কবিতায় পথচলা চবি আবৃত্তি মঞ্চ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ

লোগোতে থাকা কলম, মুষ্টিবদ্ধ হাত আর মুখ নির্দেশ করছে মুক্তজ্ঞান চর্চা, অন্যায়ের প্রতিবাদ ও সত্য উচ্চারণের। লোগোটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের।
‘শাশ্বত সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান কবিতা’- এই স্লোগানকে ধারণ করে ২০০০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এই প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনটি নিয়মিত তৈরি করছে একদল শুদ্ধ মানুষ, যারা মাতৃভাষা চর্চায় নিরন্তর সাধনা করে, কবিতা ভালোবাসে, আবৃত্তি করে, পড়ে এবং মুক্তজ্ঞান চর্চা করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের বিশেষ এবং আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন হলো আবৃত্তি উৎসব। এ পর্যন্ত নয়টি জাতীয় মানের আবৃত্তি উৎসব করেছে। প্রতিটি উৎসবই হয় দুই দিনব্যাপী। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের প্রতিটি উৎসবে শিল্প-সাহিত্য জগতে গুণীজনদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, চবি আবৃত্তি মঞ্চের নবম আবৃত্তি উৎসবে একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক, বাংলা একাডেমির বর্তমান সভাপতি সেলিনা হোসেনকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সংগঠনের নিয়মিত আয়োজনের মধ্যে অন্যতম হলো ‘প্রমিত উচ্চারণ, উপস্থাপনা ও আবৃত্তি কর্মশালা’। এ কর্মশালা বাংলাদেশে চলমান সবচেয়ে বৃহৎ আবৃত্তি কর্মশালাগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিটি আবর্তনে অংশ নেন প্রায় দুইশতাধিক প্রশিক্ষণার্থী। প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে এখন পর্যন্ত ২৩টি কর্মশালা সম্পন্ন হয়েছে। এই কর্মশালায় শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই অংশ নেয়, তা নয়, চট্টগ্রামের নানা অঞ্চল থেকেই প্রশিক্ষণার্থীরা এতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে।
বছরব্যাপী আয়োজনে থাকে -একক আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, কবি ও কবিতা, পড়ুয়া, বৈঠক এবং পথ আবৃত্তি। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- ‘পলাশ ছোঁয়া শব্দবাণের খোঁজে’ একক আবৃত্তি প্রতিযোগিতা।
‘কবি ও কবিতা’র শুরুটা ২০১৭ সালে। এরপর হাঁটি হাঁটি পা পা করে সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে কবি ও কবিতার ৫২ তম পর্ব। এ অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হলো, সংগঠনের কার্যকরী সদস্যদের আবৃত্তি ও উপস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি।
উন্নত মানস গঠনে ব্যাপক পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের সব সদস্যের রয়েছে বইপড়ার অভ্যাস। সবার ব্যক্তিগত এই পঠন প্রিয়তাকে পুঁজি করে ২০১৯ সালে সংগঠনটি চালু করেছে নিয়মিত পঠন কর্মসূচি ‘পড়ুয়া’। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘জোছনা ও জননী গল্প’ বইটি পাঠের মধ্যে দিয়ে, পড়ুয়ার যাত্রা শুরু হয়। এখন চলছে এর ২৪তম পর্ব। বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৯ সালে চালু করে নিয়মিত মুক্তজ্ঞান চর্চার আসর ‘বৈঠক’।
‘পথ আবৃত্তি’, সংঠনের নতুন আয়োজনগুলোর মধ্যে একটি। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে চবি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এটি আয়োজিত হয়ে থাকে। এছাড়াও সংগঠনটি দিবস ভিত্তিক নানা আয়োজন করে থাকে। যেমন, পিঠা উৎসব, কবিতায় বৈশাখ, স্বাধীনতার পংক্তিমালা ইত্যাদি। এসকল আয়োজনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ নিয়মিত প্রকাশনা বের করে থাকে। প্রায় প্রতিটি আবৃত্তি উৎসবের ‘কালান্তক’ নামে একটি প্রকাশনা থাকে। এছাড়াও নিয়মিত বিরতিতে ‘প্রেক্ষা’ নামক পাঠ-পর্যালোচনা বিষয়ক সাময়িকী প্রকাশ করছে অনলাইনে। এটি বাংলা ভাষায় প্রথম পাঠ-পর্যালোচনা বিষয়ক সাময়িকী, যার ৫টি সংখ্যা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এভাবেই পতিত মানবতায় কবিতা আবাদের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের ২২ বছরের বর্ণিল পথচলা।
চবি আবৃত্তি মঞ্চের প্রধান উপদেষ্টা দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাছুম আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, আদর্শিক সমাজ বিনির্মাণে প্রচলিত রাজনীতি যখন ব্যর্থ হয় তখন প্রগতিশীল তরুণ সমাজ সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে। ঐতিহাসিকভাবেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রগতিশীলতা চর্চার পথ মসৃণ ছিল না, অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্যে আবৃত্তি মঞ্চের সাহসী পথচলা শুরু হয়। কবিতাকে হাতিয়ার করে এর সদস্যগণ প্রতিনিয়ত নিজের বোধ-বুদ্ধিকে শাণিত করছে, হাতেখড়ি নিচ্ছে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের। সংগঠনটি বিশুদ্ধ মাতৃভাষা চর্চার বিদ্যায়তনিক কাজটিও পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে পালন করে যাচ্ছে ২২ বছর ধরে। আশা করি এই সাহসী পথচলা অব্যাহত থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশুবান্ধব হাসপাতাল কর্মসূচি বিষয়ক কর্মশালা সম্পন্ন
পরবর্তী নিবন্ধসাংবাদিক মনছুর প্রেসিডেন্ট ও ফয়সাল সেক্রেটারী