কলকাতায় কিছু চুলকানি পোর্টাল ভালই দাপাচ্ছে। বিজ্ঞাপনের ভীড়ও প্রচুর। এরা খবরের শিরোনামও বানায় ইংরেজি/বাংলার খিচুড়ি সহযোগে। নিউজ নাই সব ‘ক্যারিকেচার। কটার নাম, ‘daily হান্ট, বাংলা hunt, pressandnews. স্কুপ hunt, viral নিউজ’ ইত্যাদি। প্রচুর পাঠক, বেশির ভাগ এ’পারের। বাংলাদেশে এদের টার্গেট আইটেম পরীমনি, হিরো আলমসহ আরো কিছু ‘কার্টুন চরিত্র’! তসলিমা নাসরীনসহ কলকাতার কিছু ভাইরাল আইটেমতো আছেই। আমাদের দেশে ‘চুলকানি’ নেই কেন অজানা। কিন্তু শূন্যস্থান খালি নেই, রাজনীতি, শিল্প -সংস্কৃতি, পেশাজীবী গোত্র এর দখল নিয়েছে।
আসলে রাজনীতির ঘাগু খেলোয়াড়রা যেমন খুশি খেলছেন। ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরীও তেমন। নির্লোভ ও চৌকস মানুষ তিনি। দেশপ্রেম, মানবপ্রেম প্রশ্নাতীত। দুঃখ, মাঝে মাঝে ভয়ঙ্কর খেই হারিয়ে ফেলেন। এটা হয়তো স্বাভাবিক। বহু বছর দুটো কিডনি ছাড়া শুধু ডায়ালাইসিসের উপর বেঁচে আছেন। প্রতিদিন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিশাল দায়িত্বসহ নানা সামাজিক দায় হাসিমুখে টেনে যাচ্ছেন। জ্বরা নেই, ক্লান্তি নেই, শ্রান্তি নেই। অবিশ্বাস্য প্রাণশক্তি! বিএনপির রাজনীতি করেন, যেমন সত্যি। তেমনি প্রয়োজনে বিএনপিকে আচ্ছামত ধোলাই দিতে দ্বিধা করেন না। বিএনপি’র বিকল্প নেতৃত্ব তারেক জিয়া তাঁর দু’চোখের বিষ। তারেক কন্যা জায়মা রহমানকে তিনি নতুন নেতৃত্বে চান, পরীক্ষিত নেতার ছায়ায়। তারেকের অনিয়ম দুর্নীতি, জঙ্গি অনুপ্রেরণা, বিলাসী জীবন নিয়ে মন্তব্য ও কথা বলেন সোজা সাপ্টা। একারণে বিএনপির তারেক ঘরানায় অবহেলিত হলেও মূল ঘরানায় সম্মানের পাত্র। বেগম জিয়াও তাঁকে ঘাটাননা। তাই তারেক অনুগত মির্জা ফখরুলও সমঝে চলেন বাধ্য হয়ে। এটা দলটির ভিতরের কোন অভ্যস্তরীণ কৌশলগত বোঝাপড়া নাকি অন্যকিছু বলা কঠিন।
যাহোক তিনি ব্যস্তই আছেন। কিন্তু ভয়ঙ্কর ঘাতক সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মি বা নেতা এবং দেলোয়ার হোসেন সাইদির গলায় ভাল মানুষ সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড ও সাজা দেয়া ভুল বলে মন্তব্য করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। বিশ্বাস, নিশ্চয়ই বিভ্রমের শিকার হয়ে এমন আবোল তাবোল বকেছেন। সপ্তাহে বেশ কবার ডায়ালাইসিস নেয়া দীর্ঘদিনের রোগী তিনি। কথাবার্তার স্বাভাবিক ছন্দ কেটে যাওয়া বা ছন্দ পতন অস্বাভাবিক নয়। তাঁর বক্তব্যে জল ঘোলা,হলেও বড় ঢেউ উঠেনি। অবশ্য ছাত্র ইউনিয়ন এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। এদিকে সবচে’ অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মাঠে বহুদিন ধরে বিএনপির শীর্ষনেতা তিনি। তারেকের যোগ্য সাইন্ডবক্সও। অথচ পরিশীলিত ও উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক মানুষ তিনি। কিন্তু পচা রাজনীতি দ্রুত ভাঁড় বানিয়ে দিয়েছে। সরকারি দলেও এমন সঙ, ভাঁড়ের অভাব নেই। এঁরা ধন, পদ,ক্ষমতার মাপে দলকে সেবা বেচে। একসময়ের সার্কাস দলের জোকারের চরিত্রগুলো তাঁরা ভালই টেনে নিচ্ছেন। কিন্তু মির্জা ফখরুলের তামাসাটা ভারী হাস্যকর। হঠাৎ কোন এক দেশের কোন এক বিশিষ্ট নাকি বেগম জিয়াকে ‘ মাদার অব ডেমেক্রেসি’ উপাধি দিয়েছিলেন। তাও ২০১৮ সালে। এতদিন ম্যাডাম জেল ও বাসায় আটক থাকায় ক্রেস্টে ধুলো জমে যায়। মির্জা সাহেব প্রেস কনফারেন্স করে ধুলো ঝেড়েমুছে দেন। পরে পৌঁছান ম্যাডামের বাসায়। রাজনীতির এসব কমিক নিশ্চয়ই কলকাতার চুলকানি পণ্যের চেয়ে কম মুচমুচে না!
আমরা আছি রাজনীতির কমিক নিয়ে। এই ফাঁকে খাদ্যপণ্য ও নিত্যপণ্যের অবিশ্বাস্য উর্ধগতিতে জনজীবন প্রায় স্থবির। প্রতিবাদের জোরালো ভাষাও নেই ভুক্তভোগীর। থাকলেও খুবই ক্ষিণ। এটা জাতির সুস্থতার লক্ষ্মণ নয়, মনে রাখা উচিত। দ্রুততম সময়ে ন্যায্যমূল্যে ঘরে ঘরে নিত্য পণ্য পৌঁছার উদ্যোগ নেয়া এখন সময়ের প্রথম দাবী। বাগাড়ম্বরের কোনই সুযোগ নেই, সবার আগে মানুষের জীবন।
দেশের রাজনীতির মত বিশ্ব রাজনীতিও উত্তপ্ত। গত বছর তালেবানের কাবুল কব্জার পর থেকে উত্তাপ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনের আধিপত্যের স্নায়ুযুদ্ধ বেশ ভালই জমেছে। চীন প্রবল ক্ষমতার মহড়া দিতে মঞ্চ সাজাচ্ছে। পেয়ে গেছে নড়বড়ে পাকিস্তান, আফগানিস্তান। যদিও প্রচুর বিনিয়োগ ঢালতে হচ্ছে, কিন্তু মুখ খুলছে মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলের সুবর্ণ খনির। পাকিস্তানের ইমরান খান চীনের হয়ে সব সেবার আয়োজন করে দিচ্ছে। চীনকে রাশিয়া, ইরানও পিঠ চুলকে দিচ্ছে। কারণ চীন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সবচে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা বড় বিনিয়োগ ছাড়াই লাভ আনবে রাশিয়া ইরানের। দু’ দেশই চীনের মত তালেবানকে টুকটাক সেবা দিচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, বিতাড়িত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন আর মধ্যপ্রাচ্যর পুরান ঘাঁটিতে ঢুকতে না পারে। “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ” নিয়ে চীন আছে, এক দৌড়ে ইউরোপ সীমান্ত ফুঁড়ে ফেলার তালে। আর রাশিয়া এরমাঝে সিরিয়া, লিবিয়া, বাগদাদে মোটামুটি শক্ত ঘাঁটি গেঁড়ে বসেছে। সৌদি আরবেই এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় উপস্থিতি। মধ্যপ্রাচ্যের পেট্টো রাজনীতি ও অস্ত্র ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র। বাগদাদ, কাবুলসহ মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটি ছাড়ার পর অস্ত্র বিক্রিও মার খাচ্ছে। স্টকহোম ভিত্তিক “ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে”র হিসাবমতে গত বছর মধ্যপ্রাচ্যে সবচে বেশি ৪৭% অস্ত্র রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্র। একই সময় বিশ্বের মোট ৩৭% অস্ত্র রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ন্যাটোসহ ইউরোপের বহু দেশ মার্কিন অস্ত্রের ভোক্তা। ন্যাটো এখন মার্কিন অস্ত্র নির্ভরতা কমাতে চায়। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধাবস্থায়ও এর প্রভাব রয়েছে। জার্মানী, ফ্রান্সসহ আরো কিছু দেশ ইউক্রেন নিয়ে যুদ্ধ চায়না। কারণ এতে লাভ যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসার, ন্যাটোর নয়। ইউক্রেন নিজেও রাশিয়ার সাথে সহবস্থান চায়। কারণ দুদেশ একই সংস্কৃতির অংশ।
ইউক্রেনে আছে ৩০% এর বেশি রুশ। নিরাপত্তার নামে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সাথে জুড়ে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনকে টোপ গিলতে হয়েছে রুশ ভীতির কারণে। এখন ওদের দু’কূলই বৈরি। রাশিয়া পরিস্কার বলে দিয়েছে, কিয়েভকে ন্যাটোর প্রস্তাব থেকে সরে আসার ঘোষণা দিতেই হবে। না হলে যুদ্ধ অনিবার্য। নিজের ঘরের কাছে কোন দুশমনকে আশ্রয় দেবেনা মস্কো। ইউক্রেন ইতিউতি করলেও নিমরাজি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ভীতি আর উস্কানী ছড়াচ্ছে তীব্র। প্রথমে ন্যাটোসহ রুশ হামলা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে এখন কূটনীতিকসহ নিজের সব নাগরিককে কিয়েভ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। বার বার সতর্ক করছে, যে কোন সময় আকাশ পথে হামলা করবে রাশিয়া। বা কয়েকটি সেক্টরে একযোগে। বাস্তবে গত কদিন তেমন আলামত নেই। ইউক্রেন রাশিয়ার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটি শক্তিশালী প্রতিবেশির সাথে শান্তি চায়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্য ও অস্ত্র বিক্রি ভাটা পড়ায় বাইডেন প্রশাসন কিয়েভকে বলির পাঁঠা বানাতে চায়। সুখবর হচ্ছে, জার্মানী ফ্রান্সসহ ন্যাটোর বড়দেশগুলোও যুদ্ধ এড়াতে তৎপর। ওরা মার্কিন সমর বাজারের কব্জায় থাকতে চায় না। লেখক : সাংবাদিক, সাহিত্যিক।