শেষ হয়ে গেল ‘পথ’

সন্ধ্যাও চলে গেলেন

| মঙ্গলবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ১০:৫৫ অপরাহ্ণ

উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের জুটির অনেক রোমান্টিক গানের নেপথ্যে ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ গানটিও। কিন্তু জীবন চলার পথ শেষ হয়ে গেল বাংলা গানের কিংবদন্তী সেই সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের।

বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার(১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ভারতের কোলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৯০ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত ২৬ জানুয়ারি রাতে জ্বর নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সন্ধ্যা। পরে তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

হাসপাতালে ভর্তির একদিন আগেই ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী খেতাব প্রত্যাখ্যান করে আলোচনায় এসেছিলেন কিংবদন্তি এ সঙ্গীতশিল্পী।
তার মৃত্যুর খবরে বাংলাদেশেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কোলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছে, গত ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। পরদিন তাকে গ্রিন করিডোর করে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শৌচাগারে পড়ে গিয়ে আঘাত পান তিনি। এর পর বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছিল শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও। তার দু’টি ফুসফুসেই সংক্রমণ দেখা দেয় বলে হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে জানায় আনন্দবাজার। সন্ধ্যার হৃদযন্ত্রে সমস্যার কথাও জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

তারপর মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে তার চিকিৎসা চলছিল। আর আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখান থেকে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

১৯৩১ সালে জন্মগ্রহণকারী প্রবাদপ্রতীম এ শিল্পী ভারতের বাংলা চলচ্চিত্রে অনেক জনপ্রিয় গান গেয়েছেন যেগুলোতে ঠোঁট মিলিয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন।

পর্দায় উত্তম-সুচিত্রা জুটির যেসব রোমান্টিক গানের নেপথ্যে ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘এ শুধু গানের দিন’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘এই মধুরাত’, ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’, ‘কে তুমি আমারে ডাক’, ‘মায়াবতী মেঘে এল যে তন্দ্রা’ এর মতো গান।

বাংলা সংগীত জগতের স্বর্ণযুগের প্রায় সব সুরকারের সুরে গান গেয়েছেন সন্ধ্যা।

শচীন দেব বর্মন, অনুপম ঘটক, রবীন চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীর মতো দিকপালদের সুরে গলা দিয়েছেন। আবার নতুন প্রজন্মের সংগীতকার কবীর সুমনের কথা ও সুরে গেয়েছেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উদ্বাস্তুদের জন্য অর্থ সংগ্রহে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি উপলক্ষে তিনি গেয়েছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ গানটি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় পল্টন ময়দানে একটি উন্মুক্ত কনসার্টে গাইতে এসেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

১২ বছর বয়সে কোলকাতা আকাশবাণীর ‘গল্পদাদুর আসর’-এ প্রথম গেয়েছিলেন গীতিকার অজয় ভট্টাচার্যের লেখা একটি গান।

১৩ বছর ১০ মাস বয়সে প্রথম বেসিক রেকর্ড করেন গিরিন চক্রবর্তীর কথা ও সুরে এইচএমভি থেকে প্রকাশিত রেকর্ডে।

এর এক পিঠে ছিল ‘তুমি ফিরায়ে দিয়ে যারে’, উল্টো পিঠে ‘তোমারো আকাশে ঝিলমিল করে চাঁদের আলো।’

এর বছর দুয়েক পরে কিংবদন্তি সুরকার রাইচাঁদ বড়ালের সুরে ‘অঞ্জনগড়’ ছবিতে এবং রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘সমাপিকা’ সিনেমায় গান রেকর্ড করেন।

গান শিখেছেন যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়, ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি, চিন্ময় লাহিড়ী, এ কানন, ডিটি যোগী, গণপত রাও, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, এবং সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর কাছে।

চলে যাওয়ার কয়েক দিন আগে পাওয়া জাতীয় পুরস্কার পদ্মশ্রী প্রত্যাখান করেন তিনি।

পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দিলেও আগে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা। পেয়েছেন গীতশ্রী আর বঙ্গবিভূষণ সম্মান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুনিয়া হত্যা মামলা : শারুনের সাবেক স্ত্রী মিম গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের পাঁচ ব্যবসায়ীকে পাঁচ মাসের সাজা