আফিফ-মিরাজ বীরত্বে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৮ অপরাহ্ণ

ক্রিকেট খেলাটাই আসলে এমন। কোন পূর্বাভাস কিংবা অনুমানের ধার ধারে না। কোন ভবিষ্যদ্বানী যেন হার মানে ক্রিকেটের কাছে। ঠিক তেমনই একটি ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ। একটা সময় বাংলাদেশ যখন হারের প্রহর গুনছিল ঠিক তখনই আফিফ এবং মিরাজ নামের দুই তরুণ তুর্কি ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে বের করে আনলেন বাংলাদেশের সোনালী এক জয়।

বাংলাদেশ দলের বড় বড় নাম গুলোর সামনে আফিফ-মিরাজ অনেকটাই আলোহীন। কিন্তু তামিম, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকরা যখন দলকে অন্ধকারের চাদরে ঢেকে দিলেন তখন তাতে পূর্ণিমার আলোর জোয়ার বইয়ে দিলেন আফিফ-মিরাজ।

অনন্য, অনবধ্য, অসাধারণ, দুর্দান্ত কিংবা যত ধরনের বিশেষণই দেওয়া হোকনা কেন এই দুই তরুণের নামের পাশে তা যেন ম্লান হয়ে যাবে তাদের পারফরম্যান্সের বীরত্বের কাছে। আফগান বোলারদের শুরুর তাণ্ডব যখন লজ্জার হাতছানি দিচ্চিল বাংলাদেশের সামনে তখন চট্টগ্রামের মাঠে বুক চিতিয়ে লড়ে গেলেন আপিফ-মিরাজ।

শুরুতে বাংলাদেশের কোমর ভেঙে দেওয়া আফগান পেসার ফজল হকের কোমর ভেঙ্গে দিলেন আফিফ এবং মিরাজ। রশিদ, নবী, মুজিবদের ঘুর্নিকে বানিয়ে দিলেন একেবারে নির্বিষ। আর তাতেই বাংলাদেশ পেল ৪ উইকেটের অসাধারন এক জয়। যে জয় দিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল টাইগাররা। ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের আশা যখন দেখছিলনা কেউই, আফগানরা যখন আরো বেশি ঘাঢ়ে চেপে বসার চেষ্টা করছিলেন ঠিক তখনই দুই তরুন ফিনিক্স পাখির মত বের করে আনলেন ম্যাচটাকে। আফগান দম্ভকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে নিজেদের বীরত্বের নতুন কাহিনি রচনা করলেন আফিফ এবং মিরাজ। আর সে সাথে দলকে উপহার দিলেন অনিস্মরনীয় এক জয়।

টসে জিতে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানকে শুরুতেই ধাক্কা দেন মোস্তাফিজ। ৭ রান করা রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ফেরান তামিমের ক্যাচ বানিয়ে। রহমানুল্লাহর আকাশে তুলে দেওয়া বলটি তামিম ধরে নেন দারুন দক্ষতায়। দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহ এবং ইব্রাহিম জাদরান মিলে যোগ করেন ৪৫ রান। এজুটি ভাঙ্গেন শরীফুল।

স্লিপে ইব্রাহিম জাদরানের দারুন এক ক্যাচ নেন ইয়াসির আলি রাব্বি। ২৩ বলে ১৯ রান করে ফিরেন এই আফগান ওপেনার। রহমত শাহ এবং হাশমত উল্লার জুটিটা ২৪ রানের। রহমত শাহকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন তাসকিন। ৬৯ বলে ৩৪ রান করেন এই ব্যাটার। এরপর চেষ্টা করেন হাশমত উল্লাহ শহিদী এবং নাজিবুল্লাহ জাদরান মিলে এগিয়ে যাওয়া কিন্তু তাদের জুটিটা বড় হতে দেননি মাহমুদউল্লাহ।

ষষ্ট ওভারে ইব্রাহিমের ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া মাহমুদউল্লাহ ফেরান হাশমত উল্লাহ শহিদীকে। ৪৩ বলে ২৮ রান করেন হাশমত উল্লাহ। এরপর শুরু নজিবুল্লাহ জাদরানের লড়াই। মোহাম্মদ নবীকে নিয়ে ৬৩ রানের দারুন এক জুটি গড়েন নাজিবুল্লাহ। তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে নবী ফিরেন ২৪ বলে ২০ রান করে। গুলবাদিন নাইবও ১৭ রানের বেশি সঙ্গ দিতে পারেননি নজিবুল্লাহকে।

বলতে গেলে এরপর একাই লড়াই করে গেছেন নাজিবুল্লাহ। একপ্রান্ত আগলে রাখেন নাজিবুল্লাহ। অপর প্রান্তে বাংলাদেশের বোলারদের তোপের মুখে পড়ে একের পর এক সাজঘরে ফিলছিলেন আফগান ব্যাটাররা। দলকে ২১৪ রানে পৌছে দিয়ে নবম ব্যাটার হিসেবে ফিরেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। তার আগে নিজের হাফ সেঞ্চুরি পুরন করে নিয়েছেন এই ব্যাটার। ৮৪ বলে ৪টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে৬৭ রান করে ফিরেন নাজিবুল্লাহ। আর এর পরপরই ৫ বল বাকি থাকতে ২১৫ রানে অল আউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের পক্ষে ৩৫ রানে ৩টি উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। ২টি করে উইকেট গেছে তাসকিন, সাকিব এবং শরীফুলের পকেটে।

২১৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে বাংলাদেশ। আফগান পেসার ফজল হক ফারুকীর গতির সামনে লন্ডভন্ড বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই প্রথম আঘাত ফজল হকের। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন লিটন দাশ। দলের রান তখন অপয়া ১৩। আর লিটনের ১। একই ওভারের পঞ্চম বলে এলবিডবিøউর শিকার তামিম।

রিভিও নিয়ে টাইগার দলপতিকে ফেরালেন ফজল হক। নিজের তৃতীয় ওভারে আবার জোড়া আঘাত ফজল হকের। প্রথম বলেই এরবিডবিøউর শিকার মুশফিক। রিভিও নিয়েও বাঁচতে পারলেননা। একই ওভারের শেষ বলে ইয়াসির আলির অভিষেকটাকে ম্লান করে দিলেন স্টাম্প উড়িয়ে। পরপর দুই ওভারের জোড়া আঘাতে ১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় বাংলাদেশ। সে খাদের কিনারা থেকে দলকে তুলে আনতে পারলেননা সাকিব। বিপিএলে তারই সতীর্থ মুজিবুর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে ফিরলেন সাকিব। করেছেন ১০ রান। তামিম, সাকিব, মুশফিক। তিন পান্ডবের পথে হাটলেন মাহমুদউল্লাহও। রশিদ খানের প্রথম শিকার হয়ে ফিরলেন ৮ রান করে। ৪৫ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটলে দলে আর থাকে কি। আফগানরা যেন তখন থেকেই জয় উৎসব করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু কে জানতো বাংলাদেশের দুই তরুন তুর্কি তাদের সে উৎসবের প্রস্তুতিতে জল ঢেলে দেবে।

ধ্বংসস্তুপ থেকে দলকে টানা শুরু করলেন আফিফ এবং মিরাজ। যেন দুজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তাদের অভিজ্ঞতার তরীতে করে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আফগান বোলারদের আর কোন সুযোগই দিলেননা। যে বলটা মারার সেটা মারলেন আর যেটা ছাড়ার সেটা ছাড়লেন। যে বলে চার মারতে সেটা চারই মারলেন। যেটা ডট দিতে হবে সেটা ডট দিলেন। দুজন যেন পন করেছিলেন বহু দুরের মঞ্জিলে পৌছাতে যতটুকু ধৈর্য ধারন করা দরকার সেটা ধরবেন। আর সে ধৈর্য্যরে ফল পেল বাংলাদেশ দারুন এক জয়ে। সপ্তম উইকেটে আফিফ মিরাজ গড়লেন ১৭৪ রানের জুটি। যা বাংলাদেশের পক্ষে সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইমরুল আর সাইফুদ্দিনের গড়া ১২৭ রান টপকে নিজেদের নিয়ে গেলেন অনেক উপরে। সে সাথে দলকে এনে দিলেন ঐতিহাসিক এক জয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাষা দিবসে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নানা আয়োজন
পরবর্তী নিবন্ধপাথরঘাটা বালিকা স্কুলের সাবেক সভাপতি-প্রধান শিক্ষক কারাগারে