এ যেন এক রূপকথা

আফিা- মিরাজ বীরত্বে অবিশ্বাস্য জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

৪৫ রানে নেই টপঅর্ডারের ৬ উইকেট। ভালো কিছুর আশা জাগানোর আগেই ফিরেন দলের ৪ পান্ডব। আর কোনো উইকেট হারানোর সুযোগ ছিল না। কাজ যা করার করতে হবে আফিফ-মিরাজ জুটিকেই। ঠিক সেখান থেকেই ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করে এগোতে থাকেন দুজন। গড়েন রেকর্ড জুটি। তৈরি হয় নতুন এক রূপকথা। বাংলাদেশ পেয়েছে অবিস্মরণীয় জয়। ক্রিকেট খেলাটাই আসলে এমন। কোনো পূর্বাভাস কিংবা অনুমানের ধার ধারে না। সব ভবিষ্যদ্বাণী যেন হার মানে ক্রিকেটের কাছে। গতকালের ম্যাচটি ছিল ঠিক তেমনই একটি ম্যাচ। একটা সময় বাংলাদেশ যখন হারের প্রহর গুণছিল ঠিক তখনই আফিফ এবং মিরাজ দুই তরুণ তুর্কি ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে বের করে আনলেন সোনালি এক জয়। তামিম, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকরা যখন দলকে অন্ধকারের চাদরে ঢেকে দিলেন তখন তাতে পূর্ণিমার আলোর জোয়ার বইয়ে দিলেন আফিফ-মিরাজ। তাই অনন্য, অনবদ্য, অসাধারণ, দুর্দান্ত কিংবা যত ধরনের বিশেষণই দেওয়া হোক না কেন এই দুই তরুণের নামের পাশে তা যেন ম্লান হয়ে যাবে তাদের পারফরম্যান্সের বীরত্বের কাছে।
আফগান বোলারদের শুরুর তাণ্ডব যখন লজ্জার হাতছানি দিচ্ছিল বাংলাদেশের সামনে তখন চট্টগ্রামের মাঠে বুক চিতিয়ে লড়ে গেলেন আফিফ-মিরাজ। শুরুতে বাংলাদেশের কোমর ভেঙে দেওয়া আফগান পেসার ফজল হকের কোমর ভেঙে দিলেন এ দুজন। রশিদ, নবী, মুজিবদের ঘূর্ণিকে বানিয়ে দিলেন একেবারে নির্বিষ। আর তাতেই বাংলাদেশ পেল ৪ উইকেটের অসাধারণ এক জয়। যে জয় দিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল টাইগাররা।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানকে শুরুতেই ধাক্কা দেন মোস্তাফিজ। ৭ রান করা রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ফেরান তামিমের ক্যাচ বানিয়ে। রহমানুল্লাহর আকাশে তুলে দেওয়া বলটি তামিম ধরে নেন দারুণ দক্ষতায়। দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহ এবং ইব্রাহিম জাদরান মিলে যোগ করেন ৪৫ রান। এ জুটি ভাঙ্গেন শরীফুল। স্লিপে ইব্রাহিম জাদরানের দারুণ এক ক্যাচ নেন ইয়াসির আলি রাব্বি। ২৩ বলে ১৯ রান করে ফিরেন এই আফগান ওপেনার। রহমত শাহ এবং হাশমত উল্লার জুটিটা ২৪ রানের। রহমত শাহকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন তাসকিন। ৬৯ বলে ৩৪ রান করেন এই ব্যাটার। এরপর চেষ্টা করেন হাশমত উল্লাহ শহিদী এবং নাজিবুল্লাহ জাদরান মিলে এগিয়ে যাওয়ার কিন্তু তাদের জুটিটা বড় হতে দেননি মাহমুদউল্লাহ। ষষ্ঠ ওভারে ইব্রাহিমের ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া মাহমুদউল্লাহ ফেরান হাশমত উল্লাহ শহিদীকে। ৪৩ বলে ২৮ রান করেন হাশমত উল্লাহ। এরপর শুরু নজিবুল্লাহ জাদরানের লড়াই। মোহাম্মদ নবীকে নিয়ে ৬৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন নাজিবুল্লাহ। তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে নবী ফিরেন ২৪ বলে ২০ রান করে। গুলবাদিন নাইবও ১৭ রানের বেশি সঙ্গ দিতে পারেননি নজিবুল্লাহকে। বলতে গেলে এরপর একাই লড়াই করে গেছেন নাজিবুল্লাহ। একপ্রান্ত আগলে রাখেন নাজিবুল্লাহ। অপর প্রান্তে বাংলাদেশের বোলারদের তোপের মুখে পড়ে একের পর এক সাজঘরে ফিলছিলেন আফগান ব্যাটাররা। দলকে ২১৪ রানে পৌঁছে দিয়ে নবম ব্যাটার হিসেবে ফিরেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। তার আগে নিজের হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করে নিয়েছেন এই ব্যাটার। ৮৪ বলে ৪টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৬৭ রান করে ফিরেন নাজিবুল্লাহ। আর এর পরপরই ৫ বল বাকি থাকতে ২১৫ রানে অল আউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের পক্ষে ৩৫ রানে ৩টি উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। ২টি করে উইকেট গেছে তাসকিন, সাকিব এবং শরীফুলের পকেটে।
২১৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে বাংলাদেশ। আফগান পেসার ফজল হক ফারুকীর গতির সামনে ধসে পড়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই প্রথম আঘাত ফজল হকের। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন লিটন দাস। দলের রান তখন ১৩। আর লিটনের ১। একই ওভারের পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউর শিকার তামিম। রিভিও নিয়ে টাইগার দলপতিকে ফেরালেন ফজল হক। নিজের তৃতীয় ওভারে আবার জোড়া আঘাত ফজল হকের। প্রথম বলেই এরবিডব্লিউর শিকার মুশফিক। রিভিও নিয়েও বাঁচতে পারলেন না। একই ওভারের শেষ বলে ইয়াসির আলির অভিষেকটাকে ম্লান করে দিলেন স্টাম্প উড়িয়ে। পরপর দুই ওভারের জোড়া আঘাতে ১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় বাংলাদেশ। সে খাদের কিনারা থেকে দলকে তুলে আনতে পারলেন না সাকিব। বিপিএলে তারই সতীর্থ মুজিবুর রহমানের বলে ফিরেন বোল্ড হয়ে। করেছেন ১০ রান। তামিম, সাকিব, মুশফিক। তিন পাণ্ডবের পথে হাটলেন মাহমুদউল্লাহও। রশিদ খানের প্রথম শিকার হয়ে ফিরলেন ৮ রান করে। ৪৫ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটলে দলে আর কি থাকে!
আফগানরা যেন তখন থেকেই জয় উৎসব করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু কে জানতো বাংলাদেশের দুই তরুণ তুর্কি তাদের সে উৎসবের প্রস্তুতিতে জল ঢেলে দেবে। ধ্বংসস্তুপ থেকে দলকে টানা শুরু করলেন আফিফ এবং মিরাজ। যেন দুজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তাদের অভিজ্ঞতার তরীতে করে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আফগান বোলারদের আর কোন সুযোগই দিলেন না। যে বলটা মারার সেটা মারলেন আর যেটা ছাড়ার সেটা ছাড়লেন। যে বলে চার মারতে সেটা চারই মারলেন। যেটা ডট দিতে হবে সেটা ডট দিলেন। দুজন যেন পন করেছিলেন বহু দুরের মঞ্জিলে পৌঁছাতে যতটুকু ধৈর্য্য ধারণ করা দরকার সেটা ধরবেন। আর সে ধৈর্য্যের ফল পেল বাংলাদেশ, পেল দারুণ এক জয়।
সপ্তম উইকেটে আফিফ মিরাজ গড়লেন ১৭৪ রানের জুটি। যা বাংলাদেশের পক্ষে সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইমরুল আর সাইফুদ্দিনের গড়া ১২৭ রান টপকে নিজেদের নিয়ে গেলেন অনেক উপরে। সে সাথে দলকে এনে দিলেন ঐতিহাসিক এক জয়। ৭ বল বাকি থাকতে চার মেরে জয়ের উৎসবে মাতে আফিফ এবং মিরাজ। সে সাথে গোটা বাংলাদেশ দল। আফিফ ১১৫ বলে ১১টি চার এবং একটি ছক্কার ৯৩ রানে আর মিরাজ ১২০ বলে ৯টি চারের সাহায্যে ৮১ রানে অপরাজিত থেকে বিজয়ী বীরের মত সাঝঘরে ফিরেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশাহ আমানত বিমানবন্দরকে উন্নত করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধদেশে ৬ সপ্তাহের সর্বনিম্ন মৃত্যু নতুন শনাক্ত ১২৯৮