তুলনামূলক কম খরচ হওয়ায় ডেলিভারিসহ অন্যান্য সেবা নিতে আসা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল লোকজনের কাছে ‘ভরসাস্থল’ হিসেবে পরিচিতি আছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালিত মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের। তবে এ ভরসার ভিত এবার নড়ে যাচ্ছে। কারণ হাসপাতালটির বিভিন্ন সেবার বিপরীতে ফি বাড়াচ্ছে চসিক। বর্ধিত এ ফি কার্যকর হলে নরমাল ডেলিভারিসহ কয়েকটি সেবার বিপরীতে বিদ্যমানের চেয়েও দ্বিগুণ টাকা পরিশোধ করতে হবে রোগী ও তাদের স্বজনকে। দৈনিক আজাদীর অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেকটা গোপনে সেবার বিপরীতে ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক। ইতোমধ্যে বর্ধিত ফি এর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিকের স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থা স্থায়ী কমিটির সভায় প্রস্তাবিত ফি (বর্ধিত) কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় বিষয়টির অনুমোদন দেয়া হয়। তবে অনুমোদনের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়নি। শীঘ্রই বর্ধিত ফি কার্যকরে মেমন হাসপাতাল ইনচার্জ বরাবর মেয়র দপ্তর থেকে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হয়ে চিঠি পাঠানোর কথা রয়েছে।
ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি স্বীকার করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গত ২৭ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীকে বলেন, মেমন মাতৃসদন হাসপাতালটি এখন অত্যাধুনিক হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি যারা এ হাসপাতালে গেছেন তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার কারণে আমরা কিছু ফিও বাড়াব। তবে সেটা অতিরিক্ত হবে না। আমি নিজেও বেশি বাড়ানোর পক্ষপাতি নই। সংস্কার করার পর হাসপাতালটির কেবিনগুলো উন্নত করা হয়েছে। বেসরকারি ক্লিনিকে গেলে এ ধরনের কেবিনে যে ফি নিবে তার চেয়েও অনেক কম রাখব আমরা।
নরমাল ডেলিভারিতে গুণতে হবে দ্বিগুণ ফি : মেমন মাতৃসদন হাসপাতালটি স্বল্প খরচে প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসার জন্য খ্যাত। চসিকের আরো তিনটি মাতৃসদন থেকেও এ হাসপাতালে সেবা নেয়া প্রসূতি মায়ের সংখ্যা বেশি। অথচ প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসা ফি বেশি বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে নরমাল ডেলিভারি ফি এক হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ‘ভেন্টাস ডেলিভারি’ ফি দেড় হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা এবং ‘ফরসেপ ডেলিভারি’ ফি এক হাজার ৮০০ টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিজারের ক্ষেত্রে সার্জন ফি তিন হাজার ৭৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে চার হাজার ২৫০ টাকা করা হচ্ছে।
বর্ধিত ফি এর চূড়ান্ত হওয়া তালিকা অনুযায়ী তিন ধরনের ডেলিভারিসহ ৯৭ খাতে ফি বাড়বে। এর মধ্যে রোগ নির্ণয়ে ৮১ ধরনের পরীক্ষার ফিও অর্ন্তভুক্ত। এছাড়া বিভিন্ন সেবার বিপরীতে ১৬ খাতে ফি বাড়বে। যেমন ‘এবডমিনাল হিস্টেরেকটমি’র ক্ষেত্রে সার্জনের অ্যাসিসটেন্ট (দ্বিতীয়) ফি এক হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা এবং ওটি চার্জ এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা করা হয়েছে। রোগী ও তার স্বজন কোনো ‘কেবিন’ নিলে তার ফিও বেশি গুণতে হবে। এক্ষেত্রে ডাবল কেবিনের জন্য ৪৫০ টাকা, ভিআইপি কেবিনের জন্য ৮০০ টাকা এবং সুপার ডিলাঙ এসি কেবিনের জন্য আগের চেয়ে এক হাজার ৩০০ টাকা বেশি দিতে হবে।
বর্ধিত ফি কার্যকর হলে আউটডোর সেবার ফিও বেশি গুণতে হবে রোগী ও স্বজনকে। এক্ষেত্রে সকল শিশুর চিকিৎসা ফি বিদ্যমান ৪৫ টাকার পরিবর্তে দিতে হবে ১০০ টাকা। অবশ্য ইনকিউবেটরসহ কয়েকটি খাতে ফি কমানোও হচ্ছে। নতুন নির্ধারিত ফি অনুযায়ী ইনকিউবেটর ফি (দৈনিক) ৭৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ৭০০ টাকা নেয়া হবে।
জানা গেছে, বর্ধিত ফি এর তালিকা চূড়ান্ত করার আগে তিনটি হাসপাতালের ফি যাচাই-বাছাই করেছে চসিকের স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থা স্থায়ী কমিটি। হাসপাতালগুলো হচ্ছে – মা ও শিশু হাসপাতাল, জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল এবং বন্দর হাসপাতাল।
বর্ধিত ফি কার্যকর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. শাহীন পারভীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, এখনো নতুন ফি এর তালিকা পাইনি। তাই এখনো কার্যকর করিনি।
উল্লেখ্য, চসিকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়েছেন ২৬ হাজার ৫০৬ জন। এর আগে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৪ হাজার ৭৯২ জন। ওই অর্থবছরে এক হাজার ৩০৮টি সিজারিয়ান এবং এক হাজার ৫২৭ টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। একই সময়ে আউটডোরে সেবা নেয় ৩১ হাজার ৯৫৭ জন।












