সুপার লিগের শীর্ষে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ

ব্যাটে-বলে আধিপত্য দেখিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেও জয় পেল বাংলাদেশ। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল তামিম বাহিনী। কিন্তু উদযাপনের উপলক্ষ এ দিন আরও বেশি। কারণ আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের শীর্ষে উঠে এলো বাংলাদেশ। এছাড়া প্রথম দল হিসেবে সুপার লিগে ১০০ পয়েন্টের কীর্তি গড়ল টাইগাররা। গতকাল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৮৮ রানের বড় ব্যবধানে। আগের ম্যাচে টাইগারদের টপ অর্ডার লজ্জার চাদর গায়ে জড়িয়েছিল। আর সে কারণেই কিনা গতকাল আফগান বোলারদের নাক আর চোখের জল এক করে ছাড়লেন লিটন, মুশফিক, সাকিব, তামিমরা। যদিও দলের ব্যাটিংটা পুরোটাই লিটন-মুশফিকের কাঁধে চড়ে পাড়ি দিয়েছে। আর বল হাতে কাজটা তাসকিন, সাকিব, মিরাজ, মোস্তাফিজ, শরীফুলরা দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ প্রবাদের মতই সম্মিলীতভাবেই সেরেছেন। এমন দিনে খুঁত ধরার চেষ্টা করা ঠিক না হলেও ফিল্ডিং এর যে দৈন্য ছিল তা শেষ পর্যন্ত দারুণ এক ম্যাচ এবং সিরিজ জয়ের আনন্দের নিচে চাপা পড়ে গেছে।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন এবং তামিম শুরুটা ভাল করার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ধ্বংসের নায়ক ফজল হক ফারুকী সেটা হতে দিলেন না। প্রথম ম্যাচের মত এই ম্যাচেও তামিম সেই ফারুকীর শিকারে পরিণত হলেন। আউটের ধরণও সেই একই, এলবিডব্লিউ। পার্থক্য শুধু সে ম্যাচে ৮ আর এই ম্যাচে ১২। সে ১২ রান তুলতে ২৪ বল খেলেছেন টাইগার দলপতি। ওয়ানডাউনে খেলতে নামা সাকিবের ব্যাটেও আস্থার ইঙ্গিত। কিন্তু তিনিও স্থায়ী হতে পারলেন না বেশিক্ষণ। প্রথম ম্যাচের ন্যয় এই ম্যাচেও সাকিবের হন্তারক সেই রশিদ খান। ৩৬ বল খেলে ২০ রান করা সাকিবও ফিরেছেন এলবিডব্লিউ হয়ে। ৮৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর লিটনের সাথে জুটি বাধেন মুশফিক। আর তাতে যেন পাল্টে যেতে থাকে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং এর চেহারা। শুরুতে ধীরে শুরু করলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে আফগান বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন এই দুই ব্যাটসম্যান। ৫০, ১০০, ১৫০ পেরিয়ে নিজেদের জুটিটা নিয়ে গেলেন দুইশতে। এ দুজন যখন ব্যাট করছিল তখন মনে হচ্ছিল আর কাউকে নামতে হবে না। কিন্তু নিজেদের জুটিটাকে ২০২ রানে নিয়ে গিয়ে থামলেন দুজন। ততক্ষণে রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন লিটন এবং মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। আগের জুটিটা ছিল তামিম এবং মুশফিকের। ২০১৫ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ১৭৮ করেছিলেন তামিম-মুশফিক। ১৬ তম ওভারে জুটি গড়া লিটন এবং মুশফিক স্থায়ী ছিলেন ৪৭ তম ওভার পর্যন্ত। ফরিদ আহমেদ এসে ভাঙ্গেন এজুটি। ফেরান লিটন দাশকে। ততক্ষণে তিনি তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ফিরেছেন ১২৬ বলে ১৩৬ রান করে। যেখানে ১৬টি চার এবং ২টি ছক্কার মার ছিল। ৬৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করা লিটন সেঞ্চুরি করেছেন ১০৭ বলে। পরের ৩৬ রান করেছেন ১৯ বলে। এটি লিটনের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। এখনো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা ১৭৬ রান তার ক্যারিয়ার সেরা।
দীর্ঘক্ষণের পথ চলার সঙ্গী লিটনকে হারানোর পরের বলেই ফিরেন মুশফিক। পারলেন না ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি তুলে নিতে। একেবারে সীমানার কাছে ফারুকীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে মুশফিক করেন ৯৩ বলে ৮৬ রান। যেখানে ৯টি চারের মার ছিল। পরের ২১ বল থেকে অবশ্য বেশি রান তুলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ এবং আফিফ। মাত্র ২১ রান যোগ করতে পেরেছেন। আর তাতেই বাংলাদেশের স্কোর গিযে দাঁড়ায় ৩০৬ রানে।
৩০৭ রানের বড় লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় আফগানিস্তান। আফিফের দারুণ এক থ্রোতে রান আউট হয়ে ফিরেন রিয়াজ হাসান। ১৬ রানের মাথায় হাশমতউল্লাহকে ফেরান শরীফুল দারুণ এক ডেলিভারিতে। সাকিবের বলে আজমত উল্লাহ যখন স্টাম্পিং হয়ে ফিরেন তখন আফগানদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৩৪। এরপর হাল ধরার চেষ্টা করেন রহমত শাহ এবং নাজিবুল্লাহ জাদরান। ভালই এগোচ্ছিলেন দুজন। ৮৯ রানের জুটিও গড়েছিলেন এই দুই আফগান। রহমত শাহকে বোল্ড করে এ জুটি ভাঙ্গেন তাসকিন। ফেরার আগে ৭১ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ৫২ রান করে আসেন রহমত শাহ। এরপর মোহাম্মদ নবীকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা নাজিবুল্লাহর। সে চেষ্টাকেও সফল হতে দেননি তাসকিন। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে ফেরালেন আফগানিস্তানের আরেক হাফ সেঞ্চুরিয়ান নাজিবুল্লাহকে। ৬১ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৫৪ রান করেন নাজিবুল্লাহ। রহমানুল্লাহকেও দাঁড়াতে দেননি সাকিব। নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান ৭ রান করা এই আফগানকে। এরপর মোহাম্মদ নবীর প্রতিরোধ ভেঙ্গে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আফিফের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪০ বলে ৩২ রান করা নবী। আর তাতেই আফগানদের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় রশিদ খান শট খেলার চেষ্টা করলেও তাকে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করে ফেরান মোস্তাফিজ। ২৬ বলে ২৯ রান করেন রশিদ খান। এরপর মুজিব, ফরিদ, ফারুকীরা পরাজয়ের ব্যবধানটা কমানোর চেষ্টা করেছেন। আফিফের ওভারের প্রথম বলে ফারুকী বোল্ড হয়ে গেলে ২১৮ রানে আফগানিস্তানের ইনিংস। আর তাতেই ম্যাচ এবং সিরিজ দুটোই নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন বিকল
পরবর্তী নিবন্ধটিসিবির ন্যায্যমূল্যের নিত্যপণ্য বিক্রি বন্ধ হচ্ছে আজ থেকে