করোনা মহামারী মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজ পোশাক শিল্পকে সেই কঠিন সময়ে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে বলে জানিয়েছেন পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান।
গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর খুলশীতে বিজিএমএ’র আঞ্চলিক কার্যালয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
তিনি আরো বলেন, করোনা মহামারীতে আমাদের পোশাক শিল্প এক প্রচণ্ড বাস্তবতার সম্মুখীন হয়। বিজিএমইএ এর জরিপ মতে, ১ হাজার ১৪৫টি কারখানার প্রায় ৩১৮ কোটি ডলার মূল্যের ক্রয়াদেশ (অর্ডার) বাতিল হয়। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতারা রপ্তানিকৃত পণ্যের দাম দেয়নি। অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারপরও বিজিএমইএ’র বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও সরকারের নীতি সহায়তায় শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমরা প্রতিটি ক্রেতার সাথে আলাদাভাবে আলোচনা করেছি। তাদেরকে আস্থার সম্পর্কে ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছি। সেই সাথে বিজিএমইএ’র নেতৃত্বে যে হেলথ প্রোটোকল তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে তার সুফল হিসেবে আমরা শ্রমিকদের নিরাপদ রাখতে পেরেছি। এর সুফল হিসেবে ক্রেতারা আজ আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারছেন, আমাদের রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। গত ২০২১ সালে মার্কিন বাজারে আমাদের রপ্তানি তার আগের ২০২০ এর তুলনায় ৪৩ দশমিক ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে একই সময়ে ইইউ বাজারে প্রবৃদ্ধি ছিল ২৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২১ সালের ৪র্থ ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৭৫ দশমিক ৭১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ড করে। অন্যদিকে উদ্যোক্তারা নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি ও সবুজ শিল্পায়নে বিপুল বিনিয়োগ করলেও
ক্রেতারা সে অনুযায়ী মূল্য দিচ্ছেন না।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে আমাদের পোশাকের গড় দরপতন হয়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তবে চলতি সময়ে আগের তুলনায় মূল্য কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মালিকরা এর সুফল পাচ্ছেন না। বিপরীতে কারখানার উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে অনেক। এছাড়া অনেক পোশাক কারখানা এখনো করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। গত এক বছরে সুতার দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে। কন্টেনার পরিবহন খরচ ৩৫০ থেকে ৫০০ শতাংশ বড়েছে। এছাড়া ডাইস কেমিক্যালের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০ শতাংশ। গত ৫ বছরে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম যথাক্রমে ৫৯ শতাংশ ও ১৩ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় শিল্পে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সরকারের নীতি সহায়তা জরুরি। বিশেষ করে করোনা মোকাবেলায় প্রদত্ত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বিদ্যমান ১৮ মাস থেকে বাড়িয়ে ৩৬ মাস করা হলে তা শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে আমরা মনে করি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিইটিও) ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের শেয়ার মাত্র ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। এ বাজারে নিজের শেয়ার আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে বাংলাদেশের। এ সুযোগ গ্রহণের জন্য ও শিল্পের প্রবৃদ্ধি টেকসই করার জন্য পণ্য, ফাইবার এবং বাজার বৈচিত্রকরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
ফারুক হাসান বলেন, পোশাক রপ্তানিকারকদের বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকা এবং নতুন সুযোগ গ্রহণের জন্য ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলো বিশেষ করে শুল্ক ও বন্ড সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীকরণ জরুরি। বন্ড লাইসেন্সে এইচএস কোডের সাথে নতুন কাঁচামাল ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট উপকরণগুলো অন্তর্ভূক্তকরণের মতো প্রক্রিয়াগুলো সহজীকরণও প্রয়োজন। আমরা মনে করি, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও ব্যবসার সক্ষমতা বিকাশের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে বাজারের চাহিদা এবং সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নীতি ও পদ্ধতি উভয়ই সংশোধন ও হালনাগাদ (আপডেট) করা জরুরি।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মঈন উদ্দিন মিন্টু, বর্তমান সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, সাবেক সহ-সভাপতি এএম চৌধুরী সেলিম, বর্তমান পরিচালক এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ প্রমুখ।












