত্যিই আবার জন্ম নিতে চাই না। স্রষ্টা আমাকে পুনর্জন্ম না দিলেই ভালো। একটি জীবনই যথেষ্ট।’
সার্থকজন্ম মহাশিল্পী এক জীবনেই যা করার করে গেছেন, যার মধ্য দিয়ে তিনি সবসময় আমাদের কাছে ফিরে ফিরে আসবেন। লতা মঙ্গেশকার একবারই আসেন পৃথিবীতে এবং চিরদিনের জন্য…